বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী স্টুডেন্ট ভিসায় (স্টাডি পারমিট) কানাডায় আসেন এবং অনেক শিক্ষার্থী আসার জন্য চিন্তা করেন। কানাডার বিভিন্ন কলেজ/ ইউনিভার্সিটি আন্তর্জাতিক স্টুডেন্টদের জন্য আকর্ষণীয় স্কলারশিপ অফার করে থাকেন।
নর্থ আমেরিকার একটি শীত প্রধান দেশ হচ্ছে কানাডা, এই দেশের আয়তন ৯.৯৮ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার আর জনসংখ্যা প্রায় ৩,৭৯,৭১,০২০ জন। এই দেশের অফিসিয়াল ভাষা ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজী এবং মুদ্রা কানাডিয়ান ডলার। কানাডার জিডিপি $১.৮১২ ট্রিলিয়ন আর পার কাপিটা জিডিপি হল ৪৯,৯৩১ ডলার, রাজধানী অটোয়া আর সর্ববৃহৎ শহর টরেন্টো।
বর্তমানে উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় দেশ হচ্ছে কানাডা। আবার অনেক শিক্ষার্থী খরচের কথা আগে থেকে মাথায় না রেখে কানাডায় পড়তে আসার কথা চিন্তা করেন। যার ফলে মাঝপথে বেশ কিছু টাকা খরচ করে পরে টাকা জোগাড় করতে না পেরে আসা হয়ে উঠেনা ।
চাকরি বা পড়াশোনার জন্য এবং উন্নত জীবনযাপনের দিক দিয়ে কানাডা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় দেশ। শুধু আমাদের দেশ থেকে নয়, পৃথিবীর প্রায় অনেক দেশের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে কানাডা প্রথম দিকের চয়েজ লিস্টে থাকে। কানাডার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পড়াশোনার মান বিশ্বমানের। দেশটির কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বিশ্বের অন্যান্য প্রথম সারির দেশগুলোর সঙ্গে তুলনীয়। অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি এবং লিভিং কস্ট অন্যান্য দেশের তুলনায় কানাডায় কম হয় এবং স্কলারশিপ এর ব্যবস্থা থাকে।
আইইএলটিএস
কানাডায় আসতে হলে অবশ্যই ইংরেজি দক্ষতার সনদ থাকা লাগবে,ইংরেজি দক্ষতা যাচাই এর অন্যতম গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো আইইএলটিএস। যাঁরা ইংলিশে খুবই দক্ষ, তাঁদের জন্য আইইএলটিএস এ ভালো স্কোর করা সহজ। একটি ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আইইএলটিএস স্কোর ৬ থেকে ৭.৫ পর্যন্ত প্রয়োজন হয়।
কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে অফার লেটারের আবেদন
আইইএলটিএসে একটি ভালো স্কোর (৬-৭.৫ এর মধ্যে) করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে উল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী অফার লেটার এর জন্য আবেদন করতে হবে। সর্বনিম্ন চার থেকে পাঁচটি পছন্দসই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা ভালো। আপনার পছন্দের বিষয়ে চার থেকে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেক্ট করুন এতে করে অফার লেটার পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন ফি ১০০ থেকে ১৫০ কানাডিয়ান ডলার।
ভিসার জন্য আবেদন
স্টাডি পার্মিটের জন্য সর্বপ্রথম সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন কানাডার (CIC) ওয়েবসাইটে অনলাইনে আবেদন করতে হবে অথবা, কানাডিয়ান এম্বাসিতে যোগাযোগ করে অফলাইনে আবেদন করা যাবে।
আবেদনের জন্য যা যা সংযুক্ত করতে হবে :
- কানাডার সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার।
- কানাডায় থাকাকালীন লিভিং কস্ট ও পড়ার খরচ বহন করার মতো পর্যাপ্ত আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে তার প্রমাণপত্র।
- কোনো প্রকার সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত নেই তার প্রমাণপত্র (পুলিশ ক্লিয়ারেন্স)।
- শারিরীক সুস্থতার প্রমাণপত্র হিসেবে মেডিকেল রিপোর্ট।
- কানাডায় থাকাকালীন কোনো প্রকার সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত হবেন না, তার অঙ্গীকারনামা।
কানাডায় মুতল স্টাডি পারমিট দেয়া হয়, যেটাকে স্টুডেন্ট ভিসা বলা হয়। স্টুডেন্ট ভিসা নামে কোনো ভিসা দেওয়া হয় না। স্টাডি পারমিট এর মেয়াদকাল মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোর্সের মেয়াদের উপর নির্ভর করে। কোর্সের মেয়াদ যদি চার বছর হয় তাহলে আপনার স্টাডি পারমিটের মেয়াদও চার বছর হবে, কোর্সের মেয়াদ এর সাথে সাথে অতিরিক্ত ৯০ দিন দেয়া হবে। এইস্টাডি পারমিট দিয়ে কানাডায় স্থায়ী ভাবে বসবাস করা যাবেনা। কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য এবং ভ্রমণ এর জন্য টেম্পোরারি রেসিডেন্ট ভিসা অথবা ইলেকট্রনিক ট্র্যাভেল অথোরাইজেশন (ইটিএ) ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
কানাডায় থাকাকালীন খরচ চালানোর জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে তার প্রমাণপত্র হিসেবে যা যা যুক্ত করতে হবে :
- কানাডার একটি ব্যাংকে আপনার নিজের নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ব্যাংক ড্রাফট, এক বছরের লিভিং কস্ট ও পড়ার খরচ পরিশোধ হয়েছে, তার প্রমাণপত্র।
- যে ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান আপনার খরচ বহন করবে, সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদানকৃত চিঠি।
- যদি কোন স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন তার প্রমানপত্র।
স্টাডি পারমিটের আবেদন করার ৩০ দিনের মধ্যে চিঠি অথবা ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে যে, আপনার বায়োমেট্রিক ইনফরমেশনের দরকার পড়বে কিনা। যদি দরকার পড়ে, তবে আপনার নিকটস্থ ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার থেকে বায়োমেট্রিক ইনফরমেশন অর্থাৎ ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি পাঠাতে হবে।
পরবর্তীতে আবেদন ফর্ম যাচাইবাছাই করে দেখা হবে যদি অসম্পূর্ণ তথ্য কিংবা কোন অতিরিক্ত ডকুমেন্ট এর প্রয়োজন হয় তবে তা আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে। বিশেষ কোনো প্রয়োজনে ইমিগ্রেশন অফিস থেকে আপনাকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হতে পারে।
স্টাডি পারমিট পাওয়ার পর টেম্পোরারি রেসিডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এই ভিসার জন্য আবেদন করতে যা যা লাগবে-
- সঠিক ভাবে পূরণকৃত আবেদন পত্র।
- ভর্তিকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া অফার লেটারের মূল কপি।
- ৪ টি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- কোর্সের মেয়াদের চেয়ে একমাস বেশি মেয়াদের পাসপোর্ট।
- অন্যান্য ডকুমেন্টস -যেমন: জন্মনিবন্ধন, জাতীয়তা পরিচয়পত্র ইত্যাদি।
- সব ধরনের একাডেমিক সার্টিফিকেট।
- আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমানপত্র।
- স্পন্সরের প্রমানপত্রসহ বিস্তারিত তথ্য।
- স্টাডি পারমিট ফি পরিশোধের প্রমাণপত্র।
- ভিসা এনরোলমেন্টের ই-কনফার্মেশনের স্ক্যান কপি।
সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র :
- পাসপোর্ট
- জাতীয় পরিচয়পত্র এবং অনলাইন জন্মসনদ।
- সমস্ত একাডেমিক কাগজপত্র (ট্রান্সক্রিপ্ট + সার্টিফিকেট)।
- ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সনদ (IELTS, Duoilingo, TOEFL ইত্যাদি)
- কাভার লেটার।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং সচ্ছলতা ।
- সম্পদের মূল্যায়ন এবং সম্পত্তির নথি।
- শিক্ষার্থীদের ফোন নম্বর দ্বারা ইমেল।
- সিভি।
- রেফারেন্স লেটার।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
- মেডিকেল সার্টিফিকেট।
- ডিজিটাল ছবি।
- পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমের সনদ।
- স্টেট্মেন অফ পারপাস ।
- ট্রেড লাইসেন্স।
- TIN সার্টিফিকেট।
- ট্যাক্স রিটার্ন।
- ভিজিটিং কার্ড।
- পিতামাতার ছবি (পুরানো এবং নতুন)।
- পিতামাতার পাসপোর্ট বা এনআইডি।
কানাডায় ভর্তির সেশন ও বিভিন্ন ডিগ্রি
কানাডাতে আপনি স্নাতক, স্নাতকোত্তর, ডিপ্লোমা এবং পিএইচডি ডিগ্রি করার জন্য আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী আবেদন করতে পারবেন। কানাডার বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই সেপ্টেম্বর থেকে মে পর্যন্ত সেশন থাকে। আবার কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল ও জুনেও সেশন শুরু করে থাকে।
কানাডিয়ান এম্বাসির ঠিকানা : United Nations Road, Baridhara, Dhaka, 1212 Bangladesh
শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। রবিবার থেকে বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪.৩০ এবং বৃহস্পতিবার ৮.০০ থেকে ১.৩০ পর্যন্ত কার্যক্রম চলমান থাকে।
মোবাইল নাম্বার: 02-55668444,
ওয়েবসাইটের ঠিকানা: https://www.international.gc.ca/country-pays/bangladesh/dhaka-dacca.aspx?lang=eng