এইচএমপিভি ভাইরাস HMPV Virus | ভারতে তিন শিশু আক্রান্ত

আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ

চীনে সংক্রমণ বেড়েছে

ইনকিউবেশন পিরিয়ড

এইচএমপিভি (HMPV) ভাইরাসের লক্ষণসমূহ

এইচএমপিভি (HMPV) বা হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (Human Metapneumovirus) একটি শ্বাসযন্ত্রজনিত ভাইরাস যা শিশু, বয়স্ক ও রোগপ্রবণ ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি আক্রান্ত করে। এটি সাধারণত ঠান্ডাজনিত অসুখ বা নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে এবং রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস (RSV)-এর মতো লক্ষণ প্রকাশ পায়।

এই ভাইরাস মূলত শ্বাসনালিকে আক্রান্ত করে এবং সাধারণ ঠান্ডা থেকে শুরু করে তীব্র শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে।

সাধারণ লক্ষণসমূহ-

  • নাক দিয়ে পানি পড়া (Runny nose)
  • কাশি
  • হাঁচি
  • জ্বর
  • গলা ব্যথা
  • মাথাব্যথা
  • ক্লান্তি ও অবসাদ

গুরুতর লক্ষণসমূহ (বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে)

  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
  • বুকে শ্বাসের সময় কষ্টকর আওয়াজ (wheezing)
  • নিউমোনিয়ার লক্ষণ (জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা)
  • খাওয়ার অনীহা (বিশেষত শিশুদের মধ্যে)
  • অতিরিক্ত ঘুমে ঢলে পড়া বা অচেতন ভাব
  • ত্বকে নীলচে আভা (অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে)

যারা বেশি ঝুঁকিতে

  • ৫ বছরের নিচের শিশু
  • ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স্ক ব্যক্তি
  • প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল যাদের (যেমন: ক্যান্সার রোগী, অঙ্গপ্রতিস্থাপনকারী)
  • অ্যাজমা, সিওপিডি বা ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা

এইচএমপিভি (HMPV) ভাইরাসের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন নেই। সাধারণত লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা (fever reducer, fluid intake, rest) এবং গুরুতর ক্ষেত্রে হাসপাতালের সহায়তা প্রয়োজন হয়। তাই এই ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

এইচএমপিভি (HMPV) ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

এইচএমপিভি (HMPV) বা হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস একটি শ্বাসতন্ত্রজনিত ভাইরাস, যা সহজেই একজনের থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস প্রতিরোধে কোনো নির্দিষ্ট টিকা বা ওষুধ নেই, তবে কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যায়।

নিচে এই ভাইরাস থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় তুলে ধরা হলো-

হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন

  • সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে।
  • বিশেষ করে হাঁচি-কাশির পরে, বাইরে থেকে ফিরে, খাবার খাওয়ার আগে এবং শিশুদের খাওয়ানোর পূর্বে হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি।
  • সাবানের অভাব হলে অ্যালকোহল-যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।

হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন

  • কাশির সময় মুখ ও নাক টিস্যু বা কনুইয়ের ভাঁজ দিয়ে ঢেকে নিন।
  • ব্যবহৃত টিস্যু ব্যবহারের পরপরই ফেলে দিন এবং সঙ্গে সঙ্গে হাত ধুয়ে ফেলুন।

আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন

  • যাদের মধ্যে ঠান্ডা, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা জ্বর রয়েছে, তাদের কাছ থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা ঘরে রাখা এবং তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা রাখা নিরাপদ।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখুন

  • দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিস যেমন দরজার হাতল, মোবাইল, টেবিল, খেলনা, সুইচ বোর্ড ইত্যাদি নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করুন।
  • ঘর পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবাহমান রাখুন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান

  • পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত পানি পান, ঘুম ও ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
  • শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরি।

উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

  • এইচএমপিভির লক্ষণ যেমন জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি দেখা দিলে চিকিৎসা গ্রহণে দেরি করবেন না।
  • শিশু বা বয়স্কদের ক্ষেত্রে উপসর্গ গুরুতর হলে হাসপাতালে ভর্তি করানো হতে পারে।

এইচএমপিভি (HMPV) ভাইরাসকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই, বিশেষ করে শিশু ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারীদের ক্ষেত্রে। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি, পরিচ্ছন্নতা এবং আগাম সচেতনতা এই ভাইরাস থেকে সুরক্ষা পাওয়ার মূল চাবিকাঠি। এখনই সচেতন হই, সুস্থ থাকি।

এইচএমপিভি (HMPV) ভাইরাস এবং করোনা ভাইরাস (COVID-19) এর মধ্যে মূল পার্থক্য

পার্থক্যের বিষয়এইচএমপিভি (HMPV) ভাইরাসকরোনা ভাইরাস (COVID-19)
ভাইরাসের পরিবারParamyxoviridaeCoronaviridae
প্রথম শনাক্ত২০০১ সালে২০১৯ সালে (উহান, চীন)
উপসর্গজ্বর, কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্টজ্বর, শুকনো কাশি, ক্লান্তি, স্বাদ/ঘ্রাণ হারানো
সংক্রমণ ক্ষমতামাঝারিঅত্যন্ত বেশি (মহামারি সৃষ্টি করেছে)
ঝুঁকিপূর্ণ শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্নসব বয়স, বিশেষ করে বয়স্ক ও কো-মরবিডিটি রোগীরা
টিকানেইআছে (Pfizer, Moderna, AstraZeneca ইত্যাদি)
চিকিৎসা পদ্ধতিউপসর্গ অনুযায়ীঅ্যান্টিভাইরাল, অক্সিজেন, আইসিইউ প্রয়োজনে
প্রতিরোধ ব্যবস্থাস্বাস্থ্যবিধি ও সচেতনতাস্বাস্থ্যবিধি, মাস্ক, টিকা, সামাজিক দূরত্ব
প্রভাবের পরিমাণসীমিত ও মৌসুমিবিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রভাব (স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি)

Leave a Comment