বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ১১৮তম ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকার জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এই লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার অফিসের স্থানীয় সরকার বিভাগ ঢাকা – এর জনাব শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী এর সভাপতিত্বে এই ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
প্রাইজ বন্ড ড্র’র নীতিমালা
একক সাধারণ পদ্ধতিতে অর্থাৎ প্রতিটি সিরিজের জন্য একই নম্বর এর জন্য এই ড্র পরিচালিত হয়। বর্তমানে প্রচলন যোগ্য একশত টাকা মূল্য মানের ৮১ টি সিরিজ এই ড্র এর অন্তর্ভুক্ত। ৮১টি সিরিজ থেকে ৪৬ টি সাধারণ সংখ্যা পুরস্কারের যোগ্য বলে ঘোষিত হয়।
যেমন – প্রাইজবন্ডের যে সংখ্যা প্রথম পুরস্কারের জন্য ঘোষিত হয়েছে , সেই সংখ্যার প্রাইজ বন্ড প্রতিটি সিরিজের প্রথম পুরস্কারের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। ঠিক একইভাবে দ্বিতীয়,তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম পুরস্কারের জন্য ঘোষিত সংখ্যাও তাদের মান অনুযায়ী প্রতিটি সিরিজের ক্ষেত্রে পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য।
ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার নির্ধারিত তারিখ থেকে দুই মাস পূর্বে যে সমস্ত প্রাইজবন্ড বিক্রি হয়েছে সেইগুলি এই ড্রয়ের আওতায় আসবে।
ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার দুই মাসের মধ্যে যে প্রাইজবন্ডগুলো বিক্রি হবে, সেগুলো এই ড্র এর আওতাভুক্ত হবে না।
আয়কর আইন ২০২৩ এর ১১৮ ধারার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাইজবন্ড পুরস্কার এর প্রাপ্ত অর্থ থেকে ২০% হারে কর কর্তন করে রাখা হবে।
বর্তমানে প্রচলনযোগ্য ১০০/- (একশত) টাকা মূল্যমানের ৮১ (একাশি)টি সিরিজ যথা-
- কক, কখ, কগ, কঘ, কঙ, কচ, কছ, কজ, কঝ, কঞ
- কট, কঠ, কড, কঢ, কথ, কদ, কন, কপ, কফ, কব
- কম, কল, কশ, কষ, কস, কহ, খক, খখ, খগ, খঘ
- খঙ, খচ, খছ, খজ, খঝ, খঞ, খট, খঠ, খড, খঢ
- খথ, খদ, খন, খপ, খফ, খব, খম, খল, খশ, খষ
- খস, খহ, গক, গখ, গগ, গঘ, গঙ, গচ, গছ, গজ
- গঝ, গঞ, গট, গঠ, গড, গঢ, গথ, গদ, গন, গফ
- গব, গম, গল, গশ, গষ, গপ, গস, গহ, ঘক ,ঘখ, ঘগ
উপরের সিরিজ গুলো এই ‘ড্র’-এর আওতাভুক্ত।
১০০/- (একশত) টাকা মূল্যমান বাংলাদেশ প্রাইজবন্ডসমূহের বিভন্ন পুরস্কারের বিস্তারিত বিবরণ নিচে দেওয়া হল:-
৮১ টি | টাঃ ৬,০০,০০০ মানের পুরস্কার | প্রতি সিরিজের জন্য ১ টি |
৮১ টি | টাঃ ৩,২৫,০০০ মানের পুরস্কার | প্রতি সিরিজের জন্য ১ টি |
১৬২ টি | টাঃ ১,০০,০০০ মানের পুরস্কার | প্রতি সিরিজের জন্য ২ টি |
১৬২ টি | টাঃ ৫০,০০০ মানের পুরস্কার | প্রতি সিরিজের জন্য ২ টি |
৩২৪০ টি | টাঃ ১০,০০০ মানের পুরস্কার | প্রতি সিরিজের জন্য ৪০ টি |
সর্বমোট ৩,৭২৬ (তিন হাজার সাতশত ছাব্বিশ)টি পুরস্কার ,প্রতি সিরিজের জন্য ৪৬ (ছেচল্লিশ)টি।
১১৮ তম প্রাইজ বন্ড ড্র’র ফলাফল
এই ‘ড্র’-তে ০০০০০০১ হইতে ১০,০০,০০০ ক্রম সংখ্যার অন্তর্ভুক্ত প্রাইজবন্ডসমূহ হইতে নিচের ৪৬টি সাধারণ সংখ্যা পুরস্কারের জন্য ঘোষিত হইয়াছে:-
- ১ম পুরস্কার
টাঃ ৬,০০,০০০/= | ০৬০৩৯০৮ |
- ২য় পুরস্কার
টাঃ ৩,২৫,০০০/= | ০৮২৯৩২০ |
- ৩য় পুরস্কার: মোট ২ টি
টাঃ ১,০০,০০০/= | ০১৬৭৭১৯ |
টাঃ ১,০০,০০০/= | ০৩৩৪৬৭০ |
- ৪র্থ পুরস্কার: মোট ২ টি
টাঃ ৫০,০০০/= | ০২০৩৬০৭ |
টাঃ ৫০,০০০/= | ০২১৯১৮৫ |
- ৫ম পুরস্কার: মোট ৪০টি
প্রতিটি ১০,০০০/= টাকার
০০১২৪৭০ | ০২০৮৬৩৯ | ০৩৮৪৪৬৫ | ০৬০৬১১৮ | ০৭২২৩৪৮ |
০০১৭০৬০ | ০২৩৮৫২২ | ০৪৩৩২৯৩ | ০৬০৬৮৭৭ | ০৭৪৪৮০২ |
০০২৩২১২ | ০২৪৩৫০৪ | ০৪৬৬১২৬ | ০৬৫১৫৫২ | ০৭৪৭৮৬৩ |
০০৫৩৩৭৪ | ০২৫৩২০১ | ০৫১৬০০৩ | ০৬৫৫৯৯০ | ০৭৮৭৪৮৯ |
০০৬৭৯২৯ | ০২৭৫৬৩৮ | ০৫২২২৭৯ | ০৬৬৩০৭৫ | ০৮১৫৬২৩ |
০০৯৫২৮৬ | ০৩৩৬৯১৭ | ০৫৩৭৬০৪ | ০৬৮০০৪১ | ০৮৬০৮০১ |
০১০৪৪০৯ | ০৩৪৭০০৩ | ০৫৭৬২৬২ | ০৬৮০৬২১ | ০৯৩২৮৮৭ |
০২০৫০৬০ | ০৩৬৪২০২ | ০৫৮৩৫৪৭ | ০৬৯৩২৫১ | ০৯৩৯৯২৫ |
প্রাইজ বন্ড ড্র’র ফলাফল দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
প্রাইজবন্ড কি?
প্রাইজবন্ড হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর কর্তৃক প্রবর্তিত একটি বিশেষ ধরনের বিনিয়োগ মাধ্যম। এটি এক ধরনের কাগুজে মুদ্রা, যা লটারির মতো মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে লটারি নয়। সাধারণ লটারির ক্ষেত্রে একবার ড্র হওয়ার পর তার কার্যকারিতা শেষ হয়ে যায়, এবং বিজয়ী না হলে বিনিয়োগকারী পুরো অর্থ হারান।
প্রাইজবন্ডের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। একবার ড্র হয়ে গেলেও এটি পরবর্তী ড্রয়ের জন্য বৈধ থাকে। অর্থাৎ, বিনিয়োগকারী চাইলে একই বন্ড দিয়ে একাধিকবার লটারির সুযোগ নিতে পারেন।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো, যদি কেউ পুরস্কার না পান, তবুও তিনি তার মূল টাকা ফেরত নিতে পারবেন। তবে এই বিনিয়োগের বিপরীতে কোনো সুদ বা লভ্যাংশ প্রদান করা হয় না। এটি মূলত সরকারের একটি অর্থসংগ্রহ পদ্ধতি, যার মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পরবর্তীতে তা পরিশোধ করা হয়।
যাদের জন্য উপযুক্ত
প্রাইজবন্ড বিশেষত তাদের জন্য উপযোগী, যাদের হাতে সামান্য সঞ্চয় আছে এবং তা ঝুঁকিমুক্ত রাখতে চান। এই বিনিয়োগে মূলধন হারানোর ভয় নেই, এবং যেকোনো সময় বিনিয়োগ ফেরত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এটি ছোট আকারের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি চমৎকার সুযোগ, কারণ তারা একই সাথে নিরাপদে টাকা সংরক্ষণ করতে পারেন এবং পুরস্কার জেতার সম্ভাবনাও থাকে। তদুপরি, এই বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তি শুধু নিজের স্বার্থই রক্ষা করেন না, বরং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখেন।
প্রাইজবন্ডের উদ্দেশ্য
বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালে প্রাইজবন্ড স্কিম চালু করে, যার মূল লক্ষ্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধি এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা গড়ে তোলা। সরকার জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মাধ্যমে জনগণের ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র সঞ্চয় সংগ্রহ করে এবং প্রাইজবন্ডের মাধ্যমে সেই অর্থ ব্যবহার করে।
এটি একটি কার্যকর অর্থনৈতিক কৌশল, যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ড্র পদ্ধতি
প্রাইজবন্ডের মাধ্যমে পুরস্কার জিতলে টাকা তুলতে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়। এর জন্য প্রয়োজন হয়
- বন্ডের রসিদ
- জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি
- ব্যাংক হিসাবের বিবরণ
- নমিনি তথ্য এবং
- প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার স্বাক্ষর।
প্রতি বছর চারবার—৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই, ও ৩১ অক্টোবর—প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয়। বন্ড কেনার পর দুই মাস পার হলে সেটি ড্রয়ের আওতায় আসে।
ড্রয়ের পর দুই বছরের মধ্যে পুরস্কারের টাকা দাবি করা না হলে, তা সরকারি কোষাগারে জমা হয়ে যায়। ড্রয়ের ফলাফল বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। যদি কেউ পুরস্কার না পান, তবে সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংক কিংবা পোস্ট অফিস থেকে প্রাইজবন্ডের সমমূল্যের টাকা ফেরত নিতে পারেন।
প্রাইজবন্ড একটি ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ ব্যবস্থা, যা সঞ্চয়ের পাশাপাশি পুরস্কার জেতার সুযোগ প্রদান করে। এটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের বিকল্প নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক একটি মাধ্যম। তাই, যারা নিরাপদে সঞ্চয় করতে চান এবং একইসঙ্গে ভাগ্যের পরীক্ষা দিতে চান, তাদের জন্য প্রাইজবন্ড হতে পারে একটি উপযুক্ত পছন্দ।