জেনারেশন জেডের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো জেন-জি। চলতি বছরের আলোচিত ঘটনাগুলোর সূত্র ধরে এই শব্দটি উঠে এসেছে আলোচনার কেন্দ্রে। ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে যাদের জন্ম, তারাই জেন-জি। ২০২৪ সালের হিসেবে জেন-জি প্রজন্মের সবচেয়ে বড় সদস্যের বয়স এখন ২৭, আর সবচেয়ে ছোটজনের বয়স মাত্র ১২।
সাধারণত ২০ থেকে ২৫ বছর সময় ধরে একটি প্রজন্ম গড়ে ওঠে। জেন-জির আগে এসেছে বেবি বুমার্স, জেনারেশন এক্স, মিলেনিয়ালস (জেন ওয়াই) এবং এর পর আসছে জেনারেশন আলফা। ২০১২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত জন্ম নেওয়া শিশুরাই জেনারেশন আলফার অন্তর্ভুক্ত।
তবে বিগত কয়েক বছরের সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জেন-জি যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, তা স্পষ্ট। এই প্রজন্ম তাদের ডিজিটাল দক্ষতা, স্বাধীন চিন্তাভাবনা এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণের কারণে অন্য প্রজন্ম থেকে আলাদা।
ডিজিটাল প্রজন্ম
জেন-জি প্রজন্মকে বলা হয় প্রথম ডিজিটাল নেটিভ প্রজন্ম। প্রযুক্তি এদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। এ কারণে এরা পরিচিত নেটিজেন বা হোমল্যান্ড জেনারেশন হিসেবেও।
জেন-জিরা সাধারণত তাদের ঠিক আগের প্রজন্ম, মিলেনিয়ালসদের সঙ্গে তুলনায় আসে। তবে মিলেনিয়ালসদের তুলনায় তারা অনেক বেশি বাস্তববাদী এবং ক্যারিয়ারমুখী। কোভিড-১৯ মহামারি এ প্রজন্মের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। ঘরবন্দি সময়ে অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে তারা নিজেদের দক্ষতা এবং যোগাযোগের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করেছে।
কিছুদিন আগেও জেন-জিদের সম্পর্কে সমাজে নেতিবাচক মন্তব্য প্রচলিত ছিল—তাদের অধৈর্য, অলস কিংবা প্রযুক্তিতে অতিমাত্রায় আসক্ত হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারাই উঠে এসেছে নেতৃত্বের আসনে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়তার কারণে এই প্রজন্ম সমাজ এবং রাজনীতিতে সচেতন ভূমিকা পালন করছে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই আন্দোলন দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে স্থান পেয়েছে।
এছাড়া, বন্যা কিংবা অন্যান্য দুর্যোগকালীন সময়ে এই প্রজন্ম তাদের প্রযুক্তিজ্ঞান ব্যবহার করে ত্রাণ কার্যক্রম এবং অনলাইন প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
জেন-জির ফ্যাশনে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এই প্রজন্ম আরামদায়ক এবং ইউনিসেক্স পোশাককে প্রাধান্য দেয়। স্কিনি প্যান্টস কিংবা বডিকন পোশাকের বদলে ওভারসাইজড এবং ঢিলেঢালা পোশাক এখন জেন-জিদের প্রিয়।
তারা পুরোনো পোশাক বা শাড়িকে নতুন উপকরণ দিয়ে পুনরায় সাজিয়ে ফ্যাশনে নতুন সংজ্ঞা তৈরি করছে। এই সৃজনশীলতাই তাদের ফ্যাশনকে আলাদা করে তুলেছে।
জেন-জিরা তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলে। দৈনন্দিন কথোপকথনে তারা এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করে, যা পুরোনো প্রজন্মের অনেকেই বুঝতে পারে না। যেমন—ডেলুলু, গোট, পুকি, ব্রেডক্রাম্বিং, ক্যাসপারিং, জোম্বিয়িং প্রভৃতি।
তাদের দ্রুত চিন্তাশক্তি এবং নতুন কিছুকে গ্রহণ করার ক্ষমতা অনেক সময় পুরোনো প্রজন্মের কাছে বোধগম্য নয়। তবে সমালোচনার বদলে এই প্রজন্মের সৃজনশীলতা এবং ভবিষ্যৎমুখী দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।
জেন-জি প্রজন্ম শুধু নিজেদের স্বকীয়তাই তুলে ধরছে না, বরং সমাজে নতুন পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠছে।