হেইলিবেরি ভালুকা,যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বিখ্যাত হেইলিবেরি স্কুলের শাখা এটি।এই স্কুলের টিউশন ফি বছরে প্রায় ৪০-৪৫ লাখ টাকা হলেও বাংলাদেশের এই শাখায় রয়েছে ২৫ – ১০০% পর্যন্ত শিক্ষাবৃত্তির সুবিধা। ১৬০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই স্কুল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠগুলোর মধ্যে একটি। ময়মনসিংহের ভালুকায় এই স্কুলটি দক্ষিণ এশিয়ায় হেইলিবেরি স্কুলের প্রথম শাখা। এখানে ক্লাস ৬ থেকে ক্লাস ১২ পর্যন্ত শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। তবে প্রথম ব্যাচে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। স্কুল কতৃপক্ষ জানিয়েছে ২০২৪ সালের আগষ্ট মাসে প্রথম ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়েছে।
হেইলিবেরি ভালুকা একটি প্রিমিয়াম আন্তর্জাতিক আবাসিক স্কুল, যা ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সী ছেলে ও মেয়েদের জন্য উচ্চমানের ইংরেজি শিক্ষা প্রদান করে।এখানে রয়েছে আধুনিক শ্রেনিকক্ষ, ল্যাব, লাইব্রেরি ও মিলনায়তন সুবিধা। শতভাগ আবাসন সুবিধা সম্বলিত প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী ৮৭ জন যাদের সবাই শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করছে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আধুনিক শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বমানের একাডেমিক সুযোগ-সুবিধা এবং উন্নত জীবনযাপনের পরিবেশ নিশ্চিত করে, হেইলিবেরি ভালুকা বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষার মানদণ্ড তৈরি করেছে। বিদ্যালয়টি শুধুমাত্র শিক্ষার গুণগত মানেই নয় বরং শিক্ষার্থীদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মানসিক বিকাশেও বিশেষ মনোযোগ দিয়ে থাকে।
হেইলিবেরি স্কুল একটি ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি যুক্তরাজ্যে অবস্থিত এবং মূলত একটি বেসরকারি বোর্ডিং ও ডে স্কুল। হেইলিবেরি স্কুলের প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৬২ সালে। এটি ছাত্রদের জন্য উচ্চমানের শিক্ষার পাশাপাশি উন্নত জীবনধারা ও নৈতিকতার শিক্ষা প্রদানের জন্য সুপরিচিত। এটি বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অবস্থান করছে, এবার বাংলাদেশে তাদের প্রথম শাখা খুলেছে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে মুগ্ধ হয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকেই তাদের প্রথম গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছে হেইলিবেরি কর্তৃপক্ষ। ঢাকার নিকটবর্তী ময়মনসিংহের ভালুকায় এই স্কুলটি গড়ে তুলতে সহায়তা করছে বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড।
ভালুকার ধামশুর গ্রামের প্রায় ২০ একর জমিতে নির্মিত হয়েছে হেইলিবেরি ভালুকার ক্যাম্পাস। স্কুলটিতে আছে আন্তর্জাতিক মানের ৪ তলা একাডেমিক ভবন ও ৫ তলা আবাসিক ভবন। একাডেমিক ভবনে মোট ৫২ টি অত্যাধুনিক শ্রেনিকক্ষ। প্রতিটি কক্ষে রয়েছে ২৪ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদানের ব্যাবস্থা। প্রতিটি শ্রেনিকক্ষের পাশেই ছাত্র-শিক্ষক স্টাডি রুমের ব্যাবস্থা রয়েছে। এছাড়া একাডেমিক ভবনে রয়েছে ১২ টি সাইন্স ল্যাবরেটরি, ৩ টি কম্পিউটার ল্যাব, সেমিনার রুম,অডিটোরিয়াম, মিউজিক রুম,আর্ট রুম ও জিমনেসিয়াম।
খোলামেলা শ্রেনিকক্ষ ও আবাসন ব্যবস্থা ছাড়াও স্কুলটিতে আছে ২ টি সুবিশাল খেলার মাঠ যেখানে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, টেনিস, গলফ, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলার সুযোগ রয়েছে। রয়েছে অলেম্পিক সাইজের সুইমিংপুল।
আবাসিক সুবিধা প্রদানে রয়েছে ৩৯৬টি কক্ষ, যেখানে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতি রুমে চারজন এবং দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতি রুমে দুজন করে থাকবেন। স্কুলটিতে রয়েছে এক হাজার শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা।
হেইলিবেরি স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত মানসম্মত ও ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষার সুযোগ প্রদান করে। এখানে ইংলিশ ন্যাশনাল কারিকুলামের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ব্যাকালোরিয়েট (IB) এবং A-লেভেল কোর্স চালু রয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীও আছে এই স্কুলে।স্কুলটিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিশ্বমানের শিক্ষক। বর্তমানে ১৪ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক সহ বেশিরভাগই যুক্তরাজ্যের নাগরিক। তারা সবাই হার্ভার্ড এর সনদ প্রাপ্ত।
প্রথাবদ্ধ গ্রেড নির্ভর শিক্ষা কার্যক্রমের গন্ডি পেরিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রবেশের সঠিক প্রস্তুতির পথ প্রদর্শক হিসেবেও হেইলিবেরি ভালুকা ভুমিকা রাখবে বলে মনে করেন প্রধান শিক্ষক।
কতৃপক্ষের দাবি, হেইলিবেরি ভালুকা হয়ে উঠবে এশিয়ার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এখানকার শিক্ষার্থীরা ক্লাস ১২ পর্যন্ত পড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে,তাই শুধু দেশেই নয় বিদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সক্ষম হবে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
হেইলিবেরি স্কুলের একটি আন্তর্জাতিক পরিচিতি রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও এটি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্পাস স্থাপন করেছে, যেমন চীন, কাজাখস্তান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। এর ফলে এটি বৈশ্বিক শিক্ষার একটি মডেল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
হেইলিবেরি ভালুকা স্কুলের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ
- আন্তর্জাতিক মানের পাঠ্যক্রম
- উন্নত অবকাঠামো
- বোর্ডিং সুবিধা
- যোগ্য ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক
- সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম
- প্রযুক্তি-ভিত্তিক শিক্ষা
- নিরাপত্তা ও সুরক্ষা
- বহুজাতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য
- ক্যারিয়ার গাইডেন্স
হেইলিবেরি ভালুকা স্কুল তার আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরিবেশ এবং ব্যক্তিগত মনোযোগ প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি শুধুমাত্র শিক্ষার কেন্দ্র নয়, বরং শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল হতে সহায়ক একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
হেইলিবেরি ১৫ মিলিয়ন ডলারের স্কলারশিপ ফান্ড
হেইলিবেরি ভালুকায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম চলছে। সম্পূর্ণ আবাসিক এই স্কুলে বার্ষিক টিউশন ফি প্রায় ৪১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে ভর্তি ও সেশন ফি মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের বছরে প্রায় ৪৮-৪৯ লাখ টাকা খরচ হবে। তবে মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিশেষ স্কলারশিপ।
স্কুলের একাডেমিক ডিরেক্টর ড. সন্দ্বীপ আনন্থানারায়ণ জানান, কগনেটিভ অ্যাপটিটিউট টেস্টে (ক্যাট) ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ পাবেন। স্কুলটির ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের স্কলারশিপ ফান্ড থেকে বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।
ড. আনন্থানারায়ণ আরও জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের সন্তান হেইলিবেরি ভালুকার ভর্তি পরীক্ষায় অসাধারণ ফল করে শতভাগ স্কলারশিপ পেয়েছে। এই শিক্ষার্থী এখন ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে।
হেইলিবেরি ভালুকার লক্ষ্য শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় বিদ্যাপীঠ হয়ে ওঠা। এর মাধ্যমে তারা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার সমন্বয় সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।