স্পনসরশিপ ভিসা সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে কানাডা। এতে সেখানে স্থায়ী হওয়া বাসিন্দারা বাবা-মা, দাদা-দাদী কিংবা নানা-নানিকে নিয়ে যেতে আর আবেদন করতে পারবেন না। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে পহেলা জানুয়ারি থেকে।তবে ২০২৪ সালে যারা পিজিপির জন্য আবেদন করেছিল নতুন বছরে শুধু সেসব আবেদন পত্র নিয়ে কাজ চলছে ।
আগের আবেদনের ভিত্তিতে পিজিপি প্রোগ্রামে এ বছর সাড়ে ২৪ হাজার মানুষকে কানাডায় স্থায়ীকরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দেশটির অভিবাসন উদ্বাস্তু ও নাগরিকত্ব বিষয়ক বিভাগ । অভিবাসী সংখ্যা কমাতেই ২০২৫ সালে বিশ শতাংশ পিআর সুবিধা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
তবে কেউ চাইলে সুপার ভিসার আওতায় নিকট আত্মীয়দের নিয়ে যাওয়ার সুবিধা থাকছে । সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কানাডায় থাকার সুবিধা মিলবে। হঠাৎ করে স্পনসরসিপ ভিসা বন্ধ করার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, একটি দীর্ঘ সময় ধরে কানাডায় পপুলেশন গ্রোথ নিয়ে একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে ।
ভিসা বন্ধের রাজনৈতিক কারন
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির প্রতি প্রায় প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল থেকে এবং নানান মহল থেকে অভিযোগ উঠেছিল কানাডায় এত বেশি লোক চলে এসেছে যে কানাডার ইকোনমি সেটাকে অবজার্ব করতে পারছে না। বিশেষ করে শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রবল চাপ তৈরি হয়েছে । এর ফলে সরকারের উপর একটা চাপ তৈরি হয়েছিল পপুলেশন টাকে যেন কন্ট্রোল করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এর আগে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের উপর নতুন কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছিল।
প্রতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনে কানাডার ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সুযোগ দেয়া হয় যারা তাদের বাবা মা, দাদা দাদী, নানা-নানি , এদেরকে স্পন্সর করে কানাডায় আনতে চাচ্ছে তাদের আগ্রহ সেই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হয়।
যে আগ্রহ গুলো ওয়েবসাইটে জমা পড়ে সেগুলো থেকে রেনডম বেসিসে পরবর্তীতে ইনভাইটেশন পাঠানো হয় স্পনসরসীপ এপ্লিকেশন সাবমিট করার জন্য। ২০২০ সালের পরে এই সুযোগটি আর দেওয়া হয়নি কারণ, ২০২০ সাল পর্যন্ত এত বেশি আবেদন জমা পড়েছে যে সেখান থেকে বাছাই করে করে ইনভাইটেশন পাঠানো হচ্ছে।
কানাডায় বহু বছর ধরে স্থায়ী বাসিন্দারা বাবা-মা ও দাদা-দাদিকে স্পনসর করে স্থায়ী বসবাসের (পিআর) অনুমতি নিতে পারতেন। তবে এই বহুল জনপ্রিয় সুযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। কানাডার অভিবাসনমন্ত্রী মার্ক মিলারের নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, বিদ্যমান আবেদনের ব্যাকলগ সমাধানের লক্ষ্যে নতুন আবেদন গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছে।
কানাডার অভিবাসন, শরণার্থী ও নাগরিকত্ব বিভাগ (আইআরসিসি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চলতি বছরে বাবা-মা ও দাদা-দাদির জন্য স্থায়ী বসবাসের স্পনসরশিপের আওতায় নতুন আবেদন গ্রহণ করা হবে না। ২০২৪ সালে জমা দেওয়া আবেদনগুলো প্রক্রিয়াকরণ চলবে, তবে নতুন কোনও আবেদন নেওয়া হবে না।
এই সিদ্ধান্তের ফলে কানাডার অনেক অভিবাসী পরিবার, বিশেষত বাংলাদেশি পরিবারেরাও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। অতীতে পিজিপি কর্মসূচির আওতায় স্থায়ী বাসিন্দারা তাদের বাবা-মা এবং দাদা-দাদিকে স্থায়ীভাবে কানাডায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেতেন।
পিজিপি কর্মসূচির পরিবর্তে পরিবারগুলোকে সুপার ভিসা কর্মসূচি বিবেচনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই ভিসার মাধ্যমে বাবা-মা এবং দাদা-দাদি কানাডায় টানা পাঁচ বছর পর্যন্ত থাকার অনুমতি পাবেন। এটি পিজিপি’র তুলনায় স্থায়ী সমাধান না হলেও আপাতত এটিই একমাত্র বিকল্প।
কানাডা ঐতিহাসিকভাবে অভিবাসীবান্ধব দেশ হিসেবে পরিচিত। তবে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর প্রশাসন অভিবাসনের ওপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি কানাডার আবাসন ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।
কানাডা গেজেটের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলতি বছরে পিআর কোটা কমিয়ে ৩ লাখ ৯৫ হাজার করা হয়েছে, যা ২০২৬ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার এবং ২০২৭ সালে ৩ লাখ ৬৫ হাজারে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
২০২৫ সালে শুধুমাত্র পারিবারিক স্পনসরশিপের জন্য ৯৪ হাজার ৫০০টি ভিসা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ হাজার ভিসা পিআর-ধারীদের স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
কানাডার কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ১২ লাখেরও বেশি অস্থায়ী বাসিন্দা দেশটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারেন। এই নীতি কানাডার অভিবাসন ব্যবস্থাকে আরও কঠোর করার পাশাপাশি নতুন অভিবাসীদের জন্য সীমিত সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সুপার ভিসা
একসাথে এত বেশি আবেদন জমা পড়ার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে দ্রুত সময়ের মধ্যে যাতে করে বাবা-মা, দাদা-দদি, নানা-নানি কে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কানাডাতে এনে রাখা যায় এ জন্য সুপার ভিসা চালু করেছিল। এই ভিসার মেয়াদ প্রথমে দুই বছর ছিল, পরবর্তীতে পাঁচ বছর করা হয়েছে । পাঁচ বছর থাকার পর আরও দুই বছর ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা যায়।
সুতরাং সুপার ভিসার সাহায্যে টানা সাত বছর কানাডাতে থাকা যাবে। সাত বছর পর তাকে কানাডা থেকে চলে যেতে হবে, এবং পরবর্তীতে আবার সুপার ভিসার সাহায্যে এসে পাঁচ বছর অথবা সাত বছর টানা থাকতে পারবে। সুপার ভিসার আবেদনের দুই মাসের ভিতর ভিসা দেওয়ার কথা থাকলেও সময় মত সেটা সম্ভব হচ্ছে না। অপেক্ষা করতে হচ্ছে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত।