দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের রক্ষায় সরকার নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দীর্ঘ আলোচনার পর পর্যটকদের জন্য কিছু সুসংবাদ দেওয়া হলেও দ্বীপে ভ্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। সেখানে যাওয়া এখন আর আগের মতো সহজ নয়; ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তৈরি বিশেষ অ্যাপ থেকে ‘ট্রাভেল পাস’ সংগ্রহ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি, সেন্ট মার্টিনের পর্যটন ব্যবস্থাপনায় ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সাবরীনা রহমান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে জানানো হয়েছে, কমিটি সেন্ট মার্টিনে পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। এর মধ্যে রয়েছে:
- নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পরিবহন প্রতিরোধ।
- পর্যটকদের হোটেল থাকার রেজিস্টার সংরক্ষণ।
- অনুমোদিত ট্রাভেল পাসধারী পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত জাহাজে ভ্রমণ নিশ্চিত করা।
- এন্ট্রি পয়েন্টে পর্যটকদের জন্য করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে সচেতনতামূলক বিলবোর্ড স্থাপন।
কমিটিতে টেকনাফ ও কক্সবাজারের ইউএনও, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, ট্যুরিস্ট পুলিশ, ট্যুরিজম বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ এবং কোস্ট গার্ডের একজন করে সদস্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
ট্রাভেল পাস সংগ্রহের পদ্ধতি
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অ্যাপ থেকে ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করতে হবে। অ্যাপটি ডাউনলোড করে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত যাতায়াত এবং পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যকলাপের ফলে দ্বীপটি গুরুতর হুমকির মুখে পড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কারণে দ্বীপের তাপমাত্রা আশেপাশের এলাকার তুলনায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এছাড়াও প্লাস্টিক দূষণ, বন উজাড়, কচ্ছপের আবাস ধ্বংস, মিঠা পানির সংকট এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো নানা পরিবেশগত সমস্যা দেখা দিয়েছে।
২০২০ সালের একটি সমীক্ষায় সেন্টার ফর জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) সুপারিশ করেছিল, দ্বীপে রাত্রীকালীন অবস্থান বন্ধ রাখা এবং দিনে সর্বোচ্চ ১,২৫০ জন পর্যটকের যাতায়াত নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
পরিবেশবিদদের মতে, পর্যটন ব্যবসায়ীদের চাপ উপেক্ষা করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণই একমাত্র উপায়। পরিবেশ অধিদপ্তর ইতোমধ্যেই সেন্ট মার্টিনকে “সংরক্ষিত এলাকা” হিসেবে ঘোষণা করেছে।
পরিবেশ রক্ষায় দায়িত্বশীল আচরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সেন্ট মার্টিন সবার সম্পদ। এই দ্বীপ রক্ষা করতে হলে আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে।”
সরকারের নতুন এই পদক্ষেপ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।