গবেষণাগারে তৈরি বিশেষ এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া নিয়ে বিজ্ঞানীরা বড় ধরনের সতর্কবার্তা দিয়েছেন। ‘মিরর ব্যাকটেরিয়া’ নামে পরিচিত এই ব্যাকটেরিয়া হলো এক ধরনের কৃত্রিম জীব যা প্রাকৃতিক জীবের অণুগুলোর অনুরূপ বা প্রতিলিপি করে তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কোনোভাবে এই ব্যাকটেরিয়া গবেষণাগারের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে, তবে তা গাছপালা, প্রাণী ও মানুষের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করতে পারে।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই ব্যাকটেরিয়া জীবের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাইপাস করে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এর কারণে জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এবং বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে মারাত্মক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকবে। সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, মিরর ব্যাকটেরিয়া তৈরির প্রযুক্তি ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে, যদিও এটি পুরোপুরি তৈরি হতে এক দশক সময় লাগতে পারে।
কৃত্রিম এই জীবের ঝুঁকি নিয়ে ৩৮ জন নোবেল বিজয়ী এবং বিশেষজ্ঞরা গবেষণা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নোবেল বিজয়ী জীববিজ্ঞানী গ্রেগরি উইন্টার বলেন, “মিরর ব্যাকটেরিয়ার মতো কৃত্রিম প্রাণীরা নিজেদের প্রতিরূপকে ভিন্ন প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করবে না। ফলে আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য কোনো প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে না।”
পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ভন কুপার বলেছেন, “এ ধরনের কৃত্রিম জীব কখনো প্রকৃতিতে বিদ্যমান ছিল না বা বিবর্তিত হয়নি। এটি জৈবিক মিথস্ক্রিয়া সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে। আমরা কৃত্রিম জীববিজ্ঞানের গবেষণাকে সীমিত করতে চাই না, তবে এমন ঝুঁকি সৃষ্টি করাও ঠিক নয়।”
পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের জন্য ঝুঁকি
বিজ্ঞানীদের মতে, মিরর ব্যাকটেরিয়ার বিকাশ জীবজগতের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে তুলতে পারে। যেমন, মানুষ মিরর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম না হলে ব্যাপক ভাবে সংক্রমণের মুখোমুখি হতে পারে। এটি শুধমাত্র মানুষ নয়, উদ্ভিদ ও প্রাণীদের জন্যও ভয়াবহ সংক্রমণ ঘটাবে এবং বাস্তুতন্ত্রে আক্রমণাত্মক প্রজাতি হিসেবে কাজ করবে।
মিরর ব্যাকটেরিয়া তৈরির প্রযুক্তি বিজ্ঞানীদের কৃত্রিম জীবন তৈরির সক্ষমতাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। তবে এর বিপরীতে জীবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য এর গবেষণা সীমাবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃত্রিম জীববিজ্ঞান মানবজীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, তবে এই প্রযুক্তির অপব্যবহার হলে তা মানবজাতি ও পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের জন্য চূড়ান্ত বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
সূত্র: ডেইলি মেইল