বিসিএস BCS আবেদনের যোগ্যতা | উচ্চতা ওজন ও শিক্ষাগত যোগ্যতা


বিসিএস BCS আবেদন করতে শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি শারীরিক যোগ্যতা যেমন উচ্চতা, ওজন, দৃষ্টিশক্তি সহ আরো কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। পিএসসির সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিসিএস এ আবেদনের জন্য দরকার হবে ন্যূনতম ওজন ও উচ্চতার। ৪৭ তম বিসিএস পরীক্ষা থেকে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য হারে আবেদন ফি কমানো হয়েছে। অর্ধেক করা হয়েছে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর।

বাংলাদেশে সরকারি উচ্চপদে চাকরির স্বপ্ন পূরণ করতে চাইলে বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষা হলো সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত পথ। এটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক একটি পরীক্ষা, যেখানে সফল হতে হলে শুধু কঠোর প্রস্তুতিই যথেষ্ট নয়, বরং আবেদন করার জন্য নির্ধারিত যোগ্যতাগুলোও পূরণ করতে হয়। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (BPSC) কর্তৃক নির্ধারিত এই যোগ্যতাগুলো সাধারণত চারটি ভাগে বিভক্ত:

  • শিক্ষাগত যোগ্যতা
  • বয়সসীমা
  • নাগরিকত্ব
  • শারীরিক সক্ষমতা

৪৭তম বিসিএসের জন্য ৩ হাজার ৬৮৮টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। আবেদন শুরু হয়েছে ১০ ডিসেম্বর সকাল ১০টায়। আবেদনের শেষ সময় কয়েক দফা বাড়ানোর পর সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অনুযায়ী ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে আবেদন করার আগে জানতে হবে আপনি আবেদন করার যোগ্য কিনা। শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি শারীরিক যোগ্যতার শর্তও পূরণ করতে হবে, বিশেষত যদি আপনি পুলিশ বা আনসার ক্যাডারে আবেদন করতে চান।

বিসিএস BCS আবেদনের শারীরিক যোগ্যতা

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (BCS) পরীক্ষায় অংশ নিতে চাইলে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক যোগ্যতাও পূরণ করতে হয়। বিশেষ করে প্রশাসন, পুলিশ, কাস্টমস ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের জন্য এই শারীরিক যোগ্যতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আজকের লেখায় বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

সাধারণ ক্যাডার যেমন প্রশাসন, শিক্ষা, পরিকল্পনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকাই মূল বিষয়। তবে পুলিশের মতো ফিজিক্যালি ডিমান্ডিং ক্যাডারের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড।

লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়, যেখানে প্রার্থীদের শারীরিক ফিটনেস যাচাই করা হয়। যাদের গুরুতর কোনো শারীরিক অসুবিধা থাকে, তাদের আবেদন বাতিল হতে পারে।

বিসিএস BCS আবেদন করতে ন্যূনতম যত ওজন ও উচ্চতা লাগবে

বিসিএস BCS পুলিশ ও আনসার ক্যাডারে আবেদনকারীদের জন্য শারীরিক যোগ্যতার প্রয়োজনীয় শর্তগুলো হলো:

পুলিশ ও আনসার ক্যাডার

পুরুষ প্রার্থীদের জন্য

  • ন্যূনতম উচ্চতা: ১৬২.৫৬ সেন্টিমিটার
  • ন্যূনতম ওজন: ৫৪.৫৪ কেজি

নারী প্রার্থীদের জন্য

  • ন্যূনতম উচ্চতা: ১৫২.৪০ সেন্টিমিটার
  • ন্যূনতম ওজন: ৪৫.৪৫ কেজি

অন্যান্য ক্যাডার

পুরুষ প্রার্থীদের জন্য

  • ন্যূনতম উচ্চতা: ১৫২.৪০ সেন্টিমিটার
    ন্যূনতম ওজন: ৪৯.৯৯ কেজি

নারী প্রার্থীদের জন্য

  • ন্যূনতম উচ্চতা: ১৪৭.৩২ সেন্টিমিটার
  • ন্যূনতম ওজন: ৪৩.৫৪ কেজি


উল্লিখিত মানদণ্ড পূরণ না হলে প্রার্থীরা নিয়োগের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এছাড়া, প্রার্থীর দৃষ্টিশক্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত যোগ্যতা নির্ধারিত বিধি অনুসারে পরীক্ষা করা হবে। প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়টি সরকারি নিয়ম মেনে সম্পন্ন করা হবে।

বুকের মাপ, উচ্চতা ও ওজন নির্ধারণ

  • প্রার্থীকে অনলাইন ফরমে বুকের মাপ সেন্টিমিটারে উল্লেখ করতে হবে।
  • লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মৌখিক পরীক্ষার দিন উচ্চতা, ওজন এবং বুকের মাপ উল্লেখ করে বিএমডিসি নিবন্ধিত চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে।
  • প্রত্যয়নপত্রে চিকিৎসকের নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে।

বিসিএস BCS আবেদনের শিক্ষাগত যোগ্যতা | Academic Qualification For BCS

BCS পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চাইলে নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষাগত যোগ্যতা পূরণ করা বাধ্যতামূলক। বিসিএস হলো বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (BPSC) কর্তৃক পরিচালিত একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, যার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।

বিসিএসে (BCS) আবেদন করার জন্য প্রার্থীকে অবশ্যই স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। এখানে স্নাতক বলতে বোঝানো হয় চার বছর মেয়াদি অনার্স বা সমমানের ডিগ্রি।

যারা তিন বছর মেয়াদি স্নাতক (পাস কোর্স) সম্পন্ন করেছেন, তাঁদের জন্য এক বছরের স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) ডিগ্রি আবশ্যক।

আরও পড়ুন: মেট্রোরেল এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

কোনো প্রার্থী যদি এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতক পর্যায়ের যেকোনো দুইটিতে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমান এবং একটিতে তৃতীয় শ্রেণি বা সমমানের নিচে পেয়ে থাকেন, তবে তিনি বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

জিপিএ অনুযায়ী শ্রেণি নির্ধারণের নিয়মঃ

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের জন্য:

জিপিএশ্রেণি
জিপিএ ৩.০০ বা তার বেশিপ্রথম শ্রেণি
জিপিএ ২.০০ থেকে ২.৯৯দ্বিতীয় শ্রেণি
জিপিএ ১.০০ থেকে ১.৯৯তৃতীয় শ্রেণি

স্নাতক/স্নাতকোত্তর পর্যায়ে:

CGPAশ্রেণি
CGPA ৩.০০ বা তার বেশিপ্রথম শ্রেণি
CGPA ২.২৫ – ২.৯৯দ্বিতীয় শ্রেণি
CGPA ১.৬৫ – ২.২৪তৃতীয় শ্রেণি

চূড়ান্ত বর্ষ পরীক্ষার্থী

বিসিএস আবেদন চলাকালীন যারা তাদের চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের অপেক্ষায় আছেন, তারাও নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে আবেদন করতে পারেন। তবে, মৌখিক পরীক্ষার সময় অবশ্যই তাদের সকল শিক্ষাগত সনদ জমা দিতে হয়।

বিদেশি ডিগ্রি

বিদেশ থেকে প্রাপ্ত ডিগ্রি থাকলে, বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে।

বিসিএস BCS আবেদনের বয়সসীমা

পিএসসি গত ২৬ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে ২৯ ডিসেম্বর থেকে। কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে আবেদনের শেষ তারিখ নির্ধারন করা হয়েছে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত।

বিশেষ উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এবার প্রথমবারের মতো বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। ০১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রার্থীর বয়স ২১ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে হতে হবে । বয়স কম বা বেশি হলে আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।

প্রতিবছর হাজার হাজার চাকরিপ্রত্যাশী BCS পরীক্ষায় অংশ নিতে আগ্রহী হন। কিন্তু অনেকেই বিসিএসের বয়সসীমা সম্পর্কিত বিভ্রান্তি ও ভুল ধারণার কারণে আবেদন করার সুযোগ হারান। তাই, সঠিক বয়সসীমা জানাটা একজন প্রার্থীর প্রস্তুতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সাধারণ প্রার্থীদের বয়সসীমা

সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা পূর্বে ২১ বছর থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ছিল। তবে বর্তমান সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাধারণ প্রার্থীদের বয়স ৩২ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

বিশেষ শ্রেণির প্রার্থীদের জন্য বয়সসীমা

নিম্নোক্ত শ্রেণির প্রার্থীদের জন্য বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ৩২ বছর পর্যন্তই রাখা হয়েছে:

  • মুক্তিযোদ্ধার পুত্র ও কন্যা
  • প্রতিবন্ধী প্রার্থী
  • উপজাতীয় প্রার্থী

বয়স গণনার নিয়ম

বিসিএস (BCS) পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের যে মাসে বিজ্ঞাপন জারি হয়, সেই মাসের ১ম তারিখে প্রার্থীর বয়স নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি বিজ্ঞপ্তি এপ্রিল মাসে প্রকাশিত হয়, তবে প্রার্থীর বয়স ১ এপ্রিল তারিখে ২১ থেকে ৩২ বছর এর মধ্যে থাকতে হবে।

বয়স প্রমাণের জন্য কোন সনদ গ্রহণযোগ্য?

বয়স যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এসএসসি বা সমমানের সনদে উল্লিখিত জন্ম তারিখই চূড়ান্তভাবে বিবেচিত হবে। হলফনামা বা জন্মসনদ দিয়ে বয়স পরিবর্তন এখন আর গ্রহণযোগ্য নয়। তাই এসএসসি সনদ অনুযায়ী বয়স হিসাব করে আবেদন প্রস্তুতি নিতে হবে।

নাগরিকত্ব | Nationality

বিসিএস (BCS) পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে প্রার্থীকে বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।

যদি কোনো প্রার্থী বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করেন বা বিবাহের প্রতিশ্রুতি দেন, তবে তিনি সরকারি অনুমতি ব্যতীত বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

বিসিএস BCS আবেদনের নিয়মাবলি

প্রার্থীদের কমিশনের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইন ফরম পূরণ করতে হবে। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টা ৫৯ মিনিট। নির্ধারিত সময়ের বাইরে কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না।

ভাইভা নম্বর কমানো

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সূত্রে জানা গেছে, ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, মৌখিক পরীক্ষার (ভাইভা) নম্বর ২০০ থেকে কমিয়ে ১০০ করা হয়েছে।

বিসিএস BCS আবেদন ফি কমানো

আবেদন ফি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা হয়েছে। সাধারণ প্রার্থীদের জন্য আবেদন ফি ৭০০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভুক্ত প্রার্থী, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের জন্য আবেদন ফি মাত্র ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

যারা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে আগ্রহী, তাদের এই শর্তাবলি পূরণ করে আবেদন করতে হবে। সঠিক প্রস্তুতি ও শর্ত মেনে আবেদন করলে কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পদে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *