টিন সার্টিফিকেট ‘TIN Certificate’ বাতিল করার নিয়ম ও প্রক্রিয়া

এখন থেকে করদাতারা চাইলে তাদের টিন সার্টিফিকেট ‘TIN Certificate’ বাতিলের সুযোগ পাবেন। নতুন আয়কর আইনে নির্দিষ্ট কিছু শর্তসাপেক্ষে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাতিলের বিধান রাখা হয়েছে। এজন্য করদাতাকে সঠিক কারণ উল্লেখ করে আবেদন করতে হবে।

তবে দীর্ঘ যাচাই-বাছাই শেষে নিশ্চিত হতে হবে যে আবেদনকারীর কোনো বকেয়া কর নেই। পাশাপাশি প্রদত্ত কারণগুলো যৌক্তিক প্রমাণিত হলে তবেই কর কর্মকর্তারা টিআইএন বাতিল করবেন। পূর্বের আয়কর অধ্যাদেশে এ ধরনের সুযোগ না থাকায় অনেক করদাতা টিআইএন নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন।

যে ছয়টি ক্ষেত্রে কর নিবন্ধন বাতিলের আবেদন করা যাবে, সেগুলো হলো—

  • যেসব করদাতার রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা নেই;
  • মৃত্যু, অবসায়ন, অবলুপ্তি বা অনুরূপ কারণে অস্তিত্বহীন হয়ে গেলে;
  • স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ত্যাগ করে দেশে আয়-সংশ্লিষ্ট কোনো কার্যক্রম না থাকলে;
  • ডুপ্লিকেট বা ভুল নিবন্ধন হলে;
  • আইনি মর্যাদার পরিবর্তন ঘটলে এবং
  • অন্য কোনো আইনগত কারণে টিআইএন নিবন্ধন বাতিলের প্রয়োজন হলে।

যারা টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে পারবেন

যদি কোনো করদাতার আয় আয়করযোগ্য সীমার নিচে থাকে, তবে তিনি টিআইএন (TIN Certificate) বাতিলের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ন্যূনতম করযোগ্য আয়ের সীমা নির্ধারিত হয়েছে— সাধারণ করদাতার ক্ষেত্রে বছরে আয় তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশি হলে, মহিলা ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী করদাতার ক্ষেত্রে চার লাখ টাকার বেশি হলে, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের জন্য বছরে আয় চার লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকার বেশি হলে এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ টাকার বেশি হলে।

অনেক সময় করদাতার বার্ষিক আয় এই সীমার নিচে থাকলেও বিভিন্ন প্রয়োজনে টিআইএন সার্টিফিকেট নিতে হতে পারে। পরবর্তীতে আর প্রয়োজন না হলে সেটি বাতিলের আবেদন করা সম্ভব।

কোনো করদাতা অতীতে আয়ের ভিত্তিতে টিআইএন গ্রহণ করলেও পরবর্তীতে আয় কমে করযোগ্য সীমার বাইরে চলে গেলে টিআইএন সার্টিফিকেট বাতিল করতে পারবেন।

এছাড়া, করদাতা মৃত্যুবরণ করলে তার টিন সার্টিফিকেটের আর প্রয়োজন থাকে না। এ অবস্থায় উত্তরাধিকারীদের দায়িত্ব হলো টিআইএন বাতিলের আবেদন করা। তবে মৃত ব্যক্তির কোনো ব্যবসা থাকলে, যার সঙ্গে টিআইএন যুক্ত, সেটি বাতিল করলে ব্যবসার সব নথি পুনরায় করতে হতে পারে। এমন জটিলতা তৈরি হলে উত্তরাধিকারীরা বাবার টিআইএন বাতিল করতে পারবেন না।

যদি কোনো বাংলাদেশি কর্মসূত্রে বিদেশে অবস্থান করেন এবং দেশে তার কোনো করযোগ্য আয় না থাকে, তাহলে তিনি বাংলাদেশে নিবন্ধিত টিআইএন সার্টিফিকেট বাতিল করতে পারবেন।

একজন ব্যক্তি কেবল একবারই টিআইএন সার্টিফিকেট করতে পারেন। একাধিক টিআইএন অনুমোদিত নয়। নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় কর কর্মকর্তা বা নিবন্ধনকারীর ভুলের কারণে যদি তথ্যভ্রান্তি ঘটে, তবে সংশোধনের জন্য টিআইএন বাতিল করতে হয়।

টিন সার্টিফিকেট (TIN Certificate) বাতিলের নিয়ম

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • আবেদনকারীর বর্তমান টিআইএন সার্টিফিকেটের প্রিন্ট কপি
  • জাতীয় পরিচয়পত্র ও তার একটি কপি
  • পরপর অন্তত তিন অর্থবছরের শূন্য রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকারপত্রের কপি

টিআইএন সার্টিফিকেট বাতিলের আবেদন প্রক্রিয়া

টানা তিন বছর শূন্য রিটার্ন দাখিল:

যেহেতু কমপক্ষে তিন অর্থবছরের শূন্য রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র প্রয়োজন, তাই শুরু থেকেই তিন বছরের প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রতি বছর রিটার্ন জমা দেওয়ার পর যে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পাওয়া যাবে, তা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।

কর সার্কেল অফিসে আবেদন:

তৃতীয় বছরের শূন্য রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়ই আবেদন করতে হবে। সঙ্গে রাখতে হবে আগের দুই বছরের রিটার্ন প্রাপ্তি স্বীকারপত্র। এরপর কর সার্কেলের উপ-কর কমিশনার বরাবর আবেদনপত্র লিখে টিআইএন বাতিলের কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে আবেদন জমা দিতে হবে।

আরও পড়ুন: অনলাইনে শূন্য আয়কর Zero Return জমা দেওয়ার পদ্ধতি

এখানে মনে রাখা জরুরি, আবেদন জমা দেওয়ার জন্য টিআইএন মালিকের নিজে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক নয়। প্রয়োজনে তার প্রতিনিধি আবেদন জমা দিতে পারবেন।

টিআইএন সার্টিফিকেট বাতিলে খরচ

টিআইএন সার্টিফিকেট বাতিলের পুরো প্রক্রিয়ায় সরকারের কোনো ধরনের ফি নেই। অর্থাৎ করদাতারা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে টিআইএন বাতিল করতে পারবেন।

আবেদন পরবর্তী কার্যক্রম

আবেদন জমা দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর সার্কেলের উপ-কর কমিশনারের কার্যালয়ে তা নথিভুক্ত করা হবে। এরপর উল্লেখিত কারণ যাচাই-বাছাই করা হবে। সবকিছু সঠিক পাওয়া গেলে টিআইএন সার্টিফিকেট চূড়ান্তভাবে বাতিল হয়ে যাবে। প্রয়োজনে পরবর্তীতে নতুন টিআইএন সার্টিফিকেট নেওয়া যাবে।

বাংলাদেশের নাগরিকরা প্রয়োজনে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) নিবন্ধন করতে পারেন, আবার প্রয়োজনে এটি বাতিলও করতে পারবেন। নির্ধারিত শর্ত ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সহজেই টিআইএন সার্টিফিকেট বাতিলের আবেদন সম্পন্ন করা সম্ভব। উপরোক্ত আলোচনায় টিআইএন সার্টিফিকেট বাতিলের ধাপগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

Leave a Comment