বাংলাদেশের জিআই পণ্য কয়টি ও কি কি ?


সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী আরো পাঁচটি পণ্য জিআই পণ্যের মর্যাদা পেয়েছে। সেগুলো হলো – মেহেরপুরের মেহেরসাগর কলা, নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি, ফুলবাড়িয়ার লাল চিনি, মেহেরপুরের হিমসাগর আম ও ফরিদপুরের পাট। পণ্যগুলোর GI জার্নাল নং যথাক্রমে – ৫৭, ৫৮, ৫৯, ৬০ এবং ৬১।

বাংলাদেশের জিআই পণ্য  GI ponno
কয়েকটি পণ্যের জিআই জার্নাল

বাংলাদেশের জিআই (GI) পণ্য

পৃথিবীর বুকে এমনও কিছু পণ্য রয়েছে যাকেবলমাত্র বাংলাদেশেই পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়।
শুরুতেই জিআই এবং উইপো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। জিআই বা জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন হলো ভৌগোলিক নির্দেশক চিহ্ন । যা কোন পণ্যের একটি নির্দিষ্ট উৎপত্তিস্থলের কারণে এর ক্ষেতি বা গুণাবলী নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়।

কোন একটি দেশের মাটি পানি আবহাওয়া ও ওই জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোন একটি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাহলে সেই পণ্যটি ওই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট | আসন ৫০৫টি

অর্থাৎ ওই পণ্য শুধু ঐ এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও উৎপাদন করা সম্ভব নয়। একটি জিআই তে সাধারনত উৎপত্তিস্থল এর নাম , শহর, অঞ্চল বা দেশ অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই জিআই পণ্যের স্বীকৃতিদানকারী প্রতিষ্ঠান হল বিশ্ব মেধা সম্পদ সংস্থা WIPO বা World Intellectual Property Organization.

WIPO জাতিসংঘের ১৫ টি বিশেষায়িত সংস্থার মধ্যে একটি। ১৯৬৭ সালের কনভেনশন অনুসারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় মেধা সম্পদ প্রচার ও সুরক্ষার জন্য একে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন পেটেন্ট,ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর বাংলাদেশের হয়ে মেধা সম্পদ সুরক্ষায় নতুন নতুন উদ্ভাবনের পেটেন্ট ও ডিজাইন স্বত্ব মঞ্জুর করেন, পণ্য ও সেবার ট্রেডমার্ক, ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য নিবন্ধন করে এবং WIPO এর সাথে সম্পর্ক স্থাপনে কাজ করে।

সাবেক পেটেন্ট অফিস এবং ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রি অফিস এই দুইটি একিভূত করে ২০০৩ সালে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর হিসেবে এটি কার্যক্রম শুরু করে।

বাংলাদেশের জিআই পণ্য GI Ponno
বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি জিআই পণ্য

জিআই (GI) সনদ প্রদান করার কারণ

কোন নির্দিষ্ট স্থানের কোন পণ্য খুব নামকরা হলে এবং সে নামের উপর বিশ্বাস করেই পণ্যটি কেনা, ব্যবহার করার উপর গুরুত্ব দিতেই জিআই সনদ দেয়া হয়।

প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে সেই স্থানের নাম যুক্ত থাকে। কোন পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেলে পণ্যগুলো বিশ্বব্যাপী ব্রান্ডিং করা সহজ হয়। জিআই সনদপ্রাপ্ত পণ্যগুলোর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ওই অঞ্চল পণ্যগুলো বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পায়। এর ফলে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। এতে সরকার রাজস্ব বেশি পায়।

চাইলেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যেতে হয়। আবেদনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রমাণ করতে হয় যে পণ্যটি মৌলিকভাবে শুধু সেই অঞ্চলেই উৎপাদিত হয়। WIPO এর নিয়ম মেনে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর এই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে। যারা জিআইয়ের জন্য আবেদন করেন তাদের দেয়া হয় মেধাস্বত্ব।

বাংলাদেশের জিআই (GI) পণ্যের গুরুত্ব

বাংলাদেশের জিআই (Geographical Indication) পণ্য বলতে বোঝায়—দেশের কোনো বিশেষ অঞ্চল, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি বা ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কিত এমন বিশেষ পণ্য, যা সেই এলাকার খ্যাতি ও গুণমানকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরে। যেমন—জামদানি শাড়ি, রাজশাহীর সিল্ক, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম, নকশীকাঁথা, খুলনার চিংড়ি ইত্যাদি।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন

জিআই পণ্যগুলো দেশের স্থানীয় কুটিরশিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। ফলে, উৎপাদক, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও কারুশিল্পীদের আয়ের সুযোগ তৈরি হয় এবং তাদের জীবনমান উন্নত হয়।

বাজার সম্প্রসারণ ও বৈদেশিক রপ্তানি

জিআই ট্যাগ পাওয়া পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি পরিচিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা পায়। এর মাধ্যমে বৈদেশিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুযোগ বৃদ্ধি পায়।

ভৌগোলিক স্বীকৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ

জিআই ট্যাগের মাধ্যমে পণ্যের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্যগত পরিচয় রক্ষা হয়, যা পণ্যকে জালিয়াতি ও নকল থেকে সুরক্ষা দেয়।

কৃষি ও শিল্প খাতে টেকসই উন্নয়ন

জিআই পণ্য কৃষি ও শিল্প খাতের উৎপাদন প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং টেকসই উৎপাদনকে উৎসাহিত করে। ফলে দেশের অর্থনীতি আরও দৃঢ় হয়।

পর্যটন খাতে ইতিবাচক প্রভাব

বিশেষ কোনো জিআই পণ্য দেখার জন্য পর্যটকেরা সেই অঞ্চল ভ্রমণ করে। এতে স্থানীয় পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে।

বাংলাদেশের জিআই পণ্যগুলো দেশের অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং বৈশ্বিক পরিচিতি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *