বুয়েট BUET ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতা | যারা আবেদন করতে পারবে

প্রাক্-নির্বাচনী

বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা

ডিপার্টমেন্ট অফ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, বুয়েট।
ডিপার্টমেন্ট অফ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, বুয়েট।

GCE ‘O’ এবং GCE ‘A’ লেভেল এর জন্য

বুয়েট (BUET) | বাংলাদেশের প্রকৌশল শিক্ষার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষার শীর্ষস্থানীয় নাম হচ্ছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। একে শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় বললে কম বলা হবে—এটি একটি প্রতীকের নাম, মেধা ও উদ্ভাবনের কেন্দ্রবিন্দু। দীর্ঘ ইতিহাস, উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা এবং দক্ষ প্রকৌশলী তৈরির নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে বুয়েট আজ বাংলাদেশের গর্বে পরিণত হয়েছে।

এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো বুয়েটের ইতিহাস, অনুষদ ও বিভাগ, ভর্তি প্রক্রিয়া, আসন সংখ্যা, গবেষণা কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা।

বুয়েট এর ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা

বুয়েটের যাত্রা শুরু হয় ১৯১২ সালে ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল হিসেবে। পরে এটি ১৯৪৭ সালে আয়ুব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং অবশেষে ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (BUET) নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ বুয়েট শুধু বাংলাদেশের নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃতি পেয়েছে।

শিক্ষা ও একাডেমিক কাঠামো

বুয়েটে রয়েছে মোট ৬টি অনুষদ এবং ১৮টি বিভাগ, যা প্রকৌশল, আর্কিটেকচার এবং নগর পরিকল্পনার বিভিন্ন শাখায় শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ প্রদান করে।

অনুষদগুলো হলো:

  • সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ
  • ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ
  • মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ
  • আর্কিটেকচার অ্যান্ড প্ল্যানিং অনুষদ
  • ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ অনুষদ
  • বিজ্ঞান অনুষদ

প্রধান বিভাগসমূহের মধ্যে রয়েছে:

  • সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (CE)
  • ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE)
  • মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ME)
  • কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE)
  • আর্কিটেকচার (Arch)
  • কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ChE)

বুয়েট এ ভর্তি প্রক্রিয়া ও প্রতিযোগিতা

বুয়েটে ভর্তি হওয়া বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এক স্বপ্ন। প্রতি বছর দেশের প্রায় ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করলেও, মাত্র ১,২০০-এর কাছাকাছি শিক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে ভর্তির সুযোগ পায়। অর্থাৎ, প্রতিযোগিতা প্রতি আসনের বিপরীতে প্রায় ২০ জনেরও বেশি।

ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হতে হয় এবং গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও ইংরেজিতে ভালো নম্বর থাকতে হয়। ভর্তি পরীক্ষা সম্পূর্ণ লিখিত ভিত্তিক (MCQ নয়) এবং প্রশ্নপত্রের মান অত্যন্ত উচ্চস্তরের।

বুয়েট এর আসন সংখ্যা (২০২৫)

২০২৫ শিক্ষাবর্ষে বুয়েটে মোট আসন সংখ্যা প্রায় ১,২১৫টি। বিভাগভেদে আসন সংখ্যা সাধারণত এভাবে বিভক্ত:

বিভাগআসন সংখ্যা
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE)১৮০টি
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE) ১৯৫টি
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ME)১৮০টি
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (CE)১৮০টি
আর্কিটেকচার (Arch)৬০টি

অন্যান্য বিভাগে ৩০-৬০টি করে।

গবেষণা ও উদ্ভাবন

বুয়েট শুধুমাত্র শিক্ষা নয়, গবেষণার দিক থেকেও দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে উন্নত ল্যাবরেটরি, গবেষণা কেন্দ্র এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে নিয়মিত প্রকাশিত গবেষণাপত্র।

বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, স্মার্ট সিস্টেম, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, নগর পরিকল্পনা, এবং পরিবেশ প্রকৌশল—এই খাতে বুয়েটের গবেষণা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সহযোগিতা

বুয়েট বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ প্রকল্পে কাজ করে। যেমন: MIT, Stanford, NUS, Tokyo Institute of Technology ইত্যাদি। এছাড়াও, বুয়েটের গ্র্যাজুয়েটরা নিয়মিত বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় সুযোগ পান।

বুয়েট ক্যাম্পাস

বুয়েটের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ৮টি আবাসিক হল, আধুনিক গ্রন্থাগার, ক্রীড়া সুবিধা, ডাইনিং, স্বাস্থ্যসেবা এবং ইন্টারনেট সংযুক্ত ক্যাম্পাস।

বিভিন্ন ক্লাব, সোসাইটি ও প্রতিযোগিতা যেমন DEBATERS’ SOCIETY, IEEE BUET STUDENT BRANCH ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একাডেমিকের বাইরেও নিজেদের দক্ষতা বিকাশের সুযোগ পান।

বুয়েট শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়—এটি বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রাণকেন্দ্র। যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য এখানে ভর্তি হওয়া মানেই একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। কঠোর পরিশ্রম, বিশুদ্ধ মেধা এবং সঠিক প্রস্তুতির মাধ্যমেই এই গৌরবময় প্রতিষ্ঠানে স্থান পাওয়া সম্ভব।

আপনি কি বুয়েটে ভর্তি হতে চান? তাহলে এখনই শুরু করুন প্রস্তুতি—কারণ বুয়েটের স্বপ্ন পূরণে বিলম্ব নয়, দরকার শুধু পরিকল্পনা ও অধ্যবসায়।

Leave a Comment