মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষার বিজ্ঞপ্তি ও পরিক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল (এমবিবিএস) এবং ডেন্টাল (বিডিএস) ভর্তি পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ২৫ নভেম্বর প্রকাশ করা হয়েছে। আর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে ৮ ডিসেম্বর। এ সংক্রান্ত তথ্য স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মো. মহিউদ্দিন মাতুব্বর নিশ্চিত করেছেন।
মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষার পরীক্ষার সময়সূচি
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে। ডেন্টাল (বিডিএস) ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি।
মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষার নম্বর বন্টন
এ বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় নম্বর মূল্যায়ন পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ২০০ নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রস্তুত করা হবে। এর মধ্যে,
পরীক্ষা | নম্বর |
---|---|
এস.এস.সি (SSC) | ৫০ নম্বর |
এইচ.এস.সি (HSC) | ৫০ নম্বর |
ভর্তি পরীক্ষা (Admission Test) | ১০০ নম্বর |
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় মোট ১০০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। প্রশ্নগুলো বহুনির্বাচনী (MCQ) আকারে থাকবে। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য থাকবে ১ নম্বর এবং প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে।
জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞান থেকে মোট ১০০ নম্বরের প্রশ্ন করা হবে।
বিষয় | নম্বর |
---|---|
জীববিজ্ঞান | ৩০ |
রসায়ন | ২৫ |
পদার্থবিজ্ঞান | ২০ |
ইংরেজি | ১৫ |
সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) | ১০ |
অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে
অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের জন্য আগে ৫ নম্বর কাটা হতো। তবে এবার তা কমিয়ে ৩ নম্বর কর্তন করা হবে। আগে এইচএসসি থেকে ১২৫ এবং এসএসসি থেকে ৭৫ নম্বর যোগ করে মোট ৩০০ নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা তৈরি করা হতো। তবে জুলাই বিপ্লবের কারনে এইচএসসির বেশকিছু পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি ফলে নম্বর বিন্যাসে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হোসেন জানিয়েছেন, পরীক্ষার সিলেবাস অপরিবর্তিত থাকবে এবং পরীক্ষার সময় এক ঘণ্টাই নির্ধারিত হয়েছে।
এছাড়া, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ের ব্যবধান দুই বছর থেকে বাড়িয়ে তিন বছর করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২০২১ সালে যারা এসএসসি দিয়েছে কিন্তু ২০২৩ সালে এইচএসসি দিতে পারেনি, তাদের ২০২৪ সালের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে এবং তাদের নম্বর কর্তন করা হবে না।
নতুন নম্বর বিন্যাস ও পরিবর্তিত নিয়ম শিক্ষার্থীদের জন্য অধিকতর সুবিধাজনক হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা ও নিয়মিত অনুশীলন গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।এবারের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার এক থেকে দুই দিন পর ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতা
দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস (MBBS) ও ডেন্টাল (বিডিএস) কোর্সে ভর্তির জন্য প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় অংশ নিতে আগ্রহীদের অবশ্যই নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষাগত ও অন্যান্য যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
১. এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ফলাফল:
- পরীক্ষার্থীকে এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ৯.০০ পেতে হবে।
- তবে উপজাতি ও অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম জিপিএ ৮.০০ (প্রতিটি পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ ৩.৫ থাকতে হবে)।
২. এইচএসসি পর্যায়ে নির্দিষ্ট বিষয়:
- এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় অবশ্যই পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান থাকতে হবে।
- জীববিজ্ঞান বিষয়ে ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫ থাকতে হবে।
বর্তমানে বয়সের ওপর কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই, তবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী নির্ধারিত বছরেই এইচএসসি পাশ করতে হবে।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা নীতিমালা প্রযোজ্য। আবেদনকারীদের অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।
মেডিকেল কলেজের আসন সংখ্যা
মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস (MBBS) কোর্সে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য আসনসংখ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর (DGME) এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে মোট আসন সংখ্যা প্রায় ১১,৫০০-এর বেশি।
সরকারি মেডিকেল কলেজের আসন সংখ্যা
বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৮টি সরকারি মেডিকেল কলেজ চালু রয়েছে। এসব কলেজে মোট আসন সংখ্যা প্রায় ৫,৩০০। কলেজভেদে আসনসংখ্যা বিভিন্ন হতে পারে, যেমন:
মেডিকেল কলেজের নাম | আসন সংখ্যা |
---|---|
ঢাকা মেডিকেল কলেজ | ২৩২টি |
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ | ২০০টি |
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ | ২২৭টি |
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ | ২২৭টি |
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ | ২২৫টি |
(অন্যান্য কলেজের তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে)
বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আসন সংখ্যা
বাংলাদেশে বর্তমানে ৭২টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এসব কলেজে মোট আসন সংখ্যা প্রায় ৬,২০০ এর কাছাকাছি।
আরও পড়ুন: মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল জানা যাবে যেভাবে
বেসরকারি কলেজে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের অবশ্যই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদিত মেধাতালিকার ভিত্তিতে আবেদন করতে হয়। বেসরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষার মান, সুযোগ-সুবিধা ও টিউশন ফি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আসন বরাদ্দ
সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংরক্ষিত রয়েছে। সাধারণত বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য আন্তর্জাতিক আবেদনপত্র এবং প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র জমা দিতে হয় বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে।
ডেন্টাল (বিডিএস) কলেজের আসন সংখ্যা
বাংলাদেশে ডেন্টাল সার্জারি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত কোর্স হচ্ছে ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস)। প্রতিবছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর পরিচালিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের সরকারি ও বেসরকারি ডেন্টাল কলেজগুলোতে মেধাভিত্তিক ভর্তি সম্পন্ন হয়। ২০২৫ সালের জন্য ডেন্টাল কলেজগুলোর আসন সংখ্যা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।
সরকারি ডেন্টাল কলেজ ও ইউনিটে আসন সংখ্যা
বর্তমানে দেশে মোট ৯টি সরকারি ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিট রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে মোট আসন সংখ্যা ৫৪৫টি। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের আসন সংখ্যা উল্লেখ করা হলো:
ডেন্টাল কলেজের নাম | আসন সংখ্যা |
---|---|
ঢাকা ডেন্টাল কলেজ | ১১০টি |
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট | ৫৭টি |
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট | ৫৮টি |
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট | ৫৯টি |
বারডেম ডেন্টাল ইউনিট | ৫০টি |
(পুরো তালিকা DGME ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে)
বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে আসন সংখ্যা
বাংলাদেশে বর্তমানে ২৬টি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ চালু রয়েছে, যেগুলোর সম্মিলিত আসন সংখ্যা প্রায় ১,৩৮৫টি। বেসরকারি কলেজগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর অনুমোদিত মেধাতালিকার ভিত্তিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
বেসরকারি কলেজের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো:
- Sapporo Dental College
- City Dental College
- Marks Dental College
- Update Dental College
- Pioneer Dental College
প্রতিটি কলেজে আসন সংখ্যা গড়ে ৫০-৬০টি হলেও, এটি কলেজভেদে ভিন্ন হতে পারে।
সরকারি মেডিকেল কলেজের তালিকা
- ঢাকা মেডিকেল কলেজ
- স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
- শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
- ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ
- শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল
- রংপুর মেডিকেল কলেজ
- রাজশাহী মেডিকেল কলেজ
- এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর ।
- কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
- আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী।
- বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ, সুনামগঞ্জ।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর।
- চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ
- কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ, মানিকগঞ্জ।
- কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ
- ঢাকা ডেন্টাল কলেজ
- যশোর মেডিকেল কলেজ
- খুলনা মেডিকেল কলেজ
- কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ
- মাগুরা মেডিকেল কলেজ
- মুগদা মেডিকেল কলেজ
- নওগাঁ মেডিকেল কলেজ
- নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজ
- নীলফামারী মেডিকেল কলেজ
- পাবনা মেডিকেল কলেজ
- পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ
- রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ
- সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ
- শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ, সিরাজগঞ্জ।
- শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর।
- শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়া।
- শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, কিশোরগঞ্জ।
- শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, হবিগঞ্জ।
- শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, জামালপুর।
- শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, টাঙ্গাইল।
- শেখ সাহেরা খাতুন মেডিকেল কলেজ, গোপালগঞ্জ।
- সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।
সুত্র : স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর