ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির অনলাইন আবেদন পদ্ধতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি

১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর আসন সংখ্যা

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার শ্রেষ্ঠ আসন হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)-তে ভর্তি হতে প্রতিবছর লক্ষাধিক শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটভিত্তিক আসন সংখ্যা। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য মোট আসনসংখ্যা এবং ইউনিটভিত্তিক বিস্তারিত তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো।

মোট আসন সংখ্যা

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট চারটি প্রধান ইউনিটের অধীনে ভর্তির আয়োজন করা হয়। এসব ইউনিটে প্রায় ৭,২০০টির বেশি আসন রয়েছে। নিচে ইউনিটভিত্তিক আসনসংখ্যা তুলে ধরা হলো:

ক ইউনিট (বিজ্ঞান অনুষদ)

  • আসন সংখ্যা: প্রায় ১,৮৫০টি
  • আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা: বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ
  • বিষয়ভিত্তিক ভর্তি: পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, প্রাণিবিজ্ঞান, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ইত্যাদি।

খ ইউনিট (মানবিক অনুষদ)

  • আসন সংখ্যা: প্রায় ২,৯০০টি
  • আবেদনকারীরা: মানবিক বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা
  • প্রধান বিভাগসমূহ: বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি।

গ ইউনিট (বাণিজ্য অনুষদ)

  • আসন সংখ্যা: প্রায় ১,২৫০টি
  • আবেদনকারীরা: ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ
  • প্রধান বিভাগসমূহ: ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান, অর্থনীতি, মার্কেটিং, ব্যাংকিং ইত্যাদি।

ঘ ইউনিট (সমন্বিত)

  • আসন সংখ্যা: প্রায় ১,৫০০টি
  • এই ইউনিটে অন্য বিভাগ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারে।
  • এটি মূলত ‘চেঞ্জ অব সাবজেক্ট’ ইউনিট হিসেবে পরিচিত, যেখানে বিভিন্ন অনুষদে ভিন্ন বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীরা সুযোগ পায়।

বিশেষ ইউনিট (চ ইউনিট – চারুকলা অনুষদ)

  • আসন সংখ্যা: প্রায় ১৩৫টি
  • চারুকলা অনুষদের অধীনে বিভিন্ন চারু ও কারুকলা বিষয়ভিত্তিক বিভাগে ভর্তি নেওয়া হয়। এতে ব্যবহারিক পরীক্ষাও রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা তুলনামূলকভাবে সীমিত হলেও আবেদনকারীর সংখ্যা থাকে প্রায় কয়েক লাখ, যার ফলে প্রতি আসনের বিপরীতে প্রতিযোগিতা অত্যন্ত তীব্র।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় | প্রাচ্যের অক্সফোর্ড

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (University of Dhaka) বাংলাদেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, গবেষণা ও নেতৃত্ব তৈরির কেন্দ্রবিন্দু। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়; এটি একটি ইতিহাস, একটি আন্দোলন, এবং একটি প্রজন্ম গঠনের প্রতীক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে, এটি কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয় বরং এক জীবন্ত ইতিহাসের চলমান অধ্যায়। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে দেশের শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

আজকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, শাখা-প্রশাখা, একাডেমিক কাঠামো, আসন সংখ্যা এবং এর সামগ্রিক অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য—যা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও আগ্রহী পাঠকদের জন্য হবে দিকনির্দেশনামূলক।

কার্জন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
কার্জন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা

১৯২১ সালের ১ জুলাই ব্রিটিশ ভারতের শিক্ষা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। প্রথমদিকে মাত্র তিনটি অনুষদ এবং ৮৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও আজ বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীনতম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে ১৩ জন রাষ্ট্রপতি, ৭ জন প্রধানমন্ত্রী এবং একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি পদক অর্জন করেছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, গণআন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ—প্রতিটি পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা একে বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য মর্যাদার স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানকার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অকুতোভয় ভূমিকা পালন করেন।

শিক্ষা ও অনুষদ কাঠামো

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে মোট ১৩টি অনুষদ এবং ৮৩টিরও বেশি বিভাগ। উল্লেখযোগ্য অনুষদগুলো হলো:

  • বিজ্ঞান অনুষদ
  • ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ
  • কলা অনুষদ
  • সমাজবিজ্ঞান অনুষদ
  • জীববিজ্ঞান অনুষদ
  • আইন অনুষদ
  • শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
  • চারুকলা অনুষদ
  • ফার্মেসি অনুষদ

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে উচ্চতর গবেষণার জন্য নানা ইনস্টিটিউট এবং গবেষণা কেন্দ্র, যেমনঃ আইবিএ (IBA), আইইআর, আইএআর, আইএইচএসআর ইত্যাদি।

বিশেষ ইউনিটসমূহ: যেমন চারুকলা, শিক্ষা ও গবেষণা, আইন বিভাগ—যেগুলোর আসন সংখ্যা আলাদাভাবে নির্ধারিত

উল্লেখ্য, প্রতিবছর এই আসনসংখ্যার বিপরীতে প্রায় ৩-৪ লাখ শিক্ষার্থী আবেদন করে, ফলে প্রতিযোগিতা অত্যন্ত কঠিন ও মেধাভিত্তিক।

গবেষণা ও আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিং

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশীয় গবেষণার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার জন্যও পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়টি নিয়মিত আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংয়ে স্থান পাচ্ছে এবং গবেষণা খাতে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অনুদান পাচ্ছে।

আবাসন, লাইব্রেরি ও সুযোগ-সুবিধা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ২০টিরও বেশি হল ও আবাসিক সুবিধা, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ ও একাডেমিক পরিবেশে জীবনযাপন করতে পারে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, আইসিটি সেন্টার, মুক্ত মঞ্চ, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং খেলাধুলার জন্য আলাদা বিভাগ শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশে ভূমিকা রাখছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারটি দেশের বৃহত্তম গ্রন্থাগার হিসেবে স্বীকৃত।

ভর্তি পরীক্ষা ও প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা

প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে পাঠ্যবইভিত্তিক অধ্যয়ন, বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ এবং টাইম ম্যানেজমেন্ট কৌশল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তি পরীক্ষায় স্বচ্ছতা ও মেধাভিত্তিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বজায় রাখে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্থান নয়, এটি একটি জাতিগঠনের পাঠশালা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা দেশ-বিদেশে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ২০২৫ সালে যেসব শিক্ষার্থী ঢাবিতে ভর্তি হতে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি স্বপ্নপূরণের শুরু।

আপনি কি প্রস্তুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত অংশ হতে? সময়মতো প্রস্তুতি নিন, সঠিক দিকনির্দেশনা অনুসরণ করুন এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যান আপনার কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যতের দিকে!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এবং অসাধারণ সাফল্যের মাধ্যমে আজও বাংলাদেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও প্রগতির আলোকবর্তিকা হিসেবে অগ্রসর হচ্ছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *