বাংলাদেশের সেরা ১০ টি কলেজ সম্পর্কে (Top 10 college in Bangladesh) জানার আগ্রহ সবারই থাকে। বিশেষ করে যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হবে, তাদের সবার ইচ্ছে থাকে সেরা কলেজগুলোর মধ্যে ভর্তি হওয়া। নিজের জন্য সেরা কলেজটি বেছে নিতেই সেরা কলেজগুলোর খোঁজ করে থাকেন।
কলেজগুলো নির্বাচনের ক্ষেত্রে শুধু শিক্ষার দিকই বিবেচনা করা হয় না। শিক্ষার পাশাপাশি আনুষাঙ্গিক অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করা হয়। পারিপার্শ্বিক সবকিছুর উপর ভিত্তি করেই নির্বাচন করা হয় কলেজগুলো। আজকে আমরা জানবো বাংলাদেশের সেরা ১০টি কলেজ সম্পর্কে।
বাংলাদেশের সেরা ১০ কলেজের তালিকা
- ১. নটরডেম কলেজ, ঢাকা।
- ২. ঢাকা কলেজ, ঢাকা।
- ৩. হলি ক্রস কলেজ, তেজগাঁও, ঢাকা।
- ৪. রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা।
- ৫. ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ,ঢাকা।
- ৬. আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা।
- ৭. বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, পিলখানা, ঢাকা।
- ৮. ঢাকা সিটি কলেজ, ঢাকা।
- ৯. সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া।
- ১০. আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ, নরসিংদী।
কলেজ গুলোর মোট আসন সংখ্যা
কলেজের নাম | বিজ্ঞান | ব্যবসায় শিক্ষা | মানবিক | মোট আসন সংখ্যা |
নটর ডেম কলেজ | ২১০০ | ৭৬০ | ৪১০ | ৩২৭০ |
ঢাকা কলেজ | ৯০০ | ১৫০ | ১৫০ | ১২০০ |
হলি ক্রস কলেজ | ৭৮০ | ২৮০ | ২৭০ | ১৩৩০ |
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ | ১০৪৪ | ৪৫৪ | ২০০ | ১৬৯৮ |
ভিকারুননিসা নূন কলেজ | ২০১৫ | ৩০০ | ২৫০ | ২৫৬৫ |
আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ | ৯২৫ | ৫২৫ | ২৩০ | ১৬৮০ |
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ | ১২২৫ | ৫০০ | ৩০০ | ২০২৫ |
ঢাকা সিটি কলেজ | ৯০০ | ১৫০ | ১৫০ | ১২০০ |
সরকারি আজিজুল হক কলেজ | ৭০০ | ৩৫০ | ৩৫০ | ১৪০০ |
আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ | ৭০০ | ২২৫ | ৩২৫ | ১২৫০ |
নটরডেম কলেজ
নটর ডেম কলেজ বাংলাদেশের অন্যতম স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যার যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৯ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকার লালবাগের লক্ষ্মীবাজারে।

সদ্য স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষাক্ষেত্রে সংকট কাটিয়ে উঠতে রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ‘কনগ্রিগেশন অব হলি ক্রস’ গোষ্ঠীর পুরোহিতরা কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকার তৎকালীন আর্চবিশপ গ্র্যানার, সিএসসি, এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং হলি ক্রস পুরোহিতদেরকে কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব দেন।
১৯৫৪ সালে কলেজটি বর্তমান অবস্থান মতিঝিলে স্থানান্তরিত হয় এবং নতুন নামকরণ করা হয় ‘নটর ডেম কলেজ’। নাম পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ‘নটর ডেম ইউনিভার্সিটি’-এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, যেখানে কলেজের অনেক শিক্ষক উচ্চশিক্ষা লাভ করেছিলেন।
ফরাসি ভাষায় ‘নটর ডেম’ অর্থ ‘আমাদের মা’, যা মূলত খ্রিস্টানদের মা মেরির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।
নটর ডেম কলেজ শুধুমাত্র অসাধারণ ফলাফলের জন্য গর্বিত নয়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এখানে শিক্ষার্থীদের শুধু পুঁথিগত শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তাদের নৈতিকতা, মানবিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এভাবেই নটর ডেম কলেজ তার শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
ঢাকা কলেজ
১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ’, যা আজকের ঢাকা কলেজ নামে পরিচিত। প্রথমে ইংলিশ সেমিনারি স্কুলের দ্বিতীয় তলায় তিনটি কক্ষ নিয়ে যাত্রা শুরু করে এই প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় জনশিক্ষা কমিটি কলেজ ভবনের জন্য জমি ক্রয় করে এবং ১৮৪১ সালে বিশপ রেভারেন্ড ড্যানিয়েল কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
১৯০৮ সালে বঙ্গভঙ্গের পর ঢাকা কলেজ স্থানান্তরিত হয় কার্জন হল ভবনে, যা পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর, ঢাকা কলেজের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদান করা হয়। এর ফলে ঢাকা কলেজ নতুন করে স্থানান্তরিত হয় হাইকোর্ট ভবনে, পরে লক্ষীবাজার এবং ১৯৫৫ সালে বর্তমান ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত হয়।
ঢাকা কলেজ বর্তমানে ১৮.৫৭ একর জমির উপর বিস্তৃত এবং এখানে রয়েছে আধুনিক অবকাঠামো, ৮টি ছাত্রাবাস, মসজিদ, খেলার মাঠ, পাঠাগার ও বিজ্ঞানাগার।
১৯টি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির ২২০ জন শিক্ষকের মধ্যে অনেকেই পিএইচডি ও এমফিলসহ উচ্চতর ডিগ্রিধারী।
ঢাকা কলেজ শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, জাতীয় ও রাজনৈতিক আন্দোলনেও অসামান্য অবদান রেখেছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণঅভ্যুত্থানে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণের ভূমিকা ছিল অনন্য। আজও এই কলেজ উচ্চশিক্ষার বাতিঘর হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে।
হলি ক্রস কলেজ
প্রতিষ্ঠার সময় মাত্র ৫ জন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল হলি ক্রস কলেজ, আর বর্তমানে এই সংখ্যা প্রায় ২৫০০। বর্তমানে শিক্ষকের সংখ্যা ৪৭ জন।

প্রথমে শুধুমাত্র মানবিক শাখা চালু থাকলেও পরবর্তীতে বিজ্ঞান শাখা যুক্ত হয় এবং ২০০৫ সালে ব্যবসায় শিক্ষা শাখা চালু করা হয়। গত এক দশকে একটি ছয়তলা ভবন ও একটি অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম নির্মিত হয়েছে।
৬০ বছরের এই দীর্ঘ পরিক্রমায় পাঁচজন অধ্যক্ষ এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়েছেন: সিস্টার অগাস্টিন মেরি, সিস্টার জোসেফ মেরি, মিসেস গার্টি আব্বাস, সিস্টার মেরিয়ান তেরেসা এবং বর্তমান অধ্যক্ষ সিস্টার শিখা গোমেজ।
এ ছাড়াও তিনজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করেছেন: সিস্টার এম. রোজ বার্নার্ড, সিস্টার জোসেফ মেরি এবং সিস্টার জোয়ান হাভেলকা।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের অসীম কৃপায়, হলি ক্রস কলেজ তার গৌরবময় যাত্রা অব্যাহত রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও শিক্ষা ও মানবকল্যাণে অবদান রাখবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ও রাজউকের সহযোগিতায়। প্রায় সাড়ে ৪ একর জমির ওপর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল নূরন নবীর তত্ত্বাবধানে রাজধানীর উত্তরায় এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়।

১৯৯৪ সালের প্রথম দিকে একাডেমিক ভবনের নির্মাণ সম্পন্ন হয় এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে কলেজ শাখার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে ১৯৯৫ সালে একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা গৃহীত হয় এবং ২০০১ সালে ক্যাম্পাসটি বর্তমান পরিসরে রূপ লাভ করে।
প্রাথমিকভাবে একটি শাখা (প্রভাতী) চালু থাকলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০০৩ সালে সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী বিদ্যালয়ে দিবা শাখা সংযোজন করা হয়।
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ জাতীয় শিক্ষাক্রমের অধীনে নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাদান করে থাকে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৮,০০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।
প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার, যেখানে প্রায় ১৫,০০০ বই সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান এবং কম্পিউটার পরীক্ষাগারও রয়েছে।
ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ
নারী শিক্ষার বাতিঘর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা | একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই পারে জাতির উন্নয়ন ও মানবসম্পদ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে।

সেই লক্ষ্যেই নারী শিক্ষার প্রসারে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখে চলেছে রাজধানীর অন্যতম শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ।
১৯৫২ সালের ১৪ জানুয়ারি, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ফিরোজ খান নূনের স্ত্রী বেগম ভিকারুননিসা নূনের উদ্যোগে বেইলি রোডে প্রতিষ্ঠিত হয় এ প্রতিষ্ঠান।
এর যাত্রা শুরু হয়েছিল মূলত ১৯৪৭ সালে ‘রমনা প্রিপারেটরি স্কুল’ নামে, যা পরে নতুন পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করে। ধীরে ধীরে শিক্ষার প্রসারে এর ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে এবং ১৯৭২ সালে এটি সম্পূর্ণ বাংলা মাধ্যম স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৭৮ সালে মাধ্যমিক পর্যায় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পর, শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৮৬ সালে বৈকালিক শাখা চালু করা হয়। এরপর ১৯৯৫ সালে ধানমন্ডিতে এবং ২০০০ সালে বসুন্ধরায় নতুন শাখার যাত্রা শুরু হয়।
২০০৬ সালে আজিমপুরে নতুন শাখা চালুর মাধ্যমে এর পরিধি আরও বিস্তৃত হয়। বর্তমানে মূল ক্যাম্পাস ছাড়াও ধানমন্ডি, বসুন্ধরা ও আজিমপুরে ভিকারুননিসার শাখা রয়েছে, যেখানে প্রভাতী ও দিবা শাখায় পাঠদান চলছে।
শুধু সাধারণ শিক্ষা নয়, ১৯৯৫ সালে ইংরেজি মাধ্যম চালু করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে পাঠদান করা হয়।
নারী শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সাফল্যের সাথে এগিয়ে চলেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ। যুগের পর যুগ এটি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে, হয়ে উঠছে নারীদের জন্য এক বিশ্বস্ত শিক্ষা কেন্দ্র।
আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ
দেশের অন্যতম স্বনামধন্য ও সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ শিক্ষার ক্ষেত্রে এক গৌরবময় ইতিহাসের অধিকারী। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজ বিগত ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের শিক্ষা অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে।

একাডেমিক উৎকর্ষতার জন্য ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের শীর্ষস্থানীয় কলেজগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে অসাধারণ সাফল্য অর্জনের কারণে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক স্বীকৃতি লাভ করেছে।
শিক্ষাগত উৎকর্ষের স্বীকৃতি হিসেবে আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ ২০০০ সালে দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মনোনীত হয়। ২০১৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে একে ঢাকা শহরের সেরা কলেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
গত পাঁচ বছর ধরে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এটি ধারাবাহিকভাবে ঢাকা বোর্ডের শীর্ষ পাঁচটি কলেজের মধ্যে অবস্থান করছে। ২০১৫ সালে কলেজটি ঢাকা বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। এছাড়াও, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত অনার্স, মাস্টার্স এবং পেশাদার বিবিএ প্রোগ্রামের ফলাফলও অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ ফলাফলনির্ভর পাঠদানের পদ্ধতি অনুসরণ করে। একাডেমিক উৎকর্ষের ধারাবাহিক স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৮, ২০২০, ২০২২ ও ২০২৩ সালে পরপর সাতবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত ৪৩টি কলেজের মধ্যে সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সম্মানজনক ‘আর্মি চিফ ট্রফি’ অর্জন করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষিত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যে শিক্ষা, শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা চর্চার মাধ্যমে তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়। একাডেমিক পাঠক্রমের পাশাপাশি সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমেও সমান গুরুত্ব প্রদান করে শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশে সহায়তা করছে আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ
১৯৭৭ সালের ১ আগস্ট যাত্রা শুরু করা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সময়ের ধারায় একটি পূর্ণাঙ্গ স্কুল-কলেজে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠার শুরুতে এটি একটি জুনিয়র স্কুল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
বাংলাদেশ রাইফেলসের দ্বিতীয় মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এম. খলিলুর রহমান, পিএসসি (২২-০২-৭৪ থেকে ৩১-১০-৭৫) প্রায় ৬ একর জায়গার উপর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন।

যা বর্তমান বিজিবি গেট নম্বর পাঁচের সন্নিকটে অবস্থিত। শোনা যায়, এই স্থানে একটি শহীদ মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের কর্মকর্তা মেজর সাখাওয়াত এখানে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন।
তার বাস্তবধর্মী পরিকল্পনাকে সফল করেন মেজর জেনারেল কাজী গোলাম দস্তগীর, পিএসসি (০১-১১-৭৫ থেকে ১৪-১২-৭৭), যিনি প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়সমূহ:
- ১৯৭৮ সালে এটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি লাভ করে।
- ১৯৮০ সালে প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
- ১৯৮৩ সালে কলেজ পর্যায়ে উন্নীত হয়।
- ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো এইচএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।
- ২০০৪ সালে এনসিটিবি ইংরেজি ভার্সন সিলেবাস অনুযায়ী ইংরেজি মাধ্যম চালু করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটি তার যাত্রা শুরু করেছিল মাত্র ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে, যারা মূলত বিজিবি সদস্যদের সন্তান ছিল। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজারে, যার মধ্যে ১৪% শিক্ষার্থী বিজিবি পরিবারের সন্তান। শিক্ষার গুণগত মান বজায় রেখে প্রতিষ্ঠানটি দেশের অন্যতম স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
ঢাকা সিটি কলেজ
রাজধানী ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত ঢাকা সিটি কলেজ। নিউমার্কেট মোড় থেকে উত্তরে সায়েন্স ল্যাবরেটরি ওভারব্রিজ সংলগ্ন ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়কের প্রবেশমুখেই কলেজটির অবস্থান।
প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার দীর্ঘ ইতিহাস ও শিক্ষার গুণগত মানের কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ঢাকা সিটি কলেজের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৭ সালে, “ঢাকা সিটি নাইট কলেজ” নামে। প্রাথমিকভাবে ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুলের সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু করলেও সময়ের পরিক্রমায় এটি দেশের অন্যতম প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
৬০-এর দশকে কিছু সময়ের জন্য কলেজটি ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে ধানমন্ডির বর্তমান স্থানে এর কার্যক্রম শুরু হয়।
ঢাকা সিটি কলেজ একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে উচ্চ মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত বিভিন্ন কোর্স এখানে পরিচালিত হয়।
উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাশাপাশি স্নাতক (পাস) ও অনার্স পর্যায়ে
- হিসাববিজ্ঞান
- ব্যবস্থাপনা
- মার্কেটিং
- ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং
- ইংরেজি
- অর্থনীতি
- কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং
সহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। এছাড়াও, ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ প্রফেশনাল) এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতি অনুসারে কলেজটি পরিচালিত হয়। কলেজ পরিচালনার জন্য গঠিত গভর্নিং বডি প্রতিষ্ঠানটির নীতি নির্ধারণ করে এবং পরিচালনাগত দিকনির্দেশনা প্রদান করে। শিক্ষার মানোন্নয়নে গভর্নিং বডির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, যা প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক উন্নয়নকে আরও সুসংগঠিত করেছে।
অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসা ঢাকা সিটি কলেজ আজ দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত।
এর গৌরবময় ইতিহাস ও একাডেমিক উৎকর্ষের কারণে এটি শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ভবিষ্যতেও প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার মান ধরে রেখে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।
সরকারি আজিজুল হক কলেজ
বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি আজিজুল হক কলেজ, যা বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ‘উত্তরবঙ্গের আলো’ হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ ইতিহাস ও সমৃদ্ধ শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে এটি উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার বাতিঘর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

১৯৩৮ সালের ৪ এপ্রিল বগুড়ায় একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে খাঁন বাহাদুর মোহাম্মদ আলীকে সভাপতি এবং মৌলভী আব্দুস সাত্তারকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠিত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৩৯ সালের জুলাই মাসে সরকারি আজিজুল হক কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কলেজটি উত্তরবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে এবং বহু মেধাবী শিক্ষার্থীর শিক্ষার ভিত্তি গড়ে তুলেছে।
সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার মান উন্নয়নে রয়েছে দুটি ক্যাম্পাস। পুরাতন ক্যাম্পাসে রয়েছে ৯টি শ্রেণিকক্ষ, ৪টি গবেষণাগার, একটি গ্রন্থাগার, অফিস, ছাত্র-ছাত্রী বিশ্রামাগার ও একটি দ্বিতল মসজিদ।
নতুন ক্যাম্পাসটি আরও বিস্তৃত, যেখানে রয়েছে—
- একটি ত্রিতল বিশিষ্ট কলা ভবন
- একটি ৪তলা বিজ্ঞান ভবন
- একটি ৫তলা কমার্স ভবন
- একটি দ্বিতল গ্রন্থাগার
- একটি দ্বিতল অধ্যক্ষ ভবন
- একটি ছাত্র সংসদ ভবন
- একটি দ্বিতল মসজিদ
- একটি রোভার্স স্কাউট ভবন
- একটি শহীদ মিনার
- একটি খেলার মাঠ
এছাড়া, নতুন ক্যাম্পাসে মোট ৭১টি শ্রেণিকক্ষ, ৭টি লাইব্রেরি কক্ষ এবং ১৮টি গবেষণাগার রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে।
সরকারি আজিজুল হক কলেজ শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, বরং বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। এর দীর্ঘ ইতিহাস, একাডেমিক উৎকর্ষ ও সমৃদ্ধ অবকাঠামো শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনন্য শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করেছে। ভবিষ্যতেও এই প্রতিষ্ঠান শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।
আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ
নরসিংদী জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ। এটি ২০০৬ সালে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আবদুল কাদির মোল্লা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পশ্চিম পার্শ্বে, নরসিংদী জেলা সদরের বাসাইলে অবস্থিত এই কলেজটি শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা
কলেজটির অবকাঠামো অত্যন্ত উন্নত ও আধুনিক। এতে রয়েছে—
- একটি দ্বিতল প্রশাসনিক ভবন
- চারটি একাডেমিক ভবন (একটি টিনশেড, একটি তিনতলা, এবং দুইটি পাঁচতলা ভবন)
- নামায ঘর ও কমনরুম
- একটি আধুনিক ক্যান্টিন ও অতিথি কক্ষ
- বিজ্ঞানাগার ও আইসিটি ল্যাব
- ছাত্রদের জন্য ছাত্রাবাস এবং ছাত্রীদের জন্য তিনটি ছাত্রীনিবাস
এই সকল সুবিধা শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত ও মানসম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
একাডেমিক সাফল্য
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ একাডেমিক ক্ষেত্রে ধারাবাহিক সাফল্য অর্জন করে আসছে। প্রতি বছর উচ্চশিক্ষা অর্জনে অসংখ্য শিক্ষার্থী এখান থেকে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়।
সাল | মোট পরীক্ষার্থী | কৃতকার্য | শতকরা |
২০০৮ | ৮৬ | ৮৫ | ৯৯% |
২০০৯ | ১৭২ | ১৭২ | ১০০% |
২০১০ | ১৯১ | ১৯১ | ১০০% |
২০১১ | ২০৯ | ২০৯ | ১০০% |
২০১২ | ৩৩৪ | ৩৩৪ | ১০০% |
এই অভূতপূর্ব সাফল্যই প্রমাণ করে যে, শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি কতটা দক্ষ ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আধুনিক ও মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উন্নত অবকাঠামো, একাডেমিক উৎকর্ষতা ও ধারাবাহিক সাফল্যের মাধ্যমে এটি নরসিংদী জেলার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে।