সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী (২২ জানুয়ারি ২০২৫) বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য ৫৬ টি। ৫৬ তম জিআই পণ্য “ঢাকাই ফুটি কার্পাস তুলার বীজ ও গাছ”। বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যগুলো দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং স্থানীয় পণ্যের বিশেষত্বকে তুলে ধরে।
জিআই পণ্য হলো এমন পণ্য, যা একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের নাম বা পরিচিতি দ্বারা চিহ্নিত হয় এবং সেই এলাকার প্রকৃতি, সংস্কৃতি বা ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বিশেষ বৈশিষ্ট্য বহন করে।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের তালিকা
জিআই পণ্যের নাম | জিআই জার্নাল নং- |
০১: জামদানি শাড়ী | ০১ |
০২: বাংলাদেশ ইলিশ | ০২ |
০৩: চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম | ০৩ |
০৪: বিজয়পুরের সাদা মাটি | ০৪ |
০৫: দিনাজপুর কাটারীভোগ | ০৫ |
০৬: বাংলাদেশ কালিজিরা | ০৬ |
০৭: রংপুরের শতরঞ্জি | ০৭ |
০৮: রাজশাহী সিল্ক | ০৮ |
০৯: ঢাকাই মসলিন | ০৯ |
১০: রাজশাহীর ফজলী আম | ১০ |
১১: বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি | ১১ |
১২: রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম | ১২ |
১৩: শেরপুরের তুলশিমালা ধান | ১৩ |
১৪: বাংলাদেশের শীতল পাটি | ১৪ |
১৫: বগুড়ার দই | ১৫ |
১৬: চাঁপাই নবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম | ১৬ |
১৭: চাঁপাই নবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম | ১৭ |
১৮: নাটোরের কাঁচাগোল্লা | ১৮ |
১৯: বাংলাদেশ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল | ১৯ |
২০: টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম | ২০ |
২১: কুমিল্লার রসমালাই | ২১ |
২২: কুষ্টিয়ার তিলের খাজা | ২২ |
২৩: টাঙ্গাইল শাড়ি | ৩২ |
২৪: নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা | ২৮ |
২৫ রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম | ২৩ |
২৬: মৌলভীবাজারের আগর | ২৪ |
২৭: মৌলভীবাজারের আগর আতর | ২৫ |
২৮: মুক্তাগাছার মণ্ডা | ২৬ |
২৯: গোপালগঞ্জের রসগোল্লা | ৩০ |
৩০: যশোরের খেজুরের গুড় | ২৭ |
৩১: রাজশাহীর মিষ্টি পান | ২৯ |
৩২: জামালপুরের নকশিকাঁথা | ৩৩ |
৩৩: নরসিংদীর লটকন | ৩১ |
৩৪: মধুপুরের আনারস | ৩৪ |
৩৫: ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দই | ৩৫ |
৩৬: মাগুরার হাজরাপুরী লিচু | ৩৭ |
৩৭: সিরাজগঞ্জের গামছা | ৩৯ |
৩৮ সিলেটের মণিপুরি শাড়ি | ৩৬ |
৩৯: মিরপুরের কাতান শাড়ি | ৩৮ |
৪০: ঢাকাই ফুটি কার্পাস তুলা | ৪০ |
৪১: শেরপুরের ছানার পায়েস | ৪১ |
৪২: কুমিল্লার খাদি | ৪২ |
৪৩: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি | ৪৪ |
৪৪: গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গহনা | ৪৫ |
৪৫: সুন্দরবনের মধু | ৪৭ |
৪৬: সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি | ৪৩ |
৪৭: গাজীপুরের কাঁঠাল | ৪৬ |
৪৮: কিশোরগঞ্জের রাতা বোরো ধান | ৪৯ |
৪৯: অষ্টগ্রামের পনির | ৫০ |
৫০: বরিশালের আমড়া | ৪৮ |
৫১: কুমারখালীর বেডশিট | ৫১ |
৫২: দিনাজপুরের বেদানা লিচু | ৫২ |
৫৩: মুন্সীগঞ্জের পাতক্ষীর | ৫৪ |
৫৪: নওগাঁর নাক ফজলি আম | ৫৬ |
৫৫: টাঙ্গাইল মির্জাপুরের জুমর্কির সন্দেশ | ৫৩ |
৫৬: ঢাকাই ফুটি কার্পাস তুলার বীজ ও গাছ | ৫৫ |
উৎস : জিআই জার্নাল
বাংলাদেশের জিআই পণ্য
পৃথিবীর বুকে এমনও কিছু পণ্য রয়েছে যাকেবলমাত্র বাংলাদেশেই পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়।
শুরুতেই জিআই এবং উইপো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। জিআই বা জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন হলো ভৌগোলিক নির্দেশক চিহ্ন । যা কোন পণ্যের একটি নির্দিষ্ট উৎপত্তিস্থলের কারণে এর ক্ষেতি বা গুণাবলী নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়।
কোন একটি দেশের মাটি পানি আবহাওয়া ও ওই জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোন একটি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাহলে সেই পণ্যটি ওই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
অর্থাৎ ওই পণ্য শুধু ঐ এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও উৎপাদন করা সম্ভব নয়। একটি জিআই তে সাধারনত উৎপত্তিস্থল এর নাম , শহর, অঞ্চল বা দেশ অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই জিআই পণ্যের স্বীকৃতিদানকারী প্রতিষ্ঠান হল বিশ্ব মেধা সম্পদ সংস্থা WIPO বা World Intellectual Property Organization.
WIPO জাতিসংঘের ১৫ টি বিশেষায়িত সংস্থার মধ্যে একটি। ১৯৬৭ সালের কনভেনশন অনুসারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় মেধা সম্পদ প্রচার ও সুরক্ষার জন্য একে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন পেটেন্ট,ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর বাংলাদেশের হয়ে মেধা সম্পদ সুরক্ষায় নতুন নতুন উদ্ভাবনের পেটেন্ট ও ডিজাইন স্বত্ব মঞ্জুর করেন, পণ্য ও সেবার ট্রেডমার্ক, ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য নিবন্ধন করে এবং WIPO এর সাথে সম্পর্ক স্থাপনে কাজ করে।
সাবেক পেটেন্ট অফিস এবং ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রি অফিস এই দুইটি একিভূত করে ২০০৩ সালে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর হিসেবে এটি কার্যক্রম শুরু করে।
জিআই সনদ প্রদান করার কারণ
কোন নির্দিষ্ট স্থানের কোন পণ্য খুব নামকরা হলে এবং সে নামের উপর বিশ্বাস করেই পণ্যটি কেনা, ব্যবহার করার উপর গুরুত্ব দিতেই জিআই সনদ দেয়া হয়।
প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে সেই স্থানের নাম যুক্ত থাকে। কোন পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেলে পণ্যগুলো বিশ্বব্যাপী ব্রান্ডিং করা সহজ হয়। জিআই সনদপ্রাপ্ত পণ্যগুলোর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ওই অঞ্চল পণ্যগুলো বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পায়। এর ফলে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। এতে সরকার রাজস্ব বেশি পায়।
চাইলেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যেতে হয়। আবেদনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রমাণ করতে হয় যে পণ্যটি মৌলিকভাবে শুধু সেই অঞ্চলেই উৎপাদিত হয়। WIPO এর নিয়ম মেনে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর এই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে। যারা জিআইয়ের জন্য আবেদন করেন তাদের দেয়া হয় মেধাস্বত্ব।