জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ বছর মেয়াদী এলএলবি কোর্সে ভর্তি


জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ বছর মেয়াদী এলএলবি কোর্সে (National University’s LLB admission) ভর্তি শুরু হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শুধু সাধারণ ডিগ্রি কোর্সেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এখানে আইন, ব্যবসা, সমাজবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন পেশাগত ও প্রফেশনাল কোর্সও পরিচালিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ একটি প্রোগ্রাম হলো ২ বছর মেয়াদী এল.এল.বি (LLB) কোর্স, যা বাংলাদেশের আইন শিক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত।

এল.এল.বি শুধু একটি পেশাগত কোর্স নয়—এটি সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ববোধ গঠনেরও একটি মাধ্যম। যারা আইনজীবী হতে চান, বিচার ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখতে আগ্রহী, অথবা সরকারি চাকরিতে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে চান, তাদের জন্য এই কোর্সটি অত্যন্ত মূল্যবান।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত এল.এল.বি প্রোগ্রামটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয়। এর প্রধান কারণ হলো—এটি তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী এবং সারা দেশের অধিভুক্ত কলেজগুলোর মাধ্যমে সহজলভ্য। শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ জেলা শহর থেকেই মানসম্মত আইন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, যা সময় ও খরচ দুই-ই সাশ্রয় করে।

২ বছর মেয়াদী এলএলবি কোর্স

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ বছর মেয়াদী এলএলবি (LLB Part-1 & Part-2) প্রোগ্রামটি মূলত একটি পেশাগত আইনি শিক্ষা কোর্স, যা শিক্ষার্থীদেরকে বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থা, বিচার পদ্ধতি, প্রশাসনিক কাঠামো, এবং আইন প্রয়োগের বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান প্রদান করে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২ বছর মেয়াদি প্রফেশনাল এল.এল.বি পাস কোর্সে ভর্তির জন্য সম্মান ৩ বছর মেয়াদী ডিগ্রি অথবা ফাজিল অথবা ৪ বছর মেয়াদী অনার্স অথবা সম-মান সম্পন্ন ডিগ্রি থাকতে হবে। শুধুমাত্র এইচ,এস,সি অথবা ডিপ্লোমা করে এই কোর্সে ভর্তি হওয়া যাবেনা।

এলএলবি কোর্সে ভর্তির যোগ্যতা ও শর্তাবলি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি কোর্সে ভর্তি হতে হলে কিছু নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ করতে হয়। এটি এমন একটি প্রফেশনাল কোর্স যেখানে কেবল আইন শেখানো হয় না, বরং একজন দক্ষ আইনজীবী হয়ে উঠার প্রস্তুতিও দেওয়া হয়।

পূর্ববর্তী শিক্ষাগত যোগ্যতা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, আবেদনকারীর অবশ্যই স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। নিম্নলিখিত যোগ্যতাগুলোর যেকোনো একটি থাকলে ভর্তি হওয়া যায়—

বয়সসীমা ও অন্যান্য শর্ত

এই কোর্সে ভর্তি হতে কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই। অর্থাৎ, যোগ্যতা থাকলে যেকোনো বয়সের শিক্ষার্থীই ভর্তি হতে পারবেন। তবে ভর্তি প্রক্রিয়ায় আবেদনকারীর একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, তথ্য, ও প্রমাণপত্র যাচাই করা হয়।

অতিরিক্ত শর্তাবলি:

প্রতিটি অধিভুক্ত কলেজ নিজস্ব আসনসংখ্যা অনুযায়ী ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাই আবেদন করার আগে পছন্দের কলেজের ভর্তি নির্দেশিকা ও আসনসংখ্যা যাচাই করা জরুরি।

ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি কোর্সে ভর্তি প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অনলাইনে পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন। নিচে ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়াটি তুলে ধরা হলো:

অনলাইন আবেদন পদ্ধতি

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

আবেদন ফি ও জমা দেওয়ার নিয়ম

সাধারণত আবেদন ফি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। আবেদন করার পর ফি নির্ধারিত ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে জমা দিতে হয়।

আরও পড়ুন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২ বছর মেয়াদি এল.এল.বি কোর্সের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি

সবশেষে, প্রিন্ট কপিটি নির্বাচিত কলেজে জমা দিতে হয়। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদন যাচাই করে নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে।

কোর্স কাঠামো ও সিলেবাস

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ বছর মেয়াদী এলএলবি কোর্সে মোট দুটি অংশ রয়েছে—LLB Part-I এবং LLB Part-II। প্রতিটি অংশের মেয়াদ এক বছর। এই দুই বছরে শিক্ষার্থীদেরকে বাংলাদেশের বিভিন্ন আইন, সংবিধান, বিচারিক প্রক্রিয়া, এবং আন্তর্জাতিক আইনের ওপর সমন্বিত শিক্ষা দেওয়া হয়।

প্রথম বর্ষের বিষয়সমূহ

আইন শিক্ষার মৌলিক ধারণা ও ভিত্তি গঠন করা হয়। এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো:

প্রথম বর্ষ শেষে শিক্ষার্থীরা মৌলিক আইন, বিচারব্যবস্থা, এবং নাগরিক অধিকারের ভিত্তি সম্পর্কে একটি দৃঢ় ধারণা পেয়ে থাকে।

দ্বিতীয় বর্ষের বিষয়সমূহ

আরও উন্নত ও প্রয়োগমূলক বিষয় শেখে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা , যেমন:

দ্বিতীয় বর্ষের শেষে একটি Final Examination নেওয়া হয় এবং এটি পাস করলে শিক্ষার্থীরা “Bachelor of Laws (LLB Final)” ডিগ্রি অর্জন করেন।

এই কোর্সের বিশেষত্ব হলো—প্রতিটি বিষয় শিক্ষার্থীদের আইনি চিন্তা, যুক্তি ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা বিকাশে সহায়ক। পাশাপাশি, কোর্ট ভিজিট, মুট কোর্ট, এবং আইনি রিসার্চের সুযোগও থাকে যা শিক্ষার্থীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করে।

এলএলবি সম্পন্ন করার পর যারা বার কাউন্সিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, তারা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে অ্যাডভোকেট হিসেবে কাজ করতে পারেন। এরপর তারা আদালতে মামলা পরিচালনা, আইনি পরামর্শ প্রদান, এবং বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *