মুম্বাই পুলিশ সাইফ আলি খানের ওপর হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে। এক প্রেস কনফারেন্সে ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ দীক্ষিত গেডাম জানিয়েছেন, অভিযুক্তের কাছে কোনো বৈধ নথিপত্র পাওয়া যায়নি, যা ইঙ্গিত করে যে তিনি সম্ভবত বাংলাদেশের নাগরিক। এনডিটিভির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
হামলাকারীর পরিচয়
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্তের নাম মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম শাহজাদ। ডেপুটি কমিশনার বলেন,
“তদন্তে প্রমাণ মিলেছে যে অভিযুক্ত বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারেন। তার কাছে কোনো ভারতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি। আমরা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও তদন্ত করছি এবং পাসপোর্ট আইনের আওতায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
তদন্তে যা জানা গেলো
পুলিশ আরও জানায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিনেতার বাড়িতে চুরির উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেন। তদন্তে উঠে এসেছে যে তিনি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছেন এবং বিজয় দাস নাম ব্যবহার করছিলেন। মুম্বাইয়ে তিনি প্রায় চার মাস ধরে একটি হাউজকিপিং এজেন্সিতে কাজ করছিলেন।
ডেপুটি কমিশনার জানান,
“আমরা তার কাছ থেকে কিছু সামগ্রী উদ্ধার করেছি, যা ইঙ্গিত দেয় যে তিনি বাংলাদেশি নাগরিক। তিনি বিজয় দাসসহ বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।”
রবিবার ভোরে মুম্বাই পুলিশের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মহারাষ্ট্রের থানে ওয়েস্ট এলাকা থেকে সাইফ আলি খান হামলার প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশের তথ্যমতে, অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিনেতার বাড়ির পেছনের ফায়ার এক্সিট দিয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় সাইফ আলি খানের গৃহপরিচারিকা তাকে দেখতে পেয়ে চিৎকার করলে অভিযুক্ত ব্যক্তি তাকে আক্রমণ করেন।
পরে সাইফ আলি খান নিজে তাকে থামাতে গেলে ছয়বার ছুরিকাঘাতের শিকার হন। হামলাকারী পালিয়ে যাওয়ার পরপরই সাইফ আলি খানকে লীলাবতী হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন।
সেই রাতে যা ঘটেছিল সাইফ আলি খানের বাড়িতে
বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খান ও তার স্ত্রী কারিনা কাপুরের দুই সন্তানের দেখভাল করেন লিমা। এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চার বছর ধরে তিনি এই দায়িত্ব পালন করছেন।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে লিমা সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন এবং হামলাকারীকে শনাক্ত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন।
লিমা জানান, হামলাকারীকে আবার দেখলে তিনি অবশ্যই চিনতে পারবেন।
গত বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, রাত ২টার দিকে মুম্বাইয়ের বান্দ্রার বিলাসবহুল বাড়িতে ঢুকে সাইফ আলি খানকে ছয়বার ছুরিকাঘাত করে এক দুর্বৃত্ত।
লিমার বর্ণনায় জানা যায়, হামলাকারীর প্রধান টার্গেট ছিলেন সাইফ ও কারিনার ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর, যাকে অপহরণ করে এক কোটি রুপি আদায়ের পরিকল্পনা ছিল।
লিমা জানান, সেদিন রাত ২টার দিকে হামলাকারী বাড়ির বাইরের পাইপ বেয়ে ফ্ল্যাটে ঢোকে। সেই সময় তৈমুর ও জাহাঙ্গীর তাদের রুমে ঘুমিয়ে ছিল। তবে সন্দেহজনক শব্দ শুনে জেগে ওঠেন লিমা।
লিমা বলেন,
“শেষবার যখন আমি জেহর ঘরের দিকে তাকাই, তখন দেখি বাথরুমের দরজা খোলা এবং আলো জ্বলছে। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম কারিনা কাপুর ছোট ছেলেকে দেখতে এসেছেন। তাই আমি পাশের ঘরে ঘুমাতে যাই। কিন্তু হঠাৎ সন্দেহজনক শব্দ শুনে আবার জেগে উঠি এবং দেখি একজন লোক বাথরুম থেকে বের হয়ে জেহর ঘরে ঢুকছে।”
হামলাকারীর মুখোমুখি হলে তিনি হাতের ইশারায় লিমাকে চুপ থাকার নির্দেশ দেন। লিমা তখন ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর দ্রুত কোলে তুলে নেন এবং চিৎকার করে পরিবারের অন্য সদস্যদের সতর্ক করেন।
এতে হামলাকারী প্রথমে লিমাকে আক্রমণ করে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ডান হাতের কব্জিতে আঘাত করার পর কাঠের লাঠি দিয়ে মারধর করে।
এই সময় চিৎকারে জেগে ওঠে ছোট ছেলে জেহ এবং কান্না করতে থাকেন। তার কান্নার শব্দে পাশের ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসেন সাইফ আলি খান। পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষিত রাখতে দ্রুত দুই সন্তানকে সরিয়ে নেন তিনি। পরিচারিকাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন সাইফ।
হামলাকারীর সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে সাইফ ছুরিকাঘাতের শিকার হন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে ছয়বার আঘাত করা হয়। ঘটনার সময় রাত ২টার দিকে পরিবারের সদস্যরা পুলিশের কাছে খবর দেন। দুর্বৃত্তকে আটকানোর চেষ্টা করা হলেও সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
এই হামলার ঘটনা গোটা দেশকে নাড়া দিয়েছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। বিরোধীদলীয় নেতারা এবং চলচ্চিত্র জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মহারাষ্ট্রের দেবেন্দ্র ফড়নবিস সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, যদি একজন হাই-প্রোফাইল অভিনেতা এমনভাবে আক্রান্ত হতে পারেন, তবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?