বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের নুন্যতম যোগ্যতা বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
ভর্তি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অনলাইনে আবেদন করা যাবে। পরীক্ষা দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হবে,
- প্রাক্-নির্বাচনী
- ও মূল ভর্তি পরীক্ষা
প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষা দুটি শিফটে গ্রহণ করা হবে, শুধুমাত্র প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষায় মেধার ভিত্তিতে নির্বাচিত আবেদনকারীদের মূল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে।
প্রাক্-নির্বাচনী
মোট নম্বর | ১০০ |
পরীক্ষার সময় | ১ ঘন্টা |
নেগেটিভ মার্কিং | ০.২৫ |
শুধুমাত্র উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে পরের ধাপে চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-
- কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস কৌশল
- পুরকৌশল
- যন্ত্রকৌশল
- তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল
- স্থাপত্য ও পরিকল্পনা
অনুষদে বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে বাংলাদেশি নাগরিকেরা আবেদন করতে পারবেন। যেসব ছাত্র ছাত্রী পূর্বে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন তাঁরা এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এর অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা
প্রার্থীকে বাংলাদেশের যেকোনো মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড অথবা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড অথবা কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে গ্রেড পদ্ধতিতে বিজ্ঞান বিভাগে-
- গণিত
- পদার্থবিজ্ঞান
- রসায়ন
সহ জিপিএ ৫.০০- স্কেলের মধ্যে ন্যূনতম জিপিএ-৪.০০ পেয়ে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট অথবা দাখিল অথবা সমমানের পরীক্ষায় পাস করতে হবে। বিদেশি শিক্ষা বোর্ড থেকে সমমানের পরীক্ষায় কমপক্ষে সমতুল্য গ্রেড পেয়ে পাস করতে হবে।
প্রার্থীকে বাংলাদেশের যেকোনো মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড অথবা মাদ্রাসা বোর্ড অথবা কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে উচ্চমাধ্যমিক অথবা আলিম অথবা সমমানের পরীক্ষায় গ্রেড পদ্ধতিতে জিপিএ ৫.০০- স্কেলে এর মধ্যে জিপিএ-৫.০০ এবং
- উচ্চতর গণিত
- পদার্থবিজ্ঞান
- রসায়ন
বিষয়সমূহের প্রতিটিতে ন্যূনতম জিপি-৫ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক অথবা আলিম অথবা সমমানের পরীক্ষায় পাস করতে হবে। বিদেশি শিক্ষা বোর্ড থেকে সমমানের পরীক্ষায় কমপক্ষে সমতুল্য গ্রেড অথবা নম্বর পেয়ে পাস করতে হবে।
সব সঠিক আবেদনকারীর মধ্য থেকে বাছাই করে যোগ্যতার ভিত্তিতে ১ থেকে ১৮০০০ পর্যন্ত আবেদনকারীকে প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে।
এই বাছাইয়ের জন্য আবেদনকারীর উচ্চমাধ্যমিক অথবা সমমান পরীক্ষায় উচ্চতর গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয় তিনটিতে প্রাপ্ত মোট নম্বর এবং উচ্চতর গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বরকে অগ্রাধিকারের ক্রম হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

GCE ‘O’ এবং GCE ‘A’ লেভেল এর জন্য
GCE ‘O’ লেভেল এবং GCE ‘A’ লেভেল পাস করা প্রার্থীদের প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য GCE ‘O’ লেভেল পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫ টি বিষয়ের-
- গণিত
- পদার্থবিজ্ঞান
- রসায়ন
- ইংরেজি
সহ প্রতিটিতে ন্যূনতম ‘বি’ গ্রেড এবং GCE ‘A’ লেভেল পরীক্ষায় গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন- ৩ বিষয়ের যেকোনো দুটিতে ন্যূনতম ‘এ’ গ্রেড এবং একটিতে ন্যূনতম ‘বি’ গ্রেড পেয়ে পাস করতে হবে।
ন্যূনতম যোগ্যতা পূরণ সাপেক্ষে GCE ‘O’ লেভেল এবং GCE ‘A’ লেভেল পরীক্ষার ফলাফল প্রাপ্ত সব সঠিক আবেদনকারীর মধ্য থেকে নির্ধারিত গ্রেডের ভিত্তিতে যাচাই করে ১ম থেকে ৪০০তম পর্যন্ত আবেদনকারীকে প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে।
এই বাছাইয়ের জন্য আবেদনকারীর GCE ‘A’ লেভেল পরীক্ষায় গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে প্রাপ্ত গ্রেডকে বিবেচনা করা হবে।
উল্লিখিত শর্তাবলি পূরণ হলে প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের দুটি শিফটে ভাগ করে প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরিসংখ্যানভিত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি শিফটে প্রার্থীদের মেধার বিন্যাসের সাম্যতা নিশ্চিত করা হবে।
প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য আবেদনকারীদের তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফলের মেধাক্রম অনুসারে প্রতি শিফটের ১ম – ৩০০০তম শিক্ষার্থীকে মূল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত করা হবে। মূল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য ছাত্রছাত্রীদের তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট buet.ac.bd প্রকাশ করা হবে।
বুয়েট (BUET) | বাংলাদেশের প্রকৌশল শিক্ষার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষার শীর্ষস্থানীয় নাম হচ্ছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। একে শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় বললে কম বলা হবে—এটি একটি প্রতীকের নাম, মেধা ও উদ্ভাবনের কেন্দ্রবিন্দু। দীর্ঘ ইতিহাস, উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা এবং দক্ষ প্রকৌশলী তৈরির নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে বুয়েট আজ বাংলাদেশের গর্বে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: এমআইএসটি (MIST) এ ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু
এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো বুয়েটের ইতিহাস, অনুষদ ও বিভাগ, ভর্তি প্রক্রিয়া, আসন সংখ্যা, গবেষণা কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা।
বুয়েট এর ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা
বুয়েটের যাত্রা শুরু হয় ১৯১২ সালে ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল হিসেবে। পরে এটি ১৯৪৭ সালে আয়ুব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং অবশেষে ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (BUET) নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ বুয়েট শুধু বাংলাদেশের নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃতি পেয়েছে।
শিক্ষা ও একাডেমিক কাঠামো
বুয়েটে রয়েছে মোট ৬টি অনুষদ এবং ১৮টি বিভাগ, যা প্রকৌশল, আর্কিটেকচার এবং নগর পরিকল্পনার বিভিন্ন শাখায় শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ প্রদান করে।
অনুষদগুলো হলো:
- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ
- ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ
- মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ
- আর্কিটেকচার অ্যান্ড প্ল্যানিং অনুষদ
- ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ অনুষদ
- বিজ্ঞান অনুষদ
প্রধান বিভাগসমূহের মধ্যে রয়েছে:
- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (CE)
- ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE)
- মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ME)
- কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE)
- আর্কিটেকচার (Arch)
- কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ChE)
বুয়েট এ ভর্তি প্রক্রিয়া ও প্রতিযোগিতা
বুয়েটে ভর্তি হওয়া বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এক স্বপ্ন। প্রতি বছর দেশের প্রায় ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করলেও, মাত্র ১,২০০-এর কাছাকাছি শিক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে ভর্তির সুযোগ পায়। অর্থাৎ, প্রতিযোগিতা প্রতি আসনের বিপরীতে প্রায় ২০ জনেরও বেশি।
ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হতে হয় এবং গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও ইংরেজিতে ভালো নম্বর থাকতে হয়। ভর্তি পরীক্ষা সম্পূর্ণ লিখিত ভিত্তিক (MCQ নয়) এবং প্রশ্নপত্রের মান অত্যন্ত উচ্চস্তরের।
বুয়েট এর আসন সংখ্যা (২০২৫)
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে বুয়েটে মোট আসন সংখ্যা প্রায় ১,২১৫টি। বিভাগভেদে আসন সংখ্যা সাধারণত এভাবে বিভক্ত:
বিভাগ | আসন সংখ্যা |
---|---|
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) | ১৮০টি |
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE) | ১৯৫টি |
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ME) | ১৮০টি |
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (CE) | ১৮০টি |
আর্কিটেকচার (Arch) | ৬০টি |
অন্যান্য বিভাগে ৩০-৬০টি করে।
গবেষণা ও উদ্ভাবন
বুয়েট শুধুমাত্র শিক্ষা নয়, গবেষণার দিক থেকেও দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে উন্নত ল্যাবরেটরি, গবেষণা কেন্দ্র এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে নিয়মিত প্রকাশিত গবেষণাপত্র।
বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, স্মার্ট সিস্টেম, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, নগর পরিকল্পনা, এবং পরিবেশ প্রকৌশল—এই খাতে বুয়েটের গবেষণা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সহযোগিতা
বুয়েট বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ প্রকল্পে কাজ করে। যেমন: MIT, Stanford, NUS, Tokyo Institute of Technology ইত্যাদি। এছাড়াও, বুয়েটের গ্র্যাজুয়েটরা নিয়মিত বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় সুযোগ পান।
বুয়েট ক্যাম্পাস
বুয়েটের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ৮টি আবাসিক হল, আধুনিক গ্রন্থাগার, ক্রীড়া সুবিধা, ডাইনিং, স্বাস্থ্যসেবা এবং ইন্টারনেট সংযুক্ত ক্যাম্পাস।
বিভিন্ন ক্লাব, সোসাইটি ও প্রতিযোগিতা যেমন DEBATERS’ SOCIETY, IEEE BUET STUDENT BRANCH ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একাডেমিকের বাইরেও নিজেদের দক্ষতা বিকাশের সুযোগ পান।
বুয়েট শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়—এটি বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রাণকেন্দ্র। যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য এখানে ভর্তি হওয়া মানেই একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। কঠোর পরিশ্রম, বিশুদ্ধ মেধা এবং সঠিক প্রস্তুতির মাধ্যমেই এই গৌরবময় প্রতিষ্ঠানে স্থান পাওয়া সম্ভব।
আপনি কি বুয়েটে ভর্তি হতে চান? তাহলে এখনই শুরু করুন প্রস্তুতি—কারণ বুয়েটের স্বপ্ন পূরণে বিলম্ব নয়, দরকার শুধু পরিকল্পনা ও অধ্যবসায়।