২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে ১০ জুলাই। ফল প্রকাশের পরই শুরু হচ্ছে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম। যদিও অনলাইনে আবেদন গ্রহণের নির্দিষ্ট সময়সূচি এখনো ঘোষণা করা হয়নি, তবে ধারণা করা যাচ্ছে, খুব দ্রুতই তা শুরু হবে। আজ আমরা জানবো রাজধানী ঢাকার মধ্যে একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে ঢাকার সেরা ২০ কলেজ ও আসন সংখ্যা। এই সময়টায় এসে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠে উপযুক্ত কলেজ নির্বাচন। কোথায় আবেদন করলে ভর্তির সম্ভাবনা বেশি থাকবে? আবার কোন কোন কলেজ রয়েছে মানসম্মত শিক্ষা, ভালো ফলাফল ও সুন্দর পরিবেশের তালিকায় শীর্ষে?
শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মতে, উচ্চমাধ্যমিকের এই দুই বছর কেবল একাডেমিক ভবিষ্যতের ভিত গড়ার সময় নয়, বরং একজন শিক্ষার্থীর চিন্তাভাবনা, স্বপ্ন ও পেশাগত দিকনির্দেশনার গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সহজ করতে আমরা তুলে ধরেছি রাজধানী ঢাকার শীর্ষ ও পরিচিত ২০টি কলেজের নাম, যেগুলো একাডেমিক সাফল্য, শিক্ষার মান, সহপাঠ কার্যক্রম এবং সাম্প্রতিক র্যাংকিংয়ের ভিত্তিতে এগিয়ে রয়েছে।
নটর ডেম কলেজ
দেশের অন্যতম শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নটর ডেম কলেজ, সংক্ষেপে এনডিসি নামে পরিচিত। এটি একটি ক্যাথলিক উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা ঢাকায় অবস্থিত। হলি ক্রস মণ্ডলীর পুরোহিতদের দ্বারা পরিচালিত এ কলেজ থেকে ২০২৪ সালে ৩,২৬৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩,২৬৩ জন। পাশের হার ৯৯.৯৪ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২,৬১৮ জন। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২,০৪০ জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩৭৬ জন এবং মানবিক বিভাগে ২০২ জন।
হলি ক্রস কলেজ
ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত হলি ক্রস কলেজ একটি খ্যাতনামা ক্যাথলিক উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান, যা পবিত্র ক্রুশ সংঘের সন্ন্যাসিনীদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। এখানে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করা হয়। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ১,৩১৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১,৩০৭ জন পাস করেন। পাসের হার ৯৯.৯৫ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ অর্জন করেন ১,০১৯ জন শিক্ষার্থী।
ঢাকা কলেজ
ঢাকা কলেজ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থিত। উপমহাদেশের শিক্ষার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা এ কলেজ বহুদিন ধরে উচ্চশিক্ষার আলোকবর্তিকা হিসেবে বিবেচিত। এখানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করা হয়। পাশাপাশি, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) স্তরের শিক্ষাও পরিচালিত হয়। গত ২০২৪ সালে এ কলেজ থেকে ১,০৫০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১,০৪৮ জন পাস করেন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ অর্জন করেন ৯৬৬ জন। পাসের হার ৯৯.৮১ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭৯১ জন, মানবিকে ৭৫ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ১০০ জন।
সরকারি বিজ্ঞান কলেজ
ফার্মগেট এলাকায় অবস্থিত সরকারি বিজ্ঞান কলেজ দেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ও পরিচিত সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘ইন্টারমেডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজ’ নামে। বর্তমানে এ কলেজে শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পাঠদান করা হয়। পাশাপাশি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রমও পরিচালিত হয়।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঢাকার বেইলি রোডে অবস্থিত একটি স্বনামধন্য মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি দেশের অন্যতম শীর্ষ স্কুল ও কলেজ হিসেবে পরিচিত। প্রধান শাখা বেইলি রোড ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির ধানমন্ডি, আজিমপুর ও বসুন্ধরা আবাসিকে আরও তিনটি শাখা রয়েছে। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ছিল ৯৯.০৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১,৭৩৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ১,৪৬৩ জন, মানবিকে ১৫১ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ১২৩ জন জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন।
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত একটি আধুনিক ও সহ-শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান, যেখানে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। এটি দেশের শীর্ষস্থানীয় কলেজগুলোর একটি, যা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করে। ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ১,৬৭৬ জন অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে ১,৬৭৩ জন পাস করেছেন। পাসের হার ছিল ৯৯.৯৪ শতাংশ। এর মধ্যে ১,৪৯৭ জন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ অর্জন করেন।
সেইন্ট জোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়
সেইন্ট জোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় খ্রিষ্টান মিশনারি সংগঠন হলিক্রস সন্ন্যাস সংঘের যাজকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি ১৯৫৪ সালে ‘সেইন্ট জোসেফ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল’ নামে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠাটি আমেরিকান খ্রিষ্টান যাজকদের উদ্যোগে গঠিত হয় এবং শুরুতে নারিন্দায় অবস্থিত থাকলেও ১৯৬৫ সালে আসাদ এভিনিউতে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে পাঠদান করা হয়।
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও শীর্ষস্থানীয় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি ঢাকার সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত। কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত। উচ্চ মাধ্যমিকের পাশাপাশি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষাও এখানে দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২,৪১১ জন শিক্ষার্থী, যার সবাই পাস করেছে। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২,২২৬ জন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ৯২ শতাংশ।
বিএএফ শাহীন কলেজ, ঢাকা
বিএএফ শাহীন কলেজ ঢাকা, যা সাধারণভাবে ‘ঢাকা শাহীন কলেজ’ নামে পরিচিত, জাহাঙ্গীর গেট, ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধানে চলে।
আরও পড়ুন: ঢাকার সেরা ১০ সরকারি কলেজ । Top 10 Gov. College in Dhaka
যদিও এটি মূলত বিমান বাহিনীর সদস্যদের সন্তানদের জন্য প্রতিষ্ঠিত, সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এখানে সমান সুযোগ পেয়ে থাকে। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ২,২৫৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ২,২৩৩ জন। পাসের হার ৯৯.২০ শতাংশ। এর মধ্যে ১,১২৬ জন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ (বিএনএমপিসি), পূর্বতন রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে অবস্থিত একটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান। যদিও এটি মূলত বিজিবি সদস্যদের সন্তানদের জন্য প্রতিষ্ঠিত, বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এখানে ভর্তি হতে পারেন। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় মোট ২,০৮২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে, যাদের মধ্যে ২,০৭৬ জন উত্তীর্ণ হন। পাসের হার ছিল ৯৯.৭৬ শতাংশ। এর মধ্যে ১,৪৩৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পান।
ঢাকা সিটি কলেজ
ঢাকা সিটি কলেজ ঢাকার ধানমন্ডির কুদরত-ই-খুদা সড়কে অবস্থিত একটি খ্যাতিমান বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে এইচএসসি থেকে শুরু করে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এবং দীর্ঘদিন ধরে মানসম্পন্ন শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও মেধার বিকাশে অবদান রেখে চলেছে। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ৩,৪৬০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ৩,৪৪৫ জন। পাসের হার ৯৯.৫৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১,৭৯৭ জন শিক্ষার্থী। অকৃতকার্য হন ১৫ জন।
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ
পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদর দপ্তরে অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, পূর্বে যা বাংলাদেশ রাইফেলস স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে পরিচিত ছিল, দেশের একটি সুপরিচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মূলত বিজিবি সদস্যদের সন্তানদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও, বর্তমানে সকল শিক্ষার্থীদের জন্য এটি উন্মুক্ত। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় ১,৯৫৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১,৯৪২ জন উত্তীর্ণ হন। পাশের হার ৯৯.২৩ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১,০২৮ জন শিক্ষার্থী।
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ
ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ একটি স্বায়ত্তশাসিত এবং খ্যাতনামা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সকাল ও দিবা—দুই শিফটে পাঠদানের ব্যবস্থা রয়েছে। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ৯৬১ জন অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৬৮ জন এ-প্লাস পান। এ-প্লাস পাওয়ার হার ছিল ৯০.৩২ শতাংশ এবং সবাই পাস করেন।
সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ
ডেমরায় অবস্থিত সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, যা ‘সামসুল হক খান কলেজ’ নামেও পরিচিত, একটি সুপরিচিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২০১৪ সালে এখানে ইংরেজি মাধ্যম শাখা চালু করা হয়। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করে প্রতিষ্ঠানটি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১,১২৩ জন শিক্ষার্থীর সবাই উত্তীর্ণ হন। এর মধ্যে ৮১২ জন এ-প্লাস পেয়েছেন। বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগে ৬৮৮, ব্যবসা শিক্ষায় ৬৭ এবং মানবিকে ৫৭ জন শিক্ষার্থী এ-প্লাস অর্জন করেন।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
মতিঝিলের বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ দেশের অন্যতম শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। এই কলেজ থেকে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ১,৬০৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন, যার মধ্যে ১,৫৭৪ জন পাস করেন। পাশের হার ৯৮.৭৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ অর্জন করেন ৭৮০ জন, যা মোট পাসকৃত শিক্ষার্থীর ৪৯.৫৫ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে ৯৫৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেন ৯৩৩ জন, যার মধ্যে ৬৫৯ জন জিপিএ-৫ পান (৭০.৬৩ শতাংশ)। মানবিক বিভাগে ২৭৩ জনের মধ্যে পাস করেন ২৬৯ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৪ জন। ব্যবসা শিক্ষায় ৩৭৭ জনের মধ্যে ৮৭ জন জিপিএ-৫ অর্জন করেন।
মাইলস্টোন কলেজ
উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন কলেজ একটি স্বনামধন্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি কলেজিয়েট স্কুল হিসেবে পরিচিত এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাদান করে। এসএসসি ফলাফলের ভিত্তিতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কলেজটি জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বাংলা ও ইংরেজি দুই মাধ্যমেই পাঠদান করে। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় কলেজটি থেকে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে মোট ৩,১০৭ জন অংশগ্রহণ করে এবং সবার ফলাফল শতভাগ পাস। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২,০০০ জন, যা ৬৪.৩৭ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১,৯৫২ জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩২ জন এবং মানবিক বিভাগে ১৬ জন।
শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ
ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত শহীদ বীর উত্তম লেফটেন্যান্ট আনোয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ একটি খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সৈনিক ক্লাব থেকে কচুক্ষেত সড়কে অবস্থিত হওয়ায় কলেজটি নিরিবিলি ও নিরাপদ পরিবেশে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করে। এখানে পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি শৃঙ্খলা, নৈতিকতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলি গঠনে গুরুত্ব দেওয়া হয়। আধুনিক পদ্ধতিতে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষকরা আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে তোলেন। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় কলেজটি থেকে ১,১৮৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে এবং সকলেই উত্তীর্ণ হন, অর্থাৎ পাশের হার ১০০ শতাংশ। জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন ৬৯২ জন।
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ
যাত্রাবাড়িস্থ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে পাঠদান করে এবং সেমিস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। কলেজটি মেধাভিত্তিক শ্রেণি বিভাজন, বিশেষ ক্লাস ও একাডেমিক কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করে। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ২,৭৪০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে এবং এর মধ্যে ১,৭৬৫ জন জিপিএ-৫ অর্জন করেন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ৬৪.৪২ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পান ১,৫৭২ জন, ব্যবসায় শিক্ষায় ১৬৫ এবং মানবিকে ২৮ জন।
ঢাকা কমার্স কলেজ
ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত ঢাকা কমার্স কলেজ একটি স্বনামধন্য উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটি ঢাকা মহানগরের প্রথম বাণিজ্য-নির্ভর কলেজ হিসেবে খ্যাত। এখানে শিক্ষার্থীরা বাংলা ও ইংরেজি উভয় মাধ্যমেই অধ্যয়নের সুযোগ পান। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় এই কলেজ থেকে মোট ৩ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। পাশের হার ছিল ৯৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এদের মধ্যে ৮৪০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেন। বিভাগভিত্তিক ফলাফলে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ ৭৩৪ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১০৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ
সেরা কলেজগুলোর তালিকায় থাকা সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী ক্যাথলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি ১৮৮২ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে বেলজিয়ামের ধর্মযাজক গ্রেগরি ডি গ্রুট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ সালের পর ইংরেজি মাধ্যমে পাঠদান বন্ধ হলেও, ২০০৮ সালে পুনরায় ইংরেজি ভার্সন চালু হয় এবং ২০১৬ সালে এটি কলেজে রূপান্তরিত হয়। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় কলেজ থেকে ৩৭৮ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে ৩৭৭ জন উত্তীর্ণ হন। পাশের হার ৯৯.৭৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ অর্জন করেন ২০১ জন। বিভাগের ভিত্তিতে দেখা যায়, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৭৫ জন, মানবিক বিভাগে ২৭ জন এবং বিজ্ঞান বিভাগে ২৭৫ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেন ২৭৪ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৯৬ জন।