মাইক্রোসফটের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান শীর্ষে। সমীক্ষায় উঠে এসেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যম পর্যন্ত ভুয়া তথ্য ও অপপ্রচারের প্রকোপে ভারতে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
গবেষণার ফলাফল
একটি গবেষণায় দেখা যায়, ভারতে প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ অনলাইনে ভুয়া খবরের মুখোমুখি হয়েছেন যেখানে বৈশ্বিক গড় ৫৭ শতাংশ।
এছাড়া অর্ধেকেরও বেশি ভারতীয় জানিয়েছেন তারা ইন্টারনেট প্রতারণার শিকার হয়েছেন, যা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া ৪২ শতাংশ ভারতীয় জানিয়েছেন তারা ফিশিং বা স্পুফিংয়ের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন।
সমীক্ষায় পরিবার ও বন্ধুদের মাধ্যমেও ভুয়া তথ্য ও অনলাইন ঝুঁকির দ্রুত বিস্তার লক্ষ্য করা গেছে। ২০১৮ সালের তুলনায় এই হার ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৯ শতাংশে পৌঁছেছে।
গবেষণার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভারতে ভুয়া খবর এবং অন্যান্য অনলাইন ঝুঁকির মাত্রা আগামী দিনগুলোতে আরও বাড়তে পারে।
ডব্লিউইএফ এর রিপোর্ট
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ২০২৪ গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্টে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যকে ভারতের জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশটি ২০২৪ সালের ৩৪টি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও ভুয়া তথ্যের ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যাপকভাবে বিভ্রান্তিকর বার্তা প্রচারের জন্য ব্যবহৃত হয়।
স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় প্রথমবারের ভোটারদের ৮৮ শতাংশই ভুয়া খবরকে বড় সমস্যা হিসেবে দেখেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
ভারতের প্রায় ৩০ কোটি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ তথ্য বিনিময় করেন। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের প্রেরিত বার্তা যাচাই না করে শেয়ার করার প্রবণতা ভুয়া তথ্য ছড়ানোর মূল কারণগুলোর একটি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়েও ভারতের সংবাদমাধ্যমে নানা যাচাইবিহীন ও ভুয়া খবর প্রকাশিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি দুর্ঘটনাকে হামলা বলে প্রচার করা হয়েছে, যা পরে পুলিশ খণ্ডন করেছে।
এছাড়া, বাংলাদেশে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ হয়েছে বলে যে খবর প্রচারিত হয়েছিল, সেটিও ফ্যাক্ট-চেকিংয়ে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
বিজনেস ইনসাইডারের রিপোর্ট
বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভুয়া তথ্য নিয়ন্ত্রণে ভারত সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও সেগুলো কার্যকর হচ্ছে না। বরং ভুয়া খবরের বিস্তার অব্যাহত রয়েছে, যা একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
ভারতের মতো একটি বিশাল দেশে তথ্য যাচাই এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ সমস্যা মোকাবিলা করা জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ ইতিবাচক অবস্থানে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষ স্থানে রয়েছে ভারত। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত Statista-এর এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে ভারতের পর তালিকায় রয়েছে-
- ব্রাজিল,
- ফিলিপাইন,
- মেক্সিকো,
- রাশিয়া,
- যুক্তরাষ্ট্র,
- ইন্দোনেশিয়া,
- নাইজেরিয়া, দ
- ক্ষিণ আফ্রিকা এবং
- তুরস্ক।
গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়া একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ এই তালিকায় ইতিবাচক অবস্থান ধরে রেখেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তি নির্ভরতার কারণে মিথ্যা তথ্যের বিস্তার আরও বাড়ছে, বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তারা এ সমস্যা মোকাবিলায় প্রযুক্তি ব্যবহারের সঠিক নীতিমালা ও গণসচেতনতার ওপর জোর দিয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী মিথ্যা তথ্য প্রতিরোধে সঠিক তথ্য যাচাইয়ের গুরুত্ব দিন দিন আরও বেড়ে চলেছে। Statista-এর এই গবেষণা বিভিন্ন দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের আচরণ এবং এর প্রভাব বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে।