যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলের ঘটনায় তদন্তকারীরা এর কারণ নিয়ে গভীর বিশ্লেষণে মনোযোগী হয়েছেন। এখন পর্যন্ত এই দাবানলে কমপক্ষে ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ধ্বংস হয়ে গেছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
প্যাসিফিক প্যালিসেইডসের পাহাড়ি এলাকায় শুরু হওয়া এই দাবানলে জেমি লি কার্টিস ও বিলি ক্রিস্টালের মতো হলিউড তারকাদের বাড়িও পুড়ে গেছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, প্যাসিফিক প্যালিসেইডসের পিয়েডরা মোরাডা ড্রাইভ এলাকায় একটি বাড়ির পেছন থেকে এই দাবানলের সূত্রপাত ঘটে।
ন্যাশনাল ফায়ার প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে বজ্রপাত অন্যতম। তবে লস অ্যাঞ্জেলেসের এই দাবানলের ক্ষেত্রে বজ্রপাতের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্যালিসেইডস এলাকায় এবং ইটনের দাবানলকবলিত অঞ্চলেও বজ্রপাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তদন্তকারীদের মতে, দাবানলের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে আরও দুটি বিষয় প্রাসঙ্গিক। একটি হলো ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগানো এবং অন্যটি বৈদ্যুতিক লাইন থেকে স্ফুলিঙ্গ। তবে এই দাবানলে এখন পর্যন্ত অগ্নিসংযোগ বা বৈদ্যুতিক লাইনের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
অগ্নি বিশ্লেষক জন লেন্টিনি, যিনি ১৯৯১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ড হিলসের দাবানলসহ বহু বড় দাবানলের তদন্তে যুক্ত ছিলেন, জানিয়েছেন যে দাবানলের আকার যত বড়ই হোক, এর উৎস খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া একই রকম। লেন্টিনি বলেন, “তদন্তকারীরা মূলত দাবানলের শুরু কোথা থেকে হয়েছে, সেই উৎস এবং আশপাশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেই এর প্রকৃত কারণ নির্ধারণে মনোযোগ দেন।”
ক্যালিফোর্নিয়া পাবলিক ইউটিলিটিজ কমিশনের (সিপিইউসি) যোগাযোগ পরিচালক টেরি প্রসপার জানিয়েছেন, যদি বৈদ্যুতিক কারণে দাবানল সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা থাকে, তবে কর্তৃপক্ষকে তা সিপিইউসিকে জানাতে হয়। এরপর কমিশনের কর্মীরা বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখেন, অঙ্গরাজ্যের কোনো আইন লঙ্ঘিত হয়েছে কিনা।
তদন্তকারীরা এখনও দাবানলের প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করতে পারেননি। তবে এই ঘটনায় যথাযথ তদন্ত প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ এই দাবানল কেবল মানুষের জীবন নয়, প্রকৃতির ওপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে অন্যতম বড় দাবানলের ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময় সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া এডিসন পাওয়ার কোম্পানির বৈদ্যুতিক লাইনের স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল শুরু হয় বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন। প্রচণ্ড বাতাসের সঙ্গে বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ মিশে দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই ভয়াবহ ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছিল এবং ৪৪০ বর্গমাইলেরও বেশি এলাকা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।
সম্প্রতি সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া এডিসন কর্তৃপক্ষ পাসাডেনার কাছাকাছি ইটন এলাকায় দাবানল সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন ক্যালিফোর্নিয়া পাবলিক ইউটিলিটিজ কমিশনে (সিপিইউসি) জমা দিয়েছে। এডিসন দাবি করেছে, তাদের সরঞ্জাম এবং দাবানলের সূত্রপাতের মধ্যে কোনো প্রত্যক্ষ যোগসূত্র পাওয়া যায়নি। তবে বিমা কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রমাণ সংরক্ষণের নির্দেশ পাওয়ার পর সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
দাবানলের কারণ হিসেবে বজ্রপাত, অগ্নিসংযোগ, বৈদ্যুতিক লাইনের ত্রুটি ছাড়াও অনেক সময় আবর্জনা পোড়ানো কিংবা আতশবাজি ফুটানোকে দায়ী করা হয়। তদুপরি, দুর্ঘটনাবশত নানা উৎস থেকেই দাবানল ছড়াতে পারে।
বিবিসি জানিয়েছে, ২০২০ সালে একটি অনুষ্ঠানে বিশেষ ধরনের ধোঁয়াবহুল আতশবাজি পোড়ানোর ফলে ক্যালিফোর্নিয়ায় আরেকটি বড় দাবানল সৃষ্টি হয়েছিল। এতে প্রায় ৩৬ বর্গমাইল এলাকা পুড়ে যায় এবং ২০টিরও বেশি স্থাপনা ধ্বংস হয়। সেই ঘটনায় একজন অগ্নিনির্বাপণকর্মী প্রাণ হারান।
বর্তমানে ইটন এবং প্যালিসেইডস এলাকার দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। যদিও বাতাসের গতি কিছুটা কমেছে, তবুও বৃষ্টির অভাবে পরিস্থিতি এখনো শঙ্কাজনক। শুকনো ভূমি দাবানলকে আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করছে।
অগ্নি বিশেষজ্ঞ লেন্টিনি মনে করেন, কেবলমাত্র আবহাওয়ার পরিবর্তনই এই ভয়াবহ দাবানল থামাতে পারে।