শবেবরাত রোজা ও ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা

শবে বরাত, রোজা ও ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইব্রাহিম আল জারওয়ান।মুসলিমদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদুল ফিতর।সেই কাঙ্খিত ঈদুল ফিতরের দিনটি কবে হতে যাচ্ছে সেটি জানার আগ্রহ সবার মধ্যে থাকে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পরে আসে সেই কাঙ্খিত ঈদুল ফিতরের দিনটি। আজকে আমরা শবে বরাত, রোজা এবং ঈদের সম্ভাব্য তারিখ কবে হতে পারে সেটি জানবো।

রোজা (রমজান) শুরুর সম্ভাব্য তারিখ

আমিরাত জ্যোতির্বিদ্যা সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী আল জারওয়ান বলেছেন, আগামী ১ মার্চ থেকে রমজান মাস শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ আর মাত্র সাত সপ্তাহ পর শুরু হবে মুসলিমদের জন্য বিশেষ ইবাদতের মাস।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রমজান মাসের শুরুর তারিখ নির্ধারণে চাঁদ দেখার প্রথা অনুসরণ করা হয়। কেউ কেউ খালি চোখে চাঁদ দেখেন, আবার আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে সঠিক তারিখ নির্ধারণ করেন। কিছু দেশ অবশ্য ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আগে থেকেই দিনক্ষণ নির্ধারণ করে রাখে।

রমজান মাস আরবি ক্যালেন্ডারের নবম মাস, যা মুসলিমদের জন্য বিশেষভাবে পবিত্র। এই মাসে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থেকে রোজা পালন করেন মুসলিমরা। পাশাপাশি নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত এবং দান-সদকার মাধ্যমে দিনগুলো অতিবাহিত করেন।

ঈদুল ফিতর ২০২৫ এর তারিখ

বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা পবিত্র রমজান মাস শেষে শাওয়াল মাসের প্রথম দিনে ঈদুল ফিতর উদযাপন করে থাকেন। তবে প্রতি বছরই দেখা যায়, সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে একদিন আগে ঈদ উদযাপন করে থাকে। এর মূল কারণ হলো চাঁদ দেখার পদ্ধতি ও ভৌগোলিক অবস্থানের পার্থক্য।

পবিত্র হাদিসে বলা হয়েছে, “চাঁদ দেখে রোযা শুরু করো এবং চাঁদ দেখে রোযা শেষ করো।” অর্থাৎ, ইসলাম ধর্মে রমজান ও ঈদের সঠিক সময় নির্ধারণের জন্য চাঁদ দেখার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যদিও সৌদি আরবসহ কিছু দেশে আধুনিক টেলিস্কোপ ও প্রযুক্তির সহায়তায় চাঁদ দেখা হয়, তবুও শরিয়তের দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য এবং বাস্তব পর্যবেক্ষণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এটি ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বজায় রাখতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

সৌদি আরব সাধারণত আধুনিক প্রযুক্তি ও বিশেষ যন্ত্রপাতির সাহায্যে চাঁদ দেখার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এবং ঈদের তারিখ নির্ধারণ করে থাকে। তাদের বিশেষজ্ঞ দল টেলিস্কোপ এবং উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সঠিকভাবে চাঁদ দেখার বিষয়টি নিশ্চিত করে। অপরদিকে, বাংলাদেশে চাঁদ দেখার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খালি চোখে আকাশ পর্যবেক্ষণ করা হয় বা কখনও টেলিস্কোপের সাহায্য নেওয়া হয়। স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখা নিশ্চিত হওয়ার পরেই ঈদুল ফিতর উদযাপনের দিন ঘোষণা করা হয়।

জ্যোতির্বিদদের হিসাব অনুযায়ী, এবার রমজান মাস ২৯ দিনে শেষ হলে মধ্যপ্রাচ্যে ঈদুল ফিতর পালিত হবে ৩০ মার্চ। আর যদি রমজান মাস ৩০ দিনের হয়, তবে ঈদ উদযাপন হবে ৩১ মার্চ।

বাংলাদেশে ২৯ রোজা হলে ঈদ হবে ৩১ মার্চ এবং ৩০ রোজা হলে ঈদুল ফিতর পালিত হবে ০১ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে।

শব-ই-বরাত

শব-ই-বরাত এর সম্ভাব্য তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি রোজ শনিবার।

যদিও, চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে এই তারিখগুলো পরিবর্তিত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

ঈদুল আজহা ২০২৫ এর তারিখ

মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। ২০২৫ সালের (১৪৪৬ হিজরির ১০ জিলহজ) এই উৎসব বাংলাদেশে ৭ জুন, শনিবার পালিত হবে। চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করেই ঈদের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশে ঈদুল আজহার তারিখ ঘোষণা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে ঈদুল আজহা পালিত হবে ৬ জুন। কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌরজগত সংক্রান্ত গবেষণা কেন্দ্র এবং আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, জিলহজ মাসের চাঁদ ২৭ মে, ২০২৫ তারিখে দেখা গেছে। অতএব, ২৮ মে থেকে জিলহজ মাস শুরু হয়েছে এবং ৬ জুন ঈদুল আজহা পালিত হবে। ৫ জুন আরাফাত দিবস হবে।

আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যাকেন্দ্রের (আইএসি) বরাতে টাইম অ্যান্ড ডেট ডটকম এবং রোয়া নিউজের প্রতেবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবে ২০২৫ সালের ঈদুল আজহা ৬ জুন শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে।

ইসলামে ইবাদত ও আনন্দ উদযাপনের দিকনির্দেশনা

ইসলাম মানুষের স্বাভাবিক চাহিদা ও আচরণকে অবজ্ঞা করেনি, বরং সেগুলোকে সঠিক পথে পরিচালিত করার নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পরকালীন জীবনের শান্তি ও স্থায়ী সুখের জন্য ইবাদতের বিধান নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, বছরে এক মাস রমজানে রোজা রাখা, সামর্থ্যবানদের জন্য হজ পালন, এবং জাকাত আদায়ের বাধ্যবাধকতা।

ইবাদতের প্রতি মানুষকে উৎসাহী করে তুলতে ইসলাম বিশেষ বিশেষ দিনে ইবাদতের ফজিলত বর্ণনা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, শবে কদর, শবে বরাত এবং আশুরার দিনের মতো বিশেষ দিনে নফল ইবাদতের ফজিলত নিয়ে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। এই দিনগুলোতে ইবাদত করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায় বলে মুসলিমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তা পালন করেন।

আরও পড়ুন: সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৫ | Sehri Iftar Time 2025

ইসলামে ইবাদতের পাশাপাশি আনন্দ-উৎসব উদযাপনের দিকেও বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। ইসলামের নির্দেশিত পথে উদযাপনের জন্য নির্ধারিত রয়েছে বছরে দুটি ঈদ—ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা। ঈদ শুধু আনন্দ উদযাপনের দিন নয়, বরং এটি সামাজিক সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উপলক্ষ।

হাদিস

এ বিষয়ে একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর দেখলেন, মদিনার লোকেরা বছরে দুইটি নির্দিষ্ট দিনে উৎসব পালন করে। এই উৎসবে তারা গান-বাজনা এবং ঢোল-তবলা বাজিয়ে আনন্দ করত। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, এই দুই দিনে তোমরা কী উপলক্ষে উৎসব করো?

তারা উত্তর দিল, জাহেলিয়াতের যুগে এই দুটি দিন আমরা খেলাধুলা এবং আনন্দ-ফুর্তি করে কাটাতাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন

রোজা ও ঈদের হাদিস
আবু দাউদ, হাদিস ১১৩৪

‘আল্লাহ তায়ালা এই দুই দিনের পরিবর্তে তোমাদের জন্য এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন নির্ধারণ করেছেন—একটি হলো ঈদুল ফিতর এবং অন্যটি ঈদুল আজহা।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১১৩৪)।

ইসলামিক দৃষ্টিকোণে, আনন্দ উদযাপন এবং ইবাদত একে অপরের পরিপূরক। ঈদ যেমন ইবাদতের ফলস্বরূপ আনন্দের দিন, তেমনি এটি সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোরও একটি সুযোগ। ইসলামের এই ভারসাম্যপূর্ণ বিধান মুসলিমদের জীবনে ইবাদত ও আনন্দের এক অনন্য সমন্বয় সৃষ্টি করে।

ঈদের দিনের সুন্নত সমুহ

চাঁদের তারিখ নির্ধারণে জ্যোতির্বিজ্ঞান

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে চাঁদের তারিখ পূর্বাভাস দেওয়া আর কেবল চাঁদ দেখার অপেক্ষায় সীমাবদ্ধ নয়। আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যা ও উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এখন নির্ভুলভাবে চাঁদের উদয় ও হিজরি মাসের সূচনা ,ঈদ ও রোজার তারিখ আগেই নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চাঁদের অবস্থান নির্ণয়ে কয়েকটি বৈজ্ঞানিক ধাপ অনুসরণ করা হয়। প্রথমত, চন্দ্র পর্যায় বা ‘লুনার ফেজ’ বিশ্লেষণ করা হয়। চাঁদ কখন ‘নিউ মুন’ বা নবচন্দ্র অবস্থায় পৌঁছাবে — তা আগে থেকেই সময় নির্দিষ্ট করে ফেলা যায়। নবচন্দ্রই মূলত হিজরি মাসের সূচনার ইঙ্গিত বহন করে।

পরবর্তী ধাপে সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক বিশ্লেষণ করা হয়। কোন সময় চাঁদ সূর্যের তুলনায় কতটা ওপরে থাকবে, তা নির্ধারণের মাধ্যমে বোঝা যায় চাঁদ মানুষের চোখে দৃশ্যমান হবে কিনা।

চাঁদের উচ্চতা ও কোণ নির্ণয়ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সূর্যাস্তের সময় চাঁদের উচ্চতা যদি ৫ ডিগ্রি বা তার বেশি হয় এবং সূর্যের অস্ত যাওয়ার পরও চাঁদ আকাশে টিকে থাকে, তবে সেই রাতে চাঁদ দেখা সম্ভব হয় বলে গবেষকরা জানান।

চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে আবহাওয়া এবং স্থানীয় ভৌগোলিক বৈচিত্র্যকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, দূষণ অথবা দিগন্তরেখার বাধা চাঁদ দেখায় প্রভাব ফেলতে পারে, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাসে অন্তর্ভুক্ত করেন।

সবশেষে, এই পুরো বিশ্লেষণ আরও নিখুঁত করতে MoonCalc, Stellarium, SkySafari-এর মতো আধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে নির্দিষ্ট তারিখে চাঁদের অবস্থান এবং দৃশ্যমানতার নির্ভুল হিসাব করা সম্ভব হয়।

ফলে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্মিলিত প্রয়োগে এখন চাঁদ দেখা এবং হিজরি তারিখ নির্ধারণ একটি পূর্বপরিকল্পিত ও নির্ভরযোগ্য প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে।

2 thoughts on “শবেবরাত রোজা ও ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা”

  1. ধন্যবাদ সুখবর দেওয়ার জন্য আপ্নাদের………জাযাকাল্লাহ

    Reply

Leave a Comment