চলছে ৬ ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির প্রস্তুতি এবং এর আগে নিয়োগ প্রাপ্ত দেশের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল-কলেজে কর্মরত ৩ হাজার ২০৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এই তালিকায় ২ হাজার ৫৭৯ জন স্কুলশিক্ষক এবং ৬২৭ জন কলেজশিক্ষক অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। ইতোমধ্যে এদের সবাই অনলাইনে আবেদন করেছেন; অফলাইনে কোনো আবেদন জমা পড়েনি।
এছাড়া ২ হাজার ৮৪২ জন শিক্ষককে উচ্চতর স্কেল এবং ১৩০ জন স্কুলশিক্ষককে বিএড স্কেল প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
১২ জানুয়ারি মাউশির জানুয়ারি মাসের এমপিও কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়। অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিয়মিত দায়িত্বে থাকা প্রফেসর ড. একিউএম শফিউল আজমের সভাপতিত্বে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, মাউশির আঞ্চলিক পরিচালক ও উপপরিচালকরা এবং সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্টসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, স্কুলশিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বরিশাল অঞ্চলের ১৩০ জন, চট্টগ্রামের ১২৭ জন, কুমিল্লার ১৪৮ জন, ঢাকার ৭২৬ জন, খুলনার ৩৭৭ জন, ময়মনসিংহের ১৬৪ জন, রাজশাহীর ৬৬৮ জন, রংপুরের ১৭৫ জন এবং সিলেট অঞ্চলের ৬৪ জন রয়েছেন।
অন্যদিকে, কলেজের ৬২৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে বরিশালের ৪৫ জন, চট্টগ্রামের ৪৩ জন, কুমিল্লার ৫২ জন, ঢাকার ১০১ জন, খুলনার ৭৭ জন, ময়মনসিংহের ৬৭ জন, রাজশাহীর ৭৬ জন, রংপুরের ১১০ জন এবং সিলেট অঞ্চলের ৫৬ জন অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
উচ্চতর স্কেল পাচ্ছেন ২,৮৪২ জন
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এমপিও কমিটি দেশের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল-কলেজে কর্মরত দুই হাজার আটশত বিয়াল্লিশ জনকে উচ্চতর স্কেল প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের মধ্যে স্কুলশিক্ষক রয়েছেন দুইহাজার তিনশত ঊনষাট জন এবং কলেজশিক্ষক রয়েছেন চারশত তিরাশি জন।
সভায় জানানো হয়, উচ্চতর স্কেল পাওয়া স্কুলশিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বরিশাল অঞ্চলের ৩৩১ জন, চট্টগ্রামের ১২৩ জন, কুমিল্লার ৯৭ জন, ঢাকার ৫০২ জন, খুলনার ৪২৫ জন, ময়মনসিংহের ১৪৯ জন, রাজশাহীর ৪৬৯ জন, রংপুরের ১৭৩ জন এবং সিলেট অঞ্চলের ৯০ জন রয়েছেন।
অন্যদিকে, কলেজের ৪৮৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে বরিশাল অঞ্চলের ৩৯ জন, চট্টগ্রামের ১৭ জন, কুমিল্লার ৪১ জন, ঢাকার ৪৮ জন, খুলনার ২৬ জন, ময়মনসিংহের ৯ জন, রাজশাহীর ২৪৭ জন, রংপুরের ৩৯ জন এবং সিলেট অঞ্চলের ১৭ জন রয়েছেন।
বিএড স্কেল পাচ্ছেন ১৩০ জন
এছাড়া দেশের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যর একশত ত্রিশ জন শিক্ষককে বিএড স্কেল দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বিএড স্কেল পাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে
বরিশাল | ছয় জন |
চট্টগ্রাম | পাঁচ জন |
কুমিল্লা | নয় জন |
ঢাকা | চৌষট্টি জন |
খুলনা | পনের জন |
ময়মনসিংহ | পাঁচ জন |
রাজশাহী | চৌদ্দ জন |
রংপুর | এগারো জন |
সিলেট | এক জন |
এই সিদ্ধান্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক ও পেশাগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নতুন এমপিও আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নথিপত্র যাচাই ও সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। নিচে গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলোর তালিকা তুলে ধরা হলো:
- প্রতিষ্ঠান প্রধানের অগ্রায়ণ পত্র।
- আবেদনকারীর পূরণকৃত তথ্য ফরম।
- এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার মূল সনদ।
- এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার মূল সনদ।
- স্নাতক (ডিগ্রি) বা সমমান পরীক্ষার মূল সনদ।
- স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) বা সমমান পরীক্ষার মূল সনদ।
- অন্যান্য শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ।
- বিএড বা ব্যাচেলর অফ এডুকেশন সনদ।
- এনটিআরসিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সনদ।
- ডিগ্রি বা স্নাতক পরীক্ষার মার্কশিট।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত নিয়োগপত্র।
- যোগদানপত্র।
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্লিপ ও ব্যাংক সার্টিফিকেট।
- নিয়োগপ্রাপ্ত বিষয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের তালিকা।
- লাইব্রেরি সম্পর্কিত তথ্য (লাইব্রেরি পার্টিকুলার্স)।
- ল্যাবরেটরি সম্পর্কিত তথ্য (ল্যাবরেটরি পার্টিকুলার্স)।
- শিক্ষক ও কর্মচারীদের তথ্য বিবরণী।
- নিয়োগকৃত পদে পূর্বে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের পদত্যাগপত্র, অব্যাহতি পত্র, বা মৃত্যু সনদ।
- অবসরপ্রাপ্ত বা অব্যাহতি প্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীর ব্যাংক নন-ড্রয়াল সার্টিফিকেট।
- শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ স্বীকৃতির কপি।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ কমিটির অনুমোদনের কপি।
- লোকেশন সার্টিফিকেট (যেখানে প্রযোজ্য)।
- সভার অধিবেশন বা রেজুলেশন সমূহের কপি।
- ই-রিকুইজিশন কপি এবং এনটিআরসিএ গণবিজ্ঞপ্তির কপি অথবা পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রথম এমপিও কপি।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শেষ এমপিও কপি।
- নিয়োগ সংক্রান্ত সভার অধিবেশন বই বা রেজুলেশনের কপি।
- নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল, জাতীয় মেধা তালিকার কপি, বা এসএমএস কপি।
- এনটিআরসিএ থেকে প্রাপ্ত রিকমেন্ডেশন লেটার।
- বর্তমান কমিটির অনুমোদনের কপি।
- সাবজেক্ট অ্যাপ্রুভাল বা নতুন বিভাগ খোলার অনুমতি কপি।
- শ্রেণি ভিত্তিক শিক্ষার্থীদের তালিকা।
- মহাপরিচালকের প্রতিনিধির মনোনয়নের কপি।
- অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র।
এই নথিগুলো সঠিকভাবে প্রস্তুত ও জমা দেওয়া একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যথাযথ নথি জমা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত।
এমপিও বেতন ইএফটি পদ্ধতিতে
বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত বেতন-ভাতা আগামী জানুয়ারি থেকে ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) পদ্ধতিতে প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই পদক্ষেপটি শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ, দ্রুত এবং সময়ানুগ করতে নেওয়া হয়েছে।
এ সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি, উচ্চতর গ্রেড, বিএড স্কেলসহ বিভিন্ন আর্থিক সুবিধার আবেদনের সময়সীমা পুনর্নির্ধারণ করেছে।
আরও পড়ুন: NCTB Books | নতুন বইয়ের পিডিএফ ভার্সন ডাউনলোড
বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতিতে প্রদান করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় একাধিক ধাপে অনুমোদন লাগে, যা বেতন-ভাতা প্রদানে দেরি ঘটায়। কখনো কখনো বেতন-ভাতা মাসের ১০ তারিখ পেরিয়ে গেলেও হাতে আসে না। এমনকি পূর্বে এক ঈদের উৎসব ভাতা আরেক ঈদে পাওয়ার মতো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন অনেক শিক্ষক।
ইএফটি পদ্ধতি চালুর ফলে শিক্ষকরাও সরকারি কর্মচারীদের মতো মাসের শুরুতেই তাদের বেতন-ভাতা সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পেতে সক্ষম হবেন। এটি শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি, যা ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পূরণ করার ঘোষণা দেয়।
এই উদ্যোগ শিক্ষকদের আর্থিক সুরক্ষা ও স্বস্তি বাড়াবে এবং শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির প্রস্তুতি
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষা শেষ হলে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের লক্ষ্যে ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে আসন্ন মে মাসে, এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)–এর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সংস্থাটির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি এবং ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি উভয়ই চলতি বছরেই প্রকাশ করা হবে।
তবে এখনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি মাসেই ১৮তম নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষা শেষ হবে। এরপরই এই দুটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে আলোচনায় বসবে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে এনটিআরসিএ’র সচিব এ এম এম রিজওয়ানুল হক জানান,
“গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য আমাদের নির্ধারিত একটি নীতিমালা রয়েছে। সেই নীতিমালার বাইরে গিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। নীতিমালায় যেভাবে বলা আছে, সে অনুযায়ীই পরবর্তী গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। আপাতত এর বাইরে কিছু বলার মতো নেই।”
এর আগে এনটিআরসিএ ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ ৫ম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যেখানে ৯৬ হাজার ৭৩৬টি শূন্য পদের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়েছিল। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ছিল ৪৩ হাজার ২৮৬টি এবং মাদরাসা, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল ৫৩ হাজার ৪৫০টি পদ। পরবর্তীতে, ২১ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৯ হাজার ৫৮৬ জন প্রার্থীকে নিয়োগে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সাল থেকে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিবন্ধন সনদ প্রদান শুরু করে। তবে, শুরুর এক দশক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির হাতে। বর্তমানে এই দায়িত্ব এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে কেন্দ্রীভূতভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।
আগামী গণবিজ্ঞপ্তি নিয়ে আগ্রহ ও প্রত্যাশা দুটোই যেমন বাড়ছে, তেমনি নিবন্ধিত চাকরিপ্রত্যাশীরা নজর রাখছেন মে মাসের সম্ভাব্য ঘোষণার দিকে।