২০২৫ সালের পবিত্র শবে বরাত রমজান মাস ও ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইব্রাহিম আল জারওয়ান ইতোমধ্যে জানিয়েছেন।
রমজান
আমিরাত জ্যোতির্বিদ্যা সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী আল জারওয়ান বলেছেন, আগামী ১ মার্চ থেকে রমজান মাস শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ আর মাত্র সাত সপ্তাহ পর শুরু হবে মুসলিমদের জন্য বিশেষ ইবাদতের মাস।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রমজান মাসের শুরুর তারিখ নির্ধারণে চাঁদ দেখার প্রথা অনুসরণ করা হয়। কেউ কেউ খালি চোখে চাঁদ দেখেন, আবার আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে সঠিক তারিখ নির্ধারণ করেন। কিছু দেশ অবশ্য ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আগে থেকেই দিনক্ষণ নির্ধারণ করে রাখে।
রমজান মাস আরবি ক্যালেন্ডারের নবম মাস, যা মুসলিমদের জন্য বিশেষভাবে পবিত্র। এই মাসে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থেকে রোজা পালন করেন মুসলিমরা। পাশাপাশি নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত এবং দান-সদকার মাধ্যমে দিনগুলো অতিবাহিত করেন।
ঈদের সম্ভাব্য তারিখ
জ্যোতির্বিদদের হিসাব অনুযায়ী, এবার রমজান মাস ২৯ দিনে শেষ হলে মধ্যপ্রাচ্যে ঈদুল ফিতর পালিত হবে ৩০ মার্চ। আর যদি রমজান মাস ৩০ দিনের হয়, তবে ঈদ উদযাপন হবে ৩১ মার্চ।
শব-ই-বরাত
শব-ই-বরাত এর সম্ভাব্য তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি রোজ শনিবার।
তবে, চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে এই তারিখগুলো পরিবর্তিত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
ইসলামে ইবাদত ও আনন্দ উদযাপনের দিকনির্দেশনা
ইসলাম মানুষের স্বাভাবিক চাহিদা ও আচরণকে অবজ্ঞা করেনি, বরং সেগুলোকে সঠিক পথে পরিচালিত করার নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পরকালীন জীবনের শান্তি ও স্থায়ী সুখের জন্য ইবাদতের বিধান নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, বছরে এক মাস রমজানে রোজা রাখা, সামর্থ্যবানদের জন্য হজ পালন, এবং জাকাত আদায়ের বাধ্যবাধকতা।
ইবাদতের প্রতি মানুষকে উৎসাহী করে তুলতে ইসলাম বিশেষ বিশেষ দিনে ইবাদতের ফজিলত বর্ণনা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, শবে কদর, শবে বরাত এবং আশুরার দিনের মতো বিশেষ দিনে নফল ইবাদতের ফজিলত নিয়ে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। এই দিনগুলোতে ইবাদত করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায় বলে মুসলিমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তা পালন করেন।
ইসলামে ইবাদতের পাশাপাশি আনন্দ-উৎসব উদযাপনের দিকেও বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। ইসলামের নির্দেশিত পথে উদযাপনের জন্য নির্ধারিত রয়েছে বছরে দুটি ঈদ—ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা। ঈদ শুধু আনন্দ উদযাপনের দিন নয়, বরং এটি সামাজিক সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উপলক্ষ।
এ বিষয়ে একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর দেখলেন, মদিনার লোকেরা বছরে দুইটি নির্দিষ্ট দিনে উৎসব পালন করে। এই উৎসবে তারা গান-বাজনা এবং ঢোল-তবলা বাজিয়ে আনন্দ করত। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, এই দুই দিনে তোমরা কী উপলক্ষে উৎসব করো?
তারা উত্তর দিল, জাহেলিয়াতের যুগে এই দুটি দিন আমরা খেলাধুলা এবং আনন্দ-ফুর্তি করে কাটাতাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন

‘আল্লাহ তায়ালা এই দুই দিনের পরিবর্তে তোমাদের জন্য এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন নির্ধারণ করেছেন—একটি হলো ঈদুল ফিতর এবং অন্যটি ঈদুল আজহা।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১১৩৪)।
ইসলামিক দৃষ্টিকোণে, আনন্দ উদযাপন এবং ইবাদত একে অপরের পরিপূরক। ঈদ যেমন ইবাদতের ফলস্বরূপ আনন্দের দিন, তেমনি এটি সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোরও একটি সুযোগ। ইসলামের এই ভারসাম্যপূর্ণ বিধান মুসলিমদের জীবনে ইবাদত ও আনন্দের এক অনন্য সমন্বয় সৃষ্টি করে।
ঈদের দিনের সুন্নত সমুহ
- অন্যদিনের তুলনায় সকালে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া।
- মিসওয়াক করা।
- গোসল করা।
- শরীয়তসম্মত সাজসজ্জা করা।
- সামর্থ অনুপাতে উত্তম পোশাক পরিধান করা।
- সুগন্ধি ব্যবহার করা।
- ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার আগে মিষ্টি জাতীয় যেমন খেজুর ইত্যাদি খাওয়া।
- সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া।
- ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা।
- ঈদের নামাজ ঈদগাহে আদায় করা, বিনা অপরাগতায় মসজিদে আদায় না করা।
- যে রাস্তায় ঈদগাহে যাবে, সম্ভব হলে ফেরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা।
- পায়ে হেঁটে যাওয়া।
- ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার সময় আস্তে আস্তে তাকবীর পড়তে থাকা।
ধন্যবাদ সুখবর দেওয়ার জন্য আপ্নাদের………জাযাকাল্লাহ