বাংলাদেশের সেরা ১০ টি কলেজ সম্পর্কে (Top 10 college in Bangladesh) জানার আগ্রহ সবারই থাকে। বিশেষ করে যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হবে, তাদের সবার ইচ্ছে থাকে সেরা কলেজগুলোর মধ্যে ভর্তি হওয়া। নিজের জন্য সেরা কলেজটি বেছে নিতেই সেরা কলেজগুলোর খোঁজ করে থাকেন।
কলেজগুলো নির্বাচনের ক্ষেত্রে শুধু শিক্ষার দিকই বিবেচনা করা হয় না। শিক্ষার পাশাপাশি আনুষাঙ্গিক অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করা হয়। পারিপার্শ্বিক সবকিছুর উপর ভিত্তি করেই নির্বাচন করা হয় কলেজগুলো। আজকে আমরা জানবো বাংলাদেশের সেরা ১০টি কলেজ সম্পর্কে।
বাংলাদেশের সেরা ১০ কলেজের তালিকা
- ১. নটরডেম কলেজ, ঢাকা।
- ২. ঢাকা কলেজ, ঢাকা।
- ৩. হলি ক্রস কলেজ, তেজগাঁও, ঢাকা।
- ৪. রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা।
- ৫. ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ,ঢাকা।
- ৬. আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা।
- ৭. বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, পিলখানা, ঢাকা।
- ৮. ঢাকা সিটি কলেজ, ঢাকা।
- ৯. সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া।
- ১০. আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ, নরসিংদী।
কলেজ গুলোর মোট আসন সংখ্যা
কলেজের নাম | বিজ্ঞান | ব্যবসায় শিক্ষা | মানবিক | মোট আসন সংখ্যা |
নটর ডেম কলেজ | ২১০০ | ৭৬০ | ৪১০ | ৩২৭০ |
ঢাকা কলেজ | ৯০০ | ১৫০ | ১৫০ | ১২০০ |
হলি ক্রস কলেজ | ৭৮০ | ২৮০ | ২৭০ | ১৩৩০ |
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ | ১০৪৪ | ৪৫৪ | ২০০ | ১৬৯৮ |
ভিকারুননিসা নূন কলেজ | ২০১৫ | ৩০০ | ২৫০ | ২৫৬৫ |
আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ | ৯২৫ | ৫২৫ | ২৩০ | ১৬৮০ |
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ | ১২২৫ | ৫০০ | ৩০০ | ২০২৫ |
ঢাকা সিটি কলেজ | ৯০০ | ১৫০ | ১৫০ | ১২০০ |
সরকারি আজিজুল হক কলেজ | ৭০০ | ৩৫০ | ৩৫০ | ১৪০০ |
আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ | ৭০০ | ২২৫ | ৩২৫ | ১২৫০ |
নটরডেম কলেজ
নটর ডেম কলেজ বাংলাদেশের অন্যতম স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যার যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৯ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকার লালবাগের লক্ষ্মীবাজারে।
সদ্য স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষাক্ষেত্রে সংকট কাটিয়ে উঠতে রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ‘কনগ্রিগেশন অব হলি ক্রস’ গোষ্ঠীর পুরোহিতরা কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকার তৎকালীন আর্চবিশপ গ্র্যানার, সিএসসি, এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং হলি ক্রস পুরোহিতদেরকে কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব দেন।
১৯৫৪ সালে কলেজটি বর্তমান অবস্থান মতিঝিলে স্থানান্তরিত হয় এবং নতুন নামকরণ করা হয় ‘নটর ডেম কলেজ’। নাম পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ‘নটর ডেম ইউনিভার্সিটি’-এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, যেখানে কলেজের অনেক শিক্ষক উচ্চশিক্ষা লাভ করেছিলেন।
ফরাসি ভাষায় ‘নটর ডেম’ অর্থ ‘আমাদের মা’, যা মূলত খ্রিস্টানদের মা মেরির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।
নটর ডেম কলেজ শুধুমাত্র অসাধারণ ফলাফলের জন্য গর্বিত নয়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এখানে শিক্ষার্থীদের শুধু পুঁথিগত শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তাদের নৈতিকতা, মানবিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এভাবেই নটর ডেম কলেজ তার শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
ঢাকা কলেজ
১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ’, যা আজকের ঢাকা কলেজ নামে পরিচিত। প্রথমে ইংলিশ সেমিনারি স্কুলের দ্বিতীয় তলায় তিনটি কক্ষ নিয়ে যাত্রা শুরু করে এই প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় জনশিক্ষা কমিটি কলেজ ভবনের জন্য জমি ক্রয় করে এবং ১৮৪১ সালে বিশপ রেভারেন্ড ড্যানিয়েল কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
১৯০৮ সালে বঙ্গভঙ্গের পর ঢাকা কলেজ স্থানান্তরিত হয় কার্জন হল ভবনে, যা পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর, ঢাকা কলেজের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদান করা হয়। এর ফলে ঢাকা কলেজ নতুন করে স্থানান্তরিত হয় হাইকোর্ট ভবনে, পরে লক্ষীবাজার এবং ১৯৫৫ সালে বর্তমান ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত হয়।
ঢাকা কলেজ বর্তমানে ১৮.৫৭ একর জমির উপর বিস্তৃত এবং এখানে রয়েছে আধুনিক অবকাঠামো, ৮টি ছাত্রাবাস, মসজিদ, খেলার মাঠ, পাঠাগার ও বিজ্ঞানাগার।
১৯টি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির ২২০ জন শিক্ষকের মধ্যে অনেকেই পিএইচডি ও এমফিলসহ উচ্চতর ডিগ্রিধারী।
ঢাকা কলেজ শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, জাতীয় ও রাজনৈতিক আন্দোলনেও অসামান্য অবদান রেখেছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণঅভ্যুত্থানে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণের ভূমিকা ছিল অনন্য। আজও এই কলেজ উচ্চশিক্ষার বাতিঘর হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে।
হলি ক্রস কলেজ
প্রতিষ্ঠার সময় মাত্র ৫ জন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল হলি ক্রস কলেজ, আর বর্তমানে এই সংখ্যা প্রায় ২৫০০। বর্তমানে শিক্ষকের সংখ্যা ৪৭ জন।
প্রথমে শুধুমাত্র মানবিক শাখা চালু থাকলেও পরবর্তীতে বিজ্ঞান শাখা যুক্ত হয় এবং ২০০৫ সালে ব্যবসায় শিক্ষা শাখা চালু করা হয়। গত এক দশকে একটি ছয়তলা ভবন ও একটি অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম নির্মিত হয়েছে।
৬০ বছরের এই দীর্ঘ পরিক্রমায় পাঁচজন অধ্যক্ষ এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়েছেন: সিস্টার অগাস্টিন মেরি, সিস্টার জোসেফ মেরি, মিসেস গার্টি আব্বাস, সিস্টার মেরিয়ান তেরেসা এবং বর্তমান অধ্যক্ষ সিস্টার শিখা গোমেজ।
এ ছাড়াও তিনজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করেছেন: সিস্টার এম. রোজ বার্নার্ড, সিস্টার জোসেফ মেরি এবং সিস্টার জোয়ান হাভেলকা।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অসীম কৃপায়, হলি ক্রস কলেজ তার গৌরবময় যাত্রা অব্যাহত রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও শিক্ষা ও মানবকল্যাণে অবদান রাখবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ও রাজউকের সহযোগিতায়। প্রায় সাড়ে ৪ একর জমির ওপর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল নূরন নবীর তত্ত্বাবধানে রাজধানীর উত্তরায় এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়।
১৯৯৪ সালের প্রথম দিকে একাডেমিক ভবনের নির্মাণ সম্পন্ন হয় এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে কলেজ শাখার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে ১৯৯৫ সালে একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা গৃহীত হয় এবং ২০০১ সালে ক্যাম্পাসটি বর্তমান পরিসরে রূপ লাভ করে।
প্রাথমিকভাবে একটি শাখা (প্রভাতী) চালু থাকলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০০৩ সালে সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী বিদ্যালয়ে দিবা শাখা সংযোজন করা হয়।
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ জাতীয় শিক্ষাক্রমের অধীনে নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাদান করে থাকে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৮,০০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।
প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার, যেখানে প্রায় ১৫,০০০ বই সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান এবং কম্পিউটার পরীক্ষাগারও রয়েছে।
ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ
নারী শিক্ষার বাতিঘর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা | একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই পারে জাতির উন্নয়ন ও মানবসম্পদ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে।
সেই লক্ষ্যেই নারী শিক্ষার প্রসারে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখে চলেছে রাজধানীর অন্যতম শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ।
১৯৫২ সালের ১৪ জানুয়ারি, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ফিরোজ খান নূনের স্ত্রী বেগম ভিকারুননিসা নূনের উদ্যোগে বেইলি রোডে প্রতিষ্ঠিত হয় এ প্রতিষ্ঠান।
এর যাত্রা শুরু হয়েছিল মূলত ১৯৪৭ সালে ‘রমনা প্রিপারেটরি স্কুল’ নামে, যা পরে নতুন পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করে। ধীরে ধীরে শিক্ষার প্রসারে এর ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে এবং ১৯৭২ সালে এটি সম্পূর্ণ বাংলা মাধ্যম স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৭৮ সালে মাধ্যমিক পর্যায় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পর, শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৮৬ সালে বৈকালিক শাখা চালু করা হয়। এরপর ১৯৯৫ সালে ধানমন্ডিতে এবং ২০০০ সালে বসুন্ধরায় নতুন শাখার যাত্রা শুরু হয়।
২০০৬ সালে আজিমপুরে নতুন শাখা চালুর মাধ্যমে এর পরিধি আরও বিস্তৃত হয়। বর্তমানে মূল ক্যাম্পাস ছাড়াও ধানমন্ডি, বসুন্ধরা ও আজিমপুরে ভিকারুননিসার শাখা রয়েছে, যেখানে প্রভাতী ও দিবা শাখায় পাঠদান চলছে।
শুধু সাধারণ শিক্ষা নয়, ১৯৯৫ সালে ইংরেজি মাধ্যম চালু করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে পাঠদান করা হয়।
নারী শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সাফল্যের সাথে এগিয়ে চলেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ। যুগের পর যুগ এটি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে, হয়ে উঠছে নারীদের জন্য এক বিশ্বস্ত শিক্ষা কেন্দ্র।