এমআইএসটি (MIST) এ ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি)-এর ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষার জন্য ৩০ ডিসেম্বর সকাল ১১টা থেকে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এ বছরও শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বারের মতো ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে দ্বিতীয়বার অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৫ শতাংশ কেটে নেওয়া হবে। আবেদন গ্রহণ চলবে ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত।আবেদনকারী প্রার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হবে। কেবল মাত্র নির্বাচিতরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।
এমআইএসটি (MIST) এ আবেদনের যোগ্যতা
২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয় ছাড়া ন্যূনতম জিপিএ ৪ (জিপিএ ৫-এর মধ্যে) প্রয়োজন।
২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষে এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও ইংরেজিতে মোট ১৮ পয়েন্ট থাকতে হবে।
গণিত, পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নে ন্যূনতম জিপিএ ৪ থাকতে হবে।
এমআইএসটি (MIST) এর ভর্তি পরীক্ষার সময় ও সিলেবাস
‘এ’ ইউনিট (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আর্কিটেকচার): গণিতে ৯০, পদার্থবিজ্ঞানে ৭০, রসায়নে ৩০ এবং ইংরেজিতে ১০ নম্বর—মোট ২০০ নম্বরের পরীক্ষা।
‘বি’ ইউনিট (আর্কিটেকচার): অঙ্কন এবং আর্কিটেকচার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা।
ইউনিট | সময় |
---|---|
‘এ’ ইউনিট | ৩ ঘণ্টা |
‘বি’ ইউনিট | ২ ঘণ্টা |
উভয় ইউনিটের পরীক্ষার সিলেবাস হবে ২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী।
পরীক্ষায় পাস করতে ন্যূনতম ৪০ শতাংশ নম্বর প্রয়োজন।
আবেদন ফি
- ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিটের আবেদন ফি: ১,০০০ টাকা।
- আর্কিটেকচার ইউনিটের আবেদন ফি: ১,২০০ টাকা।
গুরুত্বপূর্ণ তারিখ
- আবেদন শুরু: ৩০ ডিসেম্বর, সকাল ১১টা।
- আবেদন শেষ: ২০ জানুয়ারি, রাত ১১টা ৫৯ মিনিট।
- নির্বাচিত তালিকা প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি।
- ভর্তি পরীক্ষা: ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।
- ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু: ১৬ মার্চ, ২০২৫ (সম্ভাব্য)।
- ক্লাস শুরু: ৮ জুন, ২০২৫ (সম্ভাব্য)।
আবেদন সংক্রান্ত আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
এমআইএসটি (MIST)
গবেষণা ও শিক্ষায় উৎকর্ষ অর্জনে প্রতিশ্রুতিশীল প্রতিষ্ঠান এমআইএসটি।
ভিশন
বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে উৎকর্ষতার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠা এবং জাতীয় ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গবেষণা পরিচালনা করা।
মিশন
- বিজ্ঞান, প্রকৌশল, প্রযুক্তি এবং প্রকৌশল ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক শিক্ষাদান ও গবেষণা পরিচালনা।
- নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন প্রযুক্তিগত দক্ষ নেতৃবৃন্দ এবং পেশাজীবী তৈরি করা, যা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।
- জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে যৌথ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, যা একাডেমিয়া ও শিল্প খাতের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ নিশ্চিত করবে।
- সরকার, বেসরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর জন্য পরামর্শ, উপদেষ্টা সেবা, পরীক্ষণ এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনা, যা সমাজের টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখবে।
এমআইএসটি (MIST) সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
বাংলাদেশে প্রযুক্তি ও প্রকৌশল শিক্ষায় একটি উজ্জ্বল নাম হলো মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি)। প্রযুক্তি, গবেষণা ও শৃঙ্খলার চমৎকার সমন্বয়ে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে একটি গৌরবময় স্থান অধিকার করে আছে। আধুনিক শিক্ষা কাঠামো, দক্ষ শিক্ষক এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরির মাধ্যমে এমআইএসটি এখন শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি জ্ঞানের কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত।
এমআইএসটি (MIST) প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
১৯ এপ্রিল ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এমআইএসটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯৯ সালে ৪০ জন সামরিক কর্মকর্তার অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে, ২০০৩ সালে বেসামরিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি খুলে দেওয়া হয়, যা ছিল একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বর্তমানে, প্রতিষ্ঠানটির ৮৫% এর বেশি শিক্ষার্থীই বেসামরিক, যা এটিকে একটি Truly inclusive higher education center হিসেবে গড়ে তুলেছে।
শিক্ষার্থী ও একাডেমিক পরিসংখ্যান
বর্তমানে এমআইএসটি-তে রয়েছে প্রায় ২৫০০ জন স্নাতক শিক্ষার্থী, ৬০০ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী এবং ৩৫০ জন অভিজ্ঞ শিক্ষক। উল্লেখযোগ্যভাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত মাত্র ৮:১, যা নিশ্চিত করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রতি ব্যক্তিগত মনোযোগ। এখানকার শিক্ষকগণের মধ্যে ১১০ জন ইতোমধ্যে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন এবং ২০ জন পিএইচডি অধ্যয়নে নিযুক্ত রয়েছেন, যা গবেষণায় উৎকর্ষতা অর্জনের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এমআইএসটি (MIST) এর অনুষদ ও বিভাগ
এমআইএসটি-তে রয়েছে ৪টি অনুষদের অধীনে ১২টি প্রকৌশল বিভাগ, যার মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার সায়েন্স, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল, মেকানিক্যাল, নেভাল আর্কিটেকচার ইত্যাদি। প্রতিটি বিভাগই আধুনিক পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে, এবং শিক্ষার্থীরা Outcome Based Education (OBE) পদ্ধতির মাধ্যমে চার বছরের মধ্যে স্নাতক সম্পন্নের নিশ্চয়তা পায়।
প্রত্যয়ন ও প্রোগ্রামের বৈধতা
এমআইএসটির প্রকৌশল প্রোগ্রামসমূহ বাংলাদেশ বোর্ড অব অ্যাক্রেডিটেশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল এডুকেশন (BAETE) কর্তৃক অনুমোদিত, যা এর শিক্ষার মান ও গুণগত মানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির একটি মাপকাঠি।
গবেষণার পরিবেশ ও সুযোগ
প্রযুক্তি ও গবেষণার উৎকর্ষতার জন্য এমআইএসটি-তে রয়েছে ৯৬টি উন্নত প্রকৌশল ল্যাবরেটরি, যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রয়োগমূলক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি গবেষণায় যুক্ত হতে পারে। প্রতিটি গবেষণা প্রকল্প ও থিসিসের জন্য রয়েছে উল্লেখযোগ্য বাজেট বরাদ্দ, যা শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহ জোগায় এবং বাস্তবভিত্তিক সমাধান উদ্ভাবনে সহায়তা করে।
বিদেশি শিক্ষার্থী
এমআইএসটি বিশ্বের বহু নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একাডেমিক সহযোগিতায় যুক্ত। এর পাশাপাশি, প্রতিবেশী ও দূরবর্তী দেশ থেকেও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এখানে উচ্চশিক্ষার জন্য আসছেন, যা এমআইএসটির গ্লোবাল অবস্থানকে শক্তিশালী করে তুলেছে।
জাতীয় উন্নয়নে অবদান
শুধু শিক্ষা ও গবেষণাই নয়, এমআইএসটি বিভিন্ন জাতীয় উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শ ও পরীক্ষণ সেবা প্রদান করে থাকে। এতে দেশের অবকাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি অবদান রেখে চলেছে। ইতোমধ্যে ৪৬১০ জন শিক্ষার্থী এমআইএসটি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে দেশ ও বিদেশে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন।
যে কারণে এমআইএসটি (MIST) আলাদা
বাংলাদেশে প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিক্ষার অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) আজ দেশের উচ্চশিক্ষা খাতে এক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করে নিয়েছে। আধুনিক শিক্ষা, গবেষণা ও সামরিক শৃঙ্খলার অনন্য সমন্বয়ে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সেরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা
প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার আধুনিক রূপ
১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধীনে প্রতিষ্ঠিত এমআইএসটি মূলত একটি সামরিক-নিয়ন্ত্রিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও এটি সামরিক ও বেসামরিক ছাত্রদের জন্য উন্মুক্ত। এখানে ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল, মেকানিক্যাল, কম্পিউটার সায়েন্স, নেভাল আর্কিটেকচারসহ নানা বিষয়ের ওপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠদান করা হয়। আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব, আধুনিক শ্রেণিকক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দের সমন্বয়ে শিক্ষার্থীরা পায় একটি যুগোপযোগী শিক্ষা পরিবেশ।
গবেষণা ও উদ্ভাবনে অগ্রণী
এমআইএসটি গবেষণামূলক কাজের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। শিক্ষার্থীদের প্রকল্পভিত্তিক কাজ, রোবটিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), সাইবার সিকিউরিটি এবং বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রকল্প আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সাড়া ফেলেছে। প্রতিবছরই এই প্রতিষ্ঠান থেকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দেশকে গৌরবান্বিত করছে শিক্ষার্থীরা।
সামরিক শৃঙ্খলা ও নৈতিক মূল্যবোধ
এমআইএসটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর সামরিক শৃঙ্খলা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দায়িত্ববোধ, সময়ানুবর্তিতা, নেতৃত্বের গুণাবলি ও দেশপ্রেম গড়ে তুলতে প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত সামরিক ট্রেনিং ও নেতৃত্ব উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনা করে। এটি শিক্ষার্থীদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে সফল হতে সহায়তা করে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও অংশীদারিত্ব
বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে এমআইএসটি ক্রমাগত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক র্যাংকিং-এ জায়গা করে নিয়েছে যা বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়।
ভর্তির সুযোগ ও ক্যারিয়ার সম্ভাবনা
প্রতি বছর উচ্চমেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এমআইএসটি-তে ভর্তির সুযোগ পায়। এমআইএসটি থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে দক্ষ প্রকৌশলী ও গবেষক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) শুধুমাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি একটি অনুপ্রেরণার নাম। প্রযুক্তি, শৃঙ্খলা ও দেশসেবার আদর্শ নিয়ে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানটি আগামী প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত করছে — দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।