তসলিমা নাসরিনের নাম যেন বিতর্কের সঙ্গে জড়িত একটি পরিচিত অধ্যায়। বাম সরকারের সময় পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর এবার রাজ্যের বর্তমান তৃণমূল সরকার নিষিদ্ধ করল তাঁর লেখা ‘লজ্জা’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি নাটক। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) তসলিমা নিজেই বিষয়টি ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন।
তসলিমা নাসরিন ফেসবুকে লেখেন, “মমতা ব্যানার্জি আজ পশ্চিমবঙ্গে ‘লজ্জা’ নাটকটি নিষিদ্ধ করেছেন। গোবরডাঙ্গা ও হুগলির পাণ্ডুয়ার নাট্যউৎসবে এটি মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল। দুই মাস ধরে এই নাটকের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই আজ মমতার পুলিশ এসে জানিয়ে দিল, সব নাটক মঞ্চস্থ হবে, শুধু ‘লজ্জা’ বাদে।”
তিনি আরও লেখেন, “পুলিশ বলেছে, ‘লজ্জা’ নাটক হলে মুসলিমরা দাঙ্গা বাঁধাতে পারে। এই একই অজুহাতে আগে ‘দুঃসহবাস’ নামে আমার একটি মেগাসিরিয়াল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, যা আকাশ ৮ চ্যানেলে প্রচার হওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে লেখা ‘লজ্জা’ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা কেন ক্ষুব্ধ হবে, তা আমার বোধগম্য নয়। মুসলিমদের দাঙ্গা বাঁধানোর অজুহাতে আমাকে একসময় পশ্চিমবঙ্গ থেকেও বের করে দেওয়া হয়েছিল।”
তসলিমা নাসরিন আরও কড়া ভাষায় লেখেন, “যারা দাঙ্গা বাঁধাতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে কেন শিল্প ও সাহিত্য নিষিদ্ধ করা হয়? কেন সাহিত্যিক ও শিল্পীদের কণ্ঠরোধ করা হয়? এই প্রশ্ন আর কতদিন আমাকে একাই করতে হবে? অন্যায়ের প্রতিবাদ করা কি কারও দায়িত্ব নয়?”
সরকারের পক্ষ থেকে মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই নাটক মঞ্চস্থ হলে পশ্চিমবঙ্গে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সেই কারণেই সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
এ নিয়ে মমতা সরকারের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের প্রতিক্রিয়া ছিল আরও বিস্ফোরক। তিনি বলেন, “ধুর! ও আবার মানুষ নাকি। ধরি না ওকে।”
তসলিমার এই বক্তব্য ও নাটক নিষিদ্ধের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ বলছেন, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, আবার কেউ মনে করছেন, রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত।
তবে ‘লজ্জা’ নাটক নিষিদ্ধের বিষয়টি শিল্প-সাহিত্য ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। এই ঘটনার পর তসলিমা নাসরিন আবারও আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন।