ইসলামিক ফাউন্ডেশন সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৫ (Sehri Iftar Time 2025) চূড়ান্ত ভাবে নির্ধারন করেছে। চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ১৪৪৬ হিজরী সনের রমজান মাস শুরু হবে আগামী ০১ অথবা ০২ মার্চ।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন আগামী ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ করেছে।এবার পবিত্র রমজানের সাহরির সময় নির্ধারণে বিশেষ পরিবর্তন আনা হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত সময়সূচি অনুযায়ী, পূর্বের নিয়ম অনুসারে সাহরির শেষ সময় সুবহে সাদিকের তিন মিনিট আগে ধরা হতো এবং ফজরের ওয়াক্তের সূচনা সুবহে সাদিকের তিন মিনিট পর নির্ধারিত থাকত। তবে এবারের সময়সূচিতে এই সতর্কতামূলক ব্যবধান রাখা হয়নি।
ধর্মীয় সূত্রের ভিত্তিতে সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে হাদিসে এ ধরনের অতিরিক্ত সতর্কতামূলক সময়ের উল্লেখ না থাকায় এবার সাহরির শেষ সময়ের পরই সরাসরি ফজরের ওয়াক্ত শুরু হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত নতুন সময়সূচি অনুসারে, ২ মার্চ প্রথম রমজানে ঢাকায় সাহরির শেষ সময় ভোর ৫টা ৪ মিনিট এবং ইফতারের সময় ৬টা ২ মিনিট নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই পরিবর্তন সম্পর্কে ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ইসলামিক নিয়মের আরও সুস্পষ্ট অনুসরণের অংশ। তবে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের যথাযথ সময় মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি
রমজান | তারিখ | বার | সাহরি | ইফতার |
* ০১ | ০২ মার্চ | রবিবার | ৫-০৪ মি. | ৬-০২ মি. |
০২ | ০৩ মার্চ | সোমবার | ৫-০৩ মি. | ৬-০৩ মি. |
০৩ | ০৪ মার্চ | মঙ্গলবার | ৫-০২ মি. | ৬-০৩ মি. |
০৪ | ০৫ মার্চ | বুধবার | ৫-০১ মি. | ৬-০৪ মি. |
০৫ | ০৬ মার্চ | বৃহস্পতিবার | ৫-০০ মি. | ৬-০৪ মি. |
০৬ | ০৭ মার্চ | শুক্রবার | ৪-৫৯ মি. | ৬-০৫ মি. |
০৭ | ০৮ মার্চ | শনিবার | ৪-৫৮ মি. | ৬-০৫ মি. |
০৮ | ০৯ মার্চ | রবিবার | ৪-৫৭ মি. | ৬-০৬ মি. |
০৯ | ১০ মার্চ | সোমবার | ৪-৫৬ মি. | ৬-০৬ মি. |
১০ | ১১ মার্চ | মঙ্গলবার | ৪-৫৫ মি. | ৬-০৬ মি. |
১১ | ১২ মার্চ | বুধবার | ৪-৫৪ মি. | ৬-০৭ মি. |
১২ | ১৩ মার্চ | বৃহস্পতিবার | ৪-৫৩ মি. | ৬-০৭ মি. |
১৩ | ১৪ মার্চ | শুক্রবার | ৪-৫২ মি. | ৬-০৮ মি. |
১৪ | ১৫ মার্চ | শনিবার | ৪-৫১ মি. | ৬-০৮ মি. |
১৫ | ১৬ মার্চ | রবিবার | ৪-৫০ মি. | ৬-০৮ মি. |
১৬ | ১৭ মার্চ | সোমবার | ৪-৪৯ মি. | ৬-০৯ মি. |
১৭ | ১৮ মার্চ | মঙ্গলবার | ৪-৪৮ মি. | ৬-০৯ মি. |
১৮ | ১৯ মার্চ | বুধবার | ৪-৪৭ মি. | ৬-১০ মি. |
১৯ | ২০ মার্চ | বৃহস্পতিবার | ৪-৪৬ মি. | ৬-১০ মি. |
২০ | ২১ মার্চ | শুক্রবার | ৪-৪৫ মি. | ৬-১০ মি. |
২১ | ২২ মার্চ | শনিবার | ৪-৪৪ মি. | ৬-১১ মি. |
২২ | ২৩ মার্চ | রবিবার | ৪-৪৩ মি. | ৬-১১ মি. |
২৩ | ২৪ মার্চ | সোমবার | ৪-৪২ মি. | ৬-১১ মি. |
২৪ | ২৫ মার্চ | মঙ্গলবার | ৪-৪১ মি. | ৬-১২ মি. |
২৫ | ২৬ মার্চ | বুধবার | ৪-৪০ মি. | ৬-১২ মি. |
২৬ | ২৭ মার্চ | বৃহস্পতিবার | ৪-৩৯ মি. | ৬-১৩ মি. |
২৭ | ২৮ মার্চ | শুক্রবার | ৪-৩৮ মি. | ৬-১৩ মি. |
২৮ | ২৯ মার্চ | শনিবার | ৪-৩৬ মি. | ৬-১৪ মি. |
২৯ | ৩০ মার্চ | রবিবার | ৪-৩৫ মি. | ৬-১৪ মি. |
৩০ | ৩১ মার্চ | সোমবার | ৪-৩৪ মি. | ৬-১৫ মি. |

ঢাকার বাইরের জেলাগুলোর সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হওয়ায় সাধারণত ঢাকার সময় অনুসারেই সেহরি ও ইফতার এর সময় সূচি নির্ধারন করা হয়ে থাকে। তবে পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে সময়ের পার্থক্য দেখা যায়। স্থানভেদে এই পার্থক্য কখনো বেশি, আবার কখনো তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে।
আরও পড়ুন : শবে বরাত, রোজা ও ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা
ধর্মীয় বিধান অনুসারে, নির্ধারিত সময়েই সেহরি ও ইফতার পালন করা জরুরি। তাই দেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষ যেন নির্ভুল সময়ে সেহরি ও ইফতার করতে পারেন, সে জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঢাকার সময়সূচির সঙ্গে অন্যান্য জেলার সময়ের পার্থক্য নির্ধারণ করে দিয়েছে।
ঢাকার সময়ের সাথে একই সময়ে সেহরি হবে
- নারায়ণগঞ্জ
- টাঙ্গাইল
- মুন্সিগঞ্জ
- সিরাজগঞ্জ
- ঠাকুরগাঁও
- নোয়াখালী
- চাঁদপুর।
ঢাকার সময়ের সাথে একই সময়ে ইফতার হবে
- গাজীপুর
- কিশোরগঞ্জ
- বাগেরহাট
ঢাকার সময় হতে বাড়াতে হবে
জেলা | সেহরি | জেলা | ইফতার |
দিনাজপুর, লক্ষীপুর, জয়পুরহাট, বগুড়া | ০১ মি. | নেত্রকোণা, খুলনা, গোপালগঞ্জ | ০১ মি. |
মানিকগঞ্জ, নওগাঁ, কক্সবাজার, শরীয়তপুর | ০২ মি. | মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, নড়াইল, ময়মনসিংহ | ০২ মি. |
মাদারীওপুর, ফরিদপুর, ভোলা, বরিশাল, নাটোর | ০৩ মি. | মাগুরা, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল, যশোর | ০৩ মি. |
পাবনা, রাজবাড়ী | ০৪ মি. | রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ, শেরপুর, জামালপুর | ০৪ মি. |
ঝালকাঠি, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, পটুয়াখালী | ০৫ মি. | পাবনা, কুষ্টিয়া | ০৫ মি. |
পিরোজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নড়াইল, বাগেরহাট ঝিনাইদহ , চুয়াডাঙ্গা | ০৬ মি. | বগুড়া, চুয়াডাঙ্গা | ০৬ মি. |
খুলনা , যশোর , মেহেরপুর , বরগুনা | ০৭ মি. | নাটোর ,গাইবান্ধা , মেহেরপুর কুড়িগ্রাম | ০৭ মি. |
রাজশাহী , নওগাঁ , জয়পুরহাট লালমনিরহাট | ০৮ মি. | ||
সাতক্ষীরা | ০৯ মি. | রংপুর | ০৯ মি. |
চাঁপাইনবাবগঞ্জ | ১০ মি. | ||
দিনাজপুর , নীলফামারি , ঠাকুরগাঁও | ১১ মি. | ||
পঞ্চগড় | ১২ মি. |
ঢাকার সময় হতে কমাতে হবে
জেলা | সেহরি | জেলা | ইফতার |
গাজীপুর , নীলফামারী পঞ্চগড় , ফেনী , চট্টগ্রাম | ০১ মি. | শরীয়তপুর , মাদারীপুর মুন্সিগঞ্জ , নারায়ণগঞ্জ নরসিংদী , সুনামগঞ্জ পিরোজপুর | ০১ মি. |
নরসিংদী , জামালপুর রংপুর , কুমিল্লা , গাইবান্ধা বান্দরবান | ০২ মি. | ঝালকাঠি , বরগুনা বরিশাল , চাঁদপুর | ০২ মি. |
ময়মনসিংহ লালমনিরহাট , শেরপুর রাঙ্গামাটি | ০৩ মি. | ভোলা , হবিগঞ্জ পটুয়াখালী , ব্রাহ্মণবাড়িয়া | ০৩ মি. |
কিশোরগঞ্জ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ,কুড়িগ্রাম খাগড়াছড়ি | ০৪ মি. | লক্ষ্মীপুর , সিলেট মৌলভীবাজার , কুমিল্লা | ০৪ মি. |
নেত্রকোনা | ০৫ মি. | নোয়াখালী | ০৫ মি. |
হবিগঞ্জ | ০৬ মি. | ফেনী | ০৬ মি. |
সুনামগঞ্জ , মৌলভীবাজার | ০৮ মি. | খাগড়াছড়ি | ০৮ মি. |
চট্টগ্রাম | ০৯ মি. | ||
সিলেট | ১০ মি. | রাঙ্গামাটি | ১০ মি. |
বান্দরবান , কক্সবাজার | ১১ মি. |
রোজা ভঙ্গের কারণ
রমজান মাস মুসলমানদের জন্য এক পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ সময়। মহান আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মুমিনের ওপর রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন। রোজার মাধ্যমে মানুষ তাকওয়া অর্জন করে এবং আত্মসংযমের শিক্ষা গ্রহণ করে। তবে, ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট কারণ রোজা ভঙ্গ করে, আর কিছু কারণে তা মাকরুহ হয়ে যায়। তাই, রোজার শুদ্ধতা ও যথার্থতা রক্ষা করার জন্য এসব বিধান জানা ও মানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয়:
- ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে।
- মুখে আসা অধিকাংশ বমি গিলে ফেললে।
- নারীদের মাসিক বা সন্তান প্রসবের পর ঋতুস্রাব হলে।
- ইসলাম ত্যাগ করলে।
- গ্লুকোজ, শক্তিবর্ধক ইনজেকশন বা সেলাইন গ্রহণ করলে।
- প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ বা অন্য কিছু শরীরে প্রবেশ করালে।
- রোজাদারকে কেউ জোর করে কিছু খাওয়ালে।
- ভুলক্রমে ইফতারের সময় হয়ে গেছে মনে করে সূর্যাস্তের আগেই ইফতার করলে।
- মুখভরে বমি হলে।
- ভুলবশত কিছু খাওয়ার পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃতভাবে আরও কিছু খেলে।
- বৃষ্টির পানি মুখে এসে গেলে এবং তা গিলে ফেললে।
- কান বা নাক দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করালে।
- দাঁতের ফাঁক থেকে ছোলার পরিমাণ কিছু বের করে খেয়ে ফেললে।
- অল্প বমি আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেললে।
- রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় অজু করতে গিয়ে কুলি বা নাকে পানি দেয়ার সময় তা ভেতরে চলে গেলে। (উৎস: ফাতাওয়ায়ে শামি ও ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)
রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ
- সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারের সময় হারাম কোনো খাবার গ্রহণ করলে।
- কোনো কারণ ছাড়া কিছু চিবালে।
- মুখে কিছু রেখে না খেলে।
- গড়গড়া করা বা নাকের ভেতর পানি টেনে নেওয়ার ফলে পেটে পানি চলে গেলে।
- ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘ সময় মুখে থুতু ধরে রেখে পরে গিলে ফেললে।
- সারা দিন শরীর নাপাক রাখলে।
- পাউডার, পেস্ট ও মাজন দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলে।
- মুখে গুল ব্যবহার করলে এবং তা থুতুর সঙ্গে গলায় চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে।
- কারো গিবত বা পরনিন্দা করলে।
- মিথ্যা কথা বললে।
- ঝগড়া-বিবাদ করলে।
- যৌন উদ্দীপক কিছু দেখা বা শোনলে।
- নাচ, গান, সিনেমা দেখা ও তাতে মজে থাকলে।
- রান্নার সময় লবণ চেখে দেখা বা স্বাদ নেওয়া, যদিও বিশেষ প্রয়োজনে বৈধ ধরা হয়।
রমজান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা রাখে না বা ভঙ্গ করে, তাদের জন্য জান্নাতে প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়বে। তাই, রোজার শুদ্ধতা রক্ষা করা এবং শরিয়তের বিধান অনুযায়ী আমল করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যক।