মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল জানা যাবে যেভাবে


মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল জানা যাবে যেভাবে। সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা সারা দেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছর পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬৫ জন। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, ১৯ বা ২০ তারিখের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের জন্য প্রস্তুতি চলছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমীন জানিয়েছেন, শুক্রবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরপরই ফলাফল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। শনিবার বিকেলে ফলাফল প্রকাশ নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রোববার ফলাফল প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে যদি সেদিন ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব না হয়, তাহলে তা সোমবার প্রকাশিত হতে পারে।

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ

ফলাফল কীভাবে প্রকাশিত হবে—সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নাকি সরাসরি শিক্ষার্থীদের জানানো হবে—এ বিষয়ে সভার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে বলে অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমীন উল্লেখ করেন।

এ বছর কোটাসহ মোট আসন সংখ্যা ৫ হাজার ৩৮০টি। সেই হিসেবে একটি আসনের জন্য লড়াই করেছেন প্রায় ২৫ জন পরীক্ষার্থী। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একই আসনের বিপরীতে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪ হাজার ৪৪ জন, যেখানে প্রতিটি আসনের জন্য লড়াই করেছিলেন প্রায় ১৯ জন। ফলে এ বছর আসনপ্রতি প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা আরও ৬ জন বেড়েছে।

বর্তমানে দেশে ১১০টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি এবং ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ। এছাড়া একটি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও পাঁচটি বেসরকারি আর্মি মেডিকেল কলেজ রয়েছে।

সরকারি মেডিকেল কলেজে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়া যায়। সাধারণত তালিকার শীর্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ পান।

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল জানার পদ্ধতি

মেডিকেলে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা সহজেই তা জানতে পারবেন। পরীক্ষার ফলাফল জানতে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ওয়েবসাইট হলো https://result.dghs.gov.bd/mbbs। এছাড়াও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট https://dgme.portal.gov.bd/ থেকে ফলাফল বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।

ফলাফল প্রকাশের পাশাপাশি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে। আবেদন করার সময় যে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে, সেই নম্বরেই ফলাফল প্রেরণ করা হবে।

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি ও নম্বর বিভাজন

লিখিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী। পরীক্ষা এক ঘণ্টার মধ্যে শেষ করতে হয় এবং এতে মোট ১০০টি বহুনির্বাচনী (MCQ) প্রশ্ন থাকে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১, অর্থাৎ মোট নম্বর ১০০।

বিষয়ভিত্তিক নম্বর বিভাজন

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার পাস নম্বর

এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০। ৪০ নম্বরের কম পেলে শিক্ষার্থীরা অকৃতকার্য হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং দেশে বা বিদেশে এমবিবিএস বা সমমানের কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন না।

মাইগ্রেশনের জন্য শিক্ষার্থীরা তিনবার সুযোগ পাবেন।

লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মেধাক্রমসহ ফলাফল প্রকাশ করা হবে। শিক্ষার্থীরা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মেধাতালিকা দেখতে পারবেন এবং মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমেও তা জানতে পারবেন।

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণ

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন আগামীকাল মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) থেকে শুরু হবে। শিক্ষার্থীরা টেলিটক প্রিপেইড মোবাইল ব্যবহার করে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের জন্য ১ হাজার টাকা (অফেরতযোগ্য) ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। গত রোববার (১৯ জানুয়ারি) এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

পুনঃনিরীক্ষণ আবেদনের সময়সীমা ও প্রক্রিয়া

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২১ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন গ্রহণ করা হবে। ফি পরিশোধের পর শিক্ষার্থীরা আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেন। আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে নির্ধারিত সময়ে পুনর্নিরীক্ষণের ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে এই ফলাফল চূড়ান্ত এবং এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের গঠিত কমিটির সিদ্ধান্তই সর্বশেষ বলে গণ্য হবে।

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফল পুনর্নিরীক্ষণের পদ্ধতি

পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে টেলিটকের প্রিপেইড মোবাইল থেকে এসএমএস করতে হবে।

DGME RSC Roll No লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। (উদাহরণ: DGME RSC 1116000)। ফিরতি মেসেজে একটি পিন নম্বর দেওয়া হবে।

ফি প্রদানের জন্য প্রাপ্ত পিন নম্বর ব্যবহার করে এসএমএস করতে হবে DGME RSCYESPIN এবং পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। (উদাহরণ: DGME RSCYES 12345678)। সফল ফি জমার পর ফিরতি মেসেজে একটি প্রাপ্তি স্বীকার বার্তা পাওয়া যাবে।

ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ও পরবর্তী পদক্ষেপ

গত ১৭ জানুয়ারি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমএন্ডডিসি) নীতিমালা অনুযায়ী অর্জিত স্কোরের ভিত্তিতে মেধাক্রম ও পছন্দ অনুসারে ৫ হাজার ৩৭২ জন পরীক্ষার্থীকে দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।

আবেদনকারীদের যথাযথ নির্দেশনা মেনে নির্ধারিত সময়ে আবেদন সম্পন্ন করার অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার কৌশল

বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হলো মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেন, কিন্তু সফলতার মুখ দেখে মাত্র অল্প কিছুজন। সঠিক প্রস্তুতি ও নিয়মিত অধ্যবসায় থাকলে এ পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জন সম্ভব। নিচে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্য পেতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী টিপস তুলে ধরা হলো:

সিলেবাসের পূর্ণাঙ্গ ধারণা ও পরিকল্পিত অধ্যয়ন

মেডিকেল পরীক্ষার প্রস্তুতির প্রথম ধাপ হলো সিলেবাস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেওয়া। বিশেষ করে বায়োলজি, কেমিস্ট্রি, ফিজিক্স ও জেনারেল নলেজ বিষয়ের অধ্যায়গুলো গুরুত্ব অনুযায়ী ভাগ করে একটি সময়সূচি তৈরি করুন এবং প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে অধ্যয়ন করুন। নিয়মিত রিভিশন রাখতে হবে প্রস্তুতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে।

বেসিক মজবুত হলে সফলতা সহজ

SSC ও HSC স্তরের NCTB বোর্ড বই থেকেই অধিকাংশ প্রশ্ন আসে। তাই এই বইগুলোর প্রতিটি অধ্যায়ের মূল বিষয় ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। শুধু মুখস্থ না করে কনসেপ্ট পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন।

নিয়মিত MCQ অনুশীলন

প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক MCQ অনুশীলন করুন। বায়োলজি ও কেমিস্ট্রিতে বেশি প্রশ্ন আসে, তাই এগুলোতে বিশেষ মনোযোগ দিন। পাশাপাশি বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সমাধান করে প্রশ্নের ধরণ সম্পর্কে ধারণা নিন।

সময় ব্যবস্থাপনা ও মক টেস্ট

সঠিক সময় ব্যবস্থাপনার অভ্যাস গড়তে সাপ্তাহিক মক টেস্ট দিন। এতে করে আপনি নিজেকে যাচাই করতে পারবেন এবং আসল পরীক্ষার সময় চাপে পড়ার সম্ভাবনা কমবে।

ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ

প্রতিটি ভুল প্রশ্ন নোট করে রাখুন এবং পরবর্তীতে তা পুনরায় অধ্যয়ন করুন। এতে করে আপনি সেই ভুল দ্বিতীয়বার করবেন না এবং দুর্বল বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে পারবেন।

চাপ মুক্ত ও আত্মবিশ্বাসী থাকা

পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি মানসিকভাবে সুস্থ থাকা জরুরি। পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং মাঝে মাঝে বিশ্রাম আপনার মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করবে। আত্মবিশ্বাস হারাবেন না, বরং নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন।

অনলাইন রিসোর্সের সঠিক ব্যবহার

বিশ্বস্ত গাইড বই ও কোচিং হতে পারে ভালো প্রস্তুতির সহায়ক। বর্তমানে অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম (যেমন: 10 Minute School, YouTube) রয়েছে, যেগুলো থেকে সঠিক ও মানসম্পন্ন প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব।

পরিকল্পিত প্রস্তুতি, অধ্যবসায়, নিয়মিত অনুশীলন এবং আত্মবিশ্বাস—এই চারটি বিষয় সঠিকভাবে মেনে চললে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সফলতা অর্জন অতি সহজ। প্রতিদিনের ছোট ছোট প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত বড় ফল বয়ে আনতে পারে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *