শেনজেন ভিসা কী? ভিসা বাতিলের প্রধান কারণসমূহ


শেনজেন ভিসা (Schengen Visa) হলো একটি স্বল্পমেয়াদী ভিসা, যার মাধ্যমে কোনো ভ্রমণকারী ইউরোপের শেনজেন অঞ্চলের ২৭টি দেশের যেকোনো এক বা একাধিক দেশে প্রবেশ, অবস্থান ও ভ্রমণ করতে পারেন। এই ভিসা থাকলে প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা ভিসা নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।

শেনজেন অঞ্চল হলো ইউরোপের এমন একটি মুক্ত ভ্রমণ এলাকা যেখানে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ নেই। অর্থাৎ, আপনি একবার এই অঞ্চলের কোনো একটি দেশে প্রবেশ করলে, বাকি দেশগুলোতেও অনায়াসে যেতে পারবেন — ঠিক যেনো এক দেশের ভেতরেই চলাচল করছেন।

ইউরোপের মোট ২৭টি দেশ শেনজেনর্ভুক্ত

অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রীস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, ইতালি, লাতভিয়া, লিচেনস্টাইন, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন এবং সুইজারল্যান্ড।

ভিসার ধরন

১. শর্ট-স্টে (C টাইপ) – সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত অবস্থানের জন্য ব্যবহৃত হয় (যেমন: ট্যুর, ব্যবসা, বা পরিবারের সদস্যদের দেখা করা)।
২. লং-স্টে (D টাইপ) – ৯০ দিনের বেশি সময় থাকার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয় (যেমন: উচ্চশিক্ষা, চাকরি বা স্থায়ী বসবাস)।

শেনজেন ভিসা ফি

সাধারণভাবে শেনজেন ভিসার ফি নিচের মতো:

শেনজেন ভিসা বাতিলের প্রধান কারণসমূহ

শেনজেনভুক্ত ২৭টি দেশে ভ্রমণের জন্য শেনজেন ভিসা সবচেয়ে জনপ্রিয় স্বল্পমেয়াদি ভিসাগুলোর একটি। প্রতি বছর লাখো মানুষ এই ভিসার জন্য আবেদন করেন, তবে এর একটি বড় অংশই প্রত্যাখ্যাত হয়। শুধুমাত্র ২০১৭ সালেই ১৭ লাখেরও বেশি আবেদন বাতিল হয়েছিল। সাধারণত নিয়মভঙ্গ, ভুল তথ্য প্রদান বা অসম্পূর্ণ নথিপত্রই ভিসা বাতিলের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আরও পড়ুন: কম খরচে বিদেশ ভ্রমণের জন্য ১০ টি দেশ

নিচে শেনজেন ভিসা বাতিলের ১০টি সাধারণ কারণ ও সফল আবেদন নিশ্চিত করার উপায় তুলে ধরা হলো—

১. জাল বা নকল নথি জমা

ভুয়া পাসপোর্ট, মিথ্যা ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা জাল চাকরির চিঠি জমা দিলে আবেদন সরাসরি বাতিল হয়।
এড়ানোর উপায়: শুধুমাত্র যাচাইযোগ্য ও অফিসিয়াল নথিপত্র জমা দিন। কোনো তথ্য নিয়ে সন্দেহ থাকলে সত্যতা ব্যাখ্যা করুন।

২. ভ্রমণের উদ্দেশ্য অস্পষ্ট

শুধু ‘ট্যুরিজম’ বা ‘বিজনেস’ লেখা যথেষ্ট নয়; ভ্রমণের বিস্তারিত উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয়।
এড়ানোর উপায়: বিস্তারিত ট্রাভেল প্ল্যান, হোটেল বুকিং ও পূর্ণ ভ্রমণসূচি সংযুক্ত করুন।

৩. আর্থিক সক্ষমতা অপর্যাপ্ত

ব্যাংকে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা বা আয়ে অসঙ্গতি দেখা দিলে আবেদন সন্দেহজনক হয়ে পড়ে।
এড়ানোর উপায়: নিয়মিত আয় ও পর্যাপ্ত সঞ্চয়ের প্রমাণ দিন; অন্তত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও চাকরির কাগজপত্র সংযুক্ত করুন।

৪. মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থান

৯০ দিনের বেশি অবস্থান করলে ভবিষ্যতে ভিসা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারেন।
এড়ানোর উপায়: Schengen Stay Calculator ব্যবহার করে সফরের মেয়াদ সঠিকভাবে পরিকল্পনা করুন।

৫. এসআইএস (SIS) ডাটাবেজে নাম থাকা

আগে ভিসা নিয়ম লঙ্ঘন করলে বা বহিষ্কৃত হলে আপনার নাম SIS ডাটাবেজে থাকতে পারে, যা আবেদন বাতিলের কারণ হয়।
এড়ানোর উপায়: পুরোনো অভিবাসন-সংক্রান্ত সমস্যাগুলো আগে সমাধান করুন।

৬. জননিরাপত্তা বা স্বাস্থ্য ঝুঁকি

অপরাধমূলক রেকর্ড বা সংক্রামক রোগ থাকলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
এড়ানোর উপায়: পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সনদ জমা দিন।

৭. বৈধ স্বাস্থ্যবীমার অভাব

৩০,০০০ ইউরো (প্রায় ৩০ লাখ টাকার বেশি) কভারেজসহ স্বাস্থ্যবীমা বাধ্যতামূলক।
এড়ানোর উপায়: ভিসা আবেদন করার আগে বৈধ ও পর্যাপ্ত কভারেজসহ বীমা নিশ্চিত করুন।

৮. ভুল বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য

একই বিষয়ের ভিন্ন তথ্য থাকলে আবেদন সন্দেহজনক মনে হয় এবং বাতিল হয়।
এড়ানোর উপায়: ফর্ম ও নথির প্রতিটি তথ্য ভালোভাবে যাচাই করে জমা দিন।

৯. দেশে ফেরার প্রমাণের অভাব

নিজ দেশের সঙ্গে সম্পর্ক দুর্বল মনে হলে কর্তৃপক্ষ ফেরত না আসার আশঙ্কা করে।
এড়ানোর উপায়: চাকরি, পরিবার, সম্পত্তি বা ব্যবসার প্রমাণপত্র সংযুক্ত করুন।

১০. জরুরি ভিসার যথেষ্ট কারণ না দেখানো

জরুরি বা মানবিক ভিসার জন্য যথাযথ কারণ ও প্রমাণ না থাকলে আবেদন বাতিল হয়।
এড়ানোর উপায়: চিকিৎসা, ব্যবসা বা মানবিক প্রয়োজনে সুনির্দিষ্ট প্রমাণপত্রসহ আবেদন জমা দিন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *