বিশ্বজুড়ে বহুল জনপ্রিয় কোমল পানীয় কোকাকোলা প্রতিদিন কোটি মানুষের পছন্দের তালিকায় থাকলেও, এর বিপরীতে মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে সতর্ক করলেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক লুইস আলবের্তো জামোরার নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক বোতল বা ক্যানজাত কোকাকোলা একজন মানুষের আয়ু থেকে প্রায় ১২ মিনিট কমিয়ে দেয়।
গবেষণায় উঠে এসেছে, কেবল কোকাকোলাই নয়, বরং ফাস্টফুড এবং অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার নিয়মিত খাওয়ার ফলে মানুষের আয়ু উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি হটডগ খেলে আয়ু কমে ৩৬ মিনিট, আর এর সঙ্গে কোকাকোলা যোগ হলে আরও ১২ মিনিট কমে। চিজবার্গার বা বেকন খেলে প্রতিটি প্রায় ৯ মিনিট আয়ু কমায়।
বিশ্ববিখ্যাত ফাস্টফুড চেইনগুলোর খাবার, যেমন ম্যাকডোনাল্ডসের বার্গার, পিৎজা, হটডগ—এসব খাবার প্রক্রিয়াজাত ও অতিপ্রক্রিয়াজাত উপাদান দিয়ে তৈরি। এসব খাবারে থাকা উচ্চমাত্রার চিনি, লবণ, এবং অতিরিক্ত ক্যালরি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যা আয়ুষ্কাল হ্রাসের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
আয়ু বাড়ানোর খাবারের তালিকা
অধ্যাপক জামোরার গবেষণায় আয়ু বাড়াতে সহায়ক কিছু খাবারের তালিকাও উঠে এসেছে। ফলমূল, শাকসবজি, পিনাট বাটার এবং ঘরে তৈরি জ্যাম-জেলি স্যান্ডউইচ এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ১০ শতাংশ মাংসের পরিবর্তে শাকসবজি ও ফলমূল যোগ করেন তাহলে তারা গড়ে ৪৮ মিনিট আয়ু বাড়াতে পারেন।
গবেষক দলের সদস্য ড. অলিভার জোলিয়েট জানান, যুক্তরাষ্ট্রে মাংসের অধিকাংশই প্রক্রিয়াজাত হওয়ায় এটি দেশটির মানুষের আয়ু হ্রাসের অন্যতম বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের গবেষণাটি সীমিত হলেও এতে একটি শক্তিশালী বার্তা রয়েছে— সুস্থ থাকতে এবং দীর্ঘায়ু পেতে হলে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন অপরিহার্য।”
এই গবেষণা খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে এবং প্রমাণ করেছে যে, দীর্ঘমেয়াদি সুস্বাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই সুস্থ জীবনযাপনের জন্য প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করে, পুষ্টিকর খাবারের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
সূত্র: দ্য হিন্দুস্তান টাইমস