ভিসা মুক্ত দেশের তালিকা | পাসপোর্ট দিয়েই ভ্রমন করা যাবে


ভিসা ছাড়া শুধুমাত্র বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়েই ভ্রমন করতে পারবেন যে দেশগুলতে অর্থাৎ ভিসামুক্ত দেশের তালিকা এবং বিস্তারিত জানবো আজ। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে। চলতি বছরে বিশ্বের ২১টি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করার সুযোগ পাবেন বাংলাদেশের নাগরিকরা।

বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো ভিসা পাওয়া। আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে অন্য দেশের ভূমিতে প্রবেশের এই অনুমতিপত্র পাওয়া এখনো অনেকের জন্যই একটি জটিল প্রক্রিয়া। বিশ্ব রাজনীতি এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে ভিসা প্রদানের নীতিতে পরিবর্তন ঘটে, যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে সাধারণ ভ্রমণকারীদের ওপর।

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন সত্ত্বেও, অনেক যাত্রীকে ভিসা প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আবেদন প্রক্রিয়ার জটিলতা, দেরি, এবং কখনো কখনো অস্পষ্ট নীতিমালার কারণে অনেকে বিদেশ সফরের পরিকল্পনা করেই তা বাতিল করতে বাধ্য হন। এ অবস্থায়, ভিসামুক্ত বা সহজ ভিসা-প্রাপ্তির সুবিধা পাওয়া দেশগুলো যে কোনো দেশের নাগরিকদের জন্যই একটি বড় ইতিবাচক দিক।

বিশ্বব্যাপী ভিসা প্রক্রিয়ার জটিলতা ও অব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিন ধরেই ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত থেকে শুরু করে অনুমোদনের অপেক্ষা—সবই ভ্রমণকারীদের জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। তবে নির্দিষ্ট কিছু দেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের আর এই জটিলতার মুখোমুখি হতে হবে না।

বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসামুক্ত দেশের তালিকা

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টের মান অনুযায়ী র‍্যাংকিং নির্ধারণ করা হয়েছে। মূলত, কোন দেশের পাসপোর্টধারীরা কতটি দেশে ভিসা ছাড়াই কিংবা অন-অ্যারাইভাল বা ই-ভিসা সুবিধায় প্রবেশ করতে পারেন, তার ভিত্তিতেই এই তালিকা তৈরি করা হয়।

বাংলাদেশের পাসপোর্টধারীদের জন্যও কিছু স্বস্তির খবর রয়েছে এই প্রতিবেদনে। তালিকায় দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশিরা ভিসা ছাড়া বা সহজতর প্রক্রিয়ায় প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন। যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণে আগ্রহী নাগরিকদের জন্য একটি আশার বার্তা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দেশগুলো হচ্ছে –

  • বাহামাস
  • বার্বাডোস
  • ভুটান
  • ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ
  • কুক দ্বীপপুঞ্জ
  • ডমিনিকা
  • ফিজি
  • গ্রেনাডা
  • হাইতি
  • জ্যামাইকা
  • কিরিবাতি
  • মাদাগাস্কার
  • মাইক্রোনেশিয়া
  • মন্টসেরাট
  • নিউ
  • রুয়ান্ডা
  • সেন্ট কিট্স এবং নেভিস
  • সেন্ট ভিন‌্সেন্ট এবং গ্রেনাডাইন্স
  • দ্যা গাম্বিয়া
  • ত্রিনিদাদ ও টোবাগো
  • ভানুয়াতু

২০২৪ সালের ভিসামুক্ত ভ্রমণ সূচকে লেসোথো দেশের নাম আর অন্তর্ভুক্ত নেই। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশটিতে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের এখন থেকে ভ্রমণের আগে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে এবং নির্ধারিত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অনুমোদন নিতে হবে।

তবে ভিসামুক্ত তালিকার বাকি ২১টি দেশের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। তালিকায় নতুন কোনো দেশ যোগ হয়নি এবং পূর্বের দেশগুলোর ক্ষেত্রেও কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

ভিসামুক্ত ভ্রমণ নীতিমালার আওতায় বিদেশ যাত্রায় কোনো ধরনের কাগুজে বা ডিজিটাল অনুমতিপত্র দেখানোর প্রয়োজন হয় না। এমনকি এতে ভিসা ফি দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও থাকে না। ভ্রমণের একমাত্র প্রয়োজনীয় নথি হিসেবে পাসপোর্টই যথেষ্ট। তবে গন্তব্য দেশের অভ্যন্তরে অবস্থানের জন্য সাধারণত নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়, যা দেশ ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।

অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা দিবে যেসব দেশ

বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ২০২৫ সালে অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা বহাল থাকছে ১৬টি দেশে। এই অভিবাসন নীতির অধীনে বিদেশ ভ্রমণকারীরা গন্তব্য দেশে পৌঁছানোর পর বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর বা স্থলবন্দরে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন।

হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স ২০২৫-এর তথ্য অনুযায়ী, অন-অ্যারাইভাল ভিসার এই সুবিধা বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগকে আরও সহজ করবে। তবে ভ্রমণের আগে প্রত্যেক দেশের শর্ত এবং মেয়াদ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া জরুরি।

দেশগুলোর তালিকা নিম্নরূপ:

  • বলিভিয়া
  • বুরুন্ডি
  • কম্বোডিয়া
  • কেপ ভার্দে দ্বীপপুঞ্জ
  • কমোরো দ্বীপপুঞ্জ
  • জিবুতি
  • গিনি-বিসাউ
  • মালদ্বীপ
  • মৌরিতানিয়া
  • মোজাম্বিক
  • নেপাল
  • সামোয়া
  • সিয়েরা লিওন
  • সোমালিয়া
  • তিমুর-লেস্তে
  • টুভালু

২০২৪ সালেএই সংখ্যাটি ছিল ১৮। এবার এই ক্যাটাগরিতে নেই সেশেলস ও টোগো।

অন-অ্যারাইভাল ভিসা

বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অন-অ্যারাইভাল ভিসা এখন একাধিক দেশের অভিবাসন নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এই প্রক্রিয়ার আওতায় যাত্রীরা নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে সেখানে অবতরণের পরপরই ভিসা সংগ্রহ করতে পারেন। বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর কিংবা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপয়েন্টেই সম্পন্ন হয় এই আনুষ্ঠানিকতা।

আরও পড়ুন: থাইল্যান্ডের ই-ভিসা চালু বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য

ভিসা অনুমতির এই ধরনটি মূলত স্বল্পমেয়াদি ভ্রমণের জন্য কার্যকর। প্রতিটি দেশে এই ভিসার মেয়াদ ভিন্ন হয়, কারও ক্ষেত্রে কয়েকদিন, আবার কোথাও কোথাও কয়েক সপ্তাহ পর্যন্তও থাকতে দেওয়া হয়। সাধারণত পর্যটন, ব্যবসা বা ব্যক্তিগত সফরের জন্যই এই সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে।

অনেক দেশ বিনা মূল্যে অন-অ্যারাইভাল ভিসা দিয়ে থাকে, তবে কিছু দেশে এর জন্য নির্ধারিত পরিমাণে ফি আদায় করা হয়। এই ভিসা পদ্ধতি ভ্রমণকারীদের জন্য যেমন সুবিধাজনক, তেমনি আন্তর্জাতিক পর্যটন শিল্পকেও করেছে আরও গতিশীল ও সহজলভ্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ভিসা নীতি দেশগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক ও পর্যটন খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

ইটিএ (ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন)

ইটিএ একটি অনলাইনভিত্তিক অনুমোদন পদ্ধতি, যার মাধ্যমে বিদেশি নাগরিকরা নির্দিষ্ট একটি দেশে ভ্রমণের পূর্বেই অনলাইনে ভিসা অনুমোদন গ্রহণ করতে পারেন। এতে ভ্রমণকারীরা দূতাবাসে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো বা জটিল কাগজপত্রে জড়িয়ে পড়ার পরিবর্তে ঘরে বসেই আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইটিএ পদ্ধতি শুধুমাত্র যাত্রীদের জন্য সুবিধাজনক নয়, বরং এটি নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও একটি বড় পদক্ষেপ। আগেভাগেই যাত্রীদের তথ্য যাচাই করে নেওয়া যায় বলে সন্ত্রাসবাদ বা অবৈধ অভিবাসন রোধে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে।

ইটিএ দিয়ে ভ্রমন করা যাবে ৩ দেশে। দেশগুলো হলো –

  • শ্রীলঙ্কা
  • কেনিয়া
  • সেশেলস

অন-অ্যারাইভাল ভিসা ও ইটিএ এর পার্থক্য

ইটিএ (ETA – Electronic Travel Authorization) এবং অন-অ্যারাইভাল ভিসা (Visa on Arrival) উভয়ই ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় ভিসা সুবিধা হলেও এদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। নিচে তুলনামূলকভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:

ইটিএ (ETA)অন-অ্যারাইভাল ভিসা
এটি একটি পূর্বানুমোদিত ভিসা অনুমতি যা অনলাইনে আবেদন করতে হয়।এটি এমন একটি ভিসা যা গন্তব্য দেশে পৌঁছে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে পাওয়া যায়।
অনলাইনে আবেদন করতে হয়, সাধারণত ভ্রমণের আগে।সরাসরি গন্তব্য দেশে পৌঁছার পর আবেদন করতে হয়।
অনলাইনে পাসপোর্ট, ছবি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড করতে হয়।পাসপোর্ট, ছবি, ফর্ম পূরণ ইত্যাদি সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়।
সাধারণত কয়েক ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে।ইমিগ্রেশন কাউন্টারে তাৎক্ষণিকভাবে প্রদান করা হয়।
আগে থেকে অনুমোদন পেলে ভ্রমণের নিশ্চয়তা বেশি থাকে।ভিসা না পেলে দেশে ফেরত যেতে হতে পারে।
যাত্রার আগে সব কিছু নিশ্চিত থাকে, সময় ও ঝামেলা কম।জরুরি বা অপ্রত্যাশিত ভ্রমণের জন্য সুবিধাজনক।
ব্যবহৃত দেশসমূহ – কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি।ব্যবহৃত দেশসমূহ – ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল ইত্যাদি।

সংক্ষেপে, ইটিএ হলো পূর্ব-অনুমোদিত ভিসা ব্যবস্থা যা অনলাইনে পাওয়া যায় এবং নিরাপদ ভ্রমণের জন্য উপযোগী। অন-অ্যারাইভাল ভিসা হলো গন্তব্য দেশে পৌঁছে পাওয়া যায়, তবে এতে কিছু ঝুঁকি থেকে যায়।

আপনার নির্দিষ্ট গন্তব্য বা প্রয়োজন অনুযায়ী কোনটি উপযুক্ত হবে তা বেছে নেওয়া উচিত। যদি চান, আমি নির্দিষ্ট দেশের জন্য কোনটি প্রযোজ্য তাও জানাতে পারি।

ই-ভিসা (E-Visa) দেয়া দেশের তালিকা

ই-ভিসা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি ভ্রমণের উদ্দেশ্যে, যেমন পড়াশোনা, চাকরি বা ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, ইটিএ মূলত স্বল্পমেয়াদি ভ্রমণ, যেমন পর্যটন বা ট্রানজিটের জন্য উপযুক্ত।

বাংলাদেশিদের ই-ভিসা দেওয়া দেশের তালিকা

  • আলবেনিয়া
  • অ্যান্টিগুয়া এবং বারবুডা
  • আজারবাইজান
  • বাহরাইন
  • বেনিন
  • বতসোয়ানা
  • ক্যামেরুন
  • কলম্বিয়া
  • নিরক্ষীয় গিনি
  • গিনি
  • ইথিওপিয়া
  • গ্যাবন
  • জর্জিয়া
  • কাজাখস্তান
  • কিরগিজস্তান
  • মালয়েশিয়া
  • মলদোভা
  • মায়ানমার
  • ওমান
  • পাকিস্তান
  • কাতার
  • সাও টোমে এবং প্রিন্সিপে
  • সুরিনাম
  • সিরিয়া
  • তাজিকিস্তান
  • তানজানিয়া
  • থাইল্যান্ড
  • টোগো
  • তুর্কি
  • উগান্ডা
  • উজবেকিস্তান
  • ভিয়েতনাম
  • জাম্বিয়া
  • জিম্বাবুয়ে

হেনলি ইনডেক্সের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসামুক্ত ভ্রমণ গন্তব্যের সংখ্যা কমে এসেছে। চলতি বছরে ভিসামুক্ত, অন-অ্যারাইভাল এবং ইটিএ-সহ (ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন) গন্তব্যের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০-এ, যা গত বছর ছিল ৪২।

এই পরিবর্তনের ফলে হেনলি ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৭ থেকে নেমে ১০০তে পৌঁছেছে। উল্লেখ্য, ২০২১ সালে বাংলাদেশি পাসপোর্টের অবস্থান সর্বনিম্ন মাত্রায় ছিল। তবে পরবর্তী তিন বছরে ধীরে ধীরে উন্নতি হয়েছিল। চলতি বছরের এই অবনতি আবারও বাংলাদেশি পাসপোর্টের মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বিশ্বব্যাপী ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুবিধা একটি দেশের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও কূটনৈতিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড। তাই এই নিম্নগামী প্রবণতা ভ্রমণপিপাসু ও কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্বেগজনক।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *