বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। ২০২৫ সালে মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স কনস্ট্যাবিউলারি (এমওডিসি) সেন্টার অ্যান্ড রেকর্ডস, রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে সৈনিক পদে (শুধুমাত্র পুরুষ প্রার্থী) ভর্তি কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।
অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী ২৫ নভেম্বর ২০২৪ থেকে এবং চলবে ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত।
সেনাবাহিনীর সৈনিক পদের বিবরণ
প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
পদের নাম: এমওডিসি সৈনিক
পদসংখ্যা: জেলা ভিত্তিক
শিক্ষাগত যোগ্যতা
১. সাধারণ ট্রেড (GD): এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ-২.০০।
২. করণিক ট্রেড (CLK): এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ-৩.০০।
৩. আর্মোরার ট্রেড (ARMR): এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ-৩.০০ (বিজ্ঞান বিভাগ)।
বয়সসীমা
- ২০২৫ সালের ১৬ মার্চ তারিখে বয়স ১৭ থেকে ২৫ বছর (এফিডেভিট গ্রহণযোগ্য নয়)।
শারীরিক যোগ্যতা
উচ্চতা:
- সাধারণ প্রার্থীদের জন্য: ১.৬৮ মিটার (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি)।
- ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য: ১.৬৩ মিটার (৫ ফুট ৪ ইঞ্চি)।
ওজন:
- ৪৯.৯০ কেজি (১১০ পাউন্ড)।
বুকের মাপ:
- স্বাভাবিক: ৩০ ইঞ্চি।
- স্ফীত: ৩২ ইঞ্চি।
চোখ:
- স্বাভাবিক দৃষ্টি (৬/৬), বর্ণান্ধ প্রার্থী গ্রহণযোগ্য নয়।
সাঁতার:
- ন্যূনতম ৫০ মিটার সাঁতার জানা আবশ্যক।
অন্যান্য যোগ্যতা
বৈবাহিক অবস্থা: প্রার্থী অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা: স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক।
সেনাবাহিনীর সৈনিক পদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা
প্রশিক্ষণকালীন মাসিক বেতন: ৮,৮০০ টাকা।
প্রশিক্ষণ শেষে যৌথ বাহিনী নির্দেশাবলী অনুযায়ী বেতন ও অন্যান্য ভাতা প্রদান করা হবে।
আবেদনের সময়সীমা
অনলাইনে আবেদন শুরুর তারিখ: ২৫ নভেম্বর ২০২৪।
আবেদনের শেষ তারিখ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪।
সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে আবেদন প্রক্রিয়া
modc.teletalk.com.bd/ এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। আগ্রহী প্রার্থীদের নির্ধারিত যোগ্যতার ভিত্তিতে আবেদন করতে হবে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর র্যাংকিং | Army Rank Categories
নন-কমিশন্ড অফিসার (এনসিও) এবং সৈনিক
- সৈনিক
- ল্যান্স কর্পোরাল
- কর্পোরাল
- সার্জেন্ট
- কোম্পানি/ব্যাটারি কোয়ার্টার মাস্টার সার্জেন্ট
- কোম্পানি/ব্যাটারি সার্জেন্ট মেজর
- ব্যাটালিয়ন/রেজিমেন্ট কোয়ার্টার মাস্টার সার্জেন্ট
জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (জেসিও)
- ওয়ারেন্ট অফিসার
- সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার
- মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার
- অনারারি লেফটেন্যান্ট
- অনারারি ক্যাপ্টেন
কমিশন্ড অফিসার
- সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট
- লেফটেন্যান্ট
- ক্যাপ্টেন
- মেজর
- লেফটেন্যান্ট কর্ণেল
- কর্ণেল
- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
- মেজর জেনারেল
- লেফটেন্যান্ট জেনারেল
- জেনারেল
(বি.দ্র: বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের ক্যারিয়ার শুরু হয় লেফটেন্যান্ট পদবী থেকে। একসময়ে প্রচলিত সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদবীটি বর্তমানে আর ব্যবহৃত হয় না।)
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিকদের ভূমিকা
সেনাবাহিনীর শক্তিশালী ভিত্তি গঠনে যাঁরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন—সাধারণ সৈনিক। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগে গঠিত হচ্ছে একটি সুসংগঠিত, সক্ষম ও প্রতিরক্ষা-প্রস্তুত বাহিনী। মাঠ পর্যায়ের এই সাহসী যোদ্ধারাই জাতীয় নিরাপত্তা, মানবিক সহায়তা ও শান্তিরক্ষায় মূল চালিকাশক্তি।
আরও পড়ুন: প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সৈনিক কঠোর শারীরিক ও মানসিক প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেন। যুদ্ধ প্রশিক্ষণ, অস্ত্রচালনা, দুর্যোগ মোকাবিলা এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সামরিক কৌশল শেখানো হয় তাঁদের। এই প্রশিক্ষণ তাঁদের করে তোলে দ্রুত সিদ্ধান্তগ্রহণে সক্ষম ও আত্মবিশ্বাসী।
প্রত্যেক সৈনিক নিজ নিজ ইউনিটে শৃঙ্খলা, আনুগত্য এবং নেতৃত্বের গুণাবলি অনুসরণ করেন। এই গুণাবলিই একজন সৈনিককে শুধুমাত্র একজন যোদ্ধা নয়, বরং একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবেও গড়ে তোলে।
জাতীয় নিরাপত্তা ও মানবিক সেবায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। কেবলমাত্র সামরিক দায়িত্ব নয়, বরং মানবিক, সামাজিক ও উন্নয়নমূলক খাতেও সেনাবাহিনীর অবদান আজ দৃশ্যমান ও প্রশংসনীয়।
সীমান্ত সুরক্ষা ও প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি
সেনাবাহিনীর প্রধান দায়িত্ব দেশের সীমান্ত রক্ষা ও বহির্শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করা। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে সেনাবাহিনী সব সময় প্রস্তুত থাকে যেকোনো জাতীয় সংকটে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত অঞ্চলে নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় সহায়তায় সেনাবাহিনী
সরকারের অনুরোধে সেনাবাহিনী দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও কাজ করে। নির্বাচনকালীন সহায়তা, দুর্যোগকালীন উদ্ধার তৎপরতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি জনগণের আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ ও পুনর্বাসন
বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেনাবাহিনী দ্রুত ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়। সাম্প্রতিক বন্যায় দুর্গত অঞ্চলে সেনা সদস্যদের টহল, খাবার সরবরাহ ও চিকিৎসা সহায়তা ছিল প্রশংসনীয়।
বহির্বিশ্বে শান্তিরক্ষী মিশনে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে দীর্ঘদিন ধরে অংশগ্রহণ করে আসছে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে।
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ
পদ্মা সেতুর নির্মাণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্কুল, রাস্তা ও হাসপাতাল নির্মাণে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া জাতীয় প্রকল্পে সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও সততা সরকার ও জনগণের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
মানবিক দায়িত্ব ও সামাজিক কর্মকাণ্ড
করোনা মহামারির সময় সেনাবাহিনী সড়ক ব্যবস্থাপনা, সচেতনতামূলক প্রচার ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে। এছাড়াও, দুঃস্থ ও গরীব মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ ও চিকিৎসা শিবির পরিচালনায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুধু যুদ্ধের জন্য নয়, বরং জাতির যেকোনো সংকটে একটি আস্থার প্রতীক। তাঁদের দায়িত্বশীলতা, সাহস ও মানবিকতা আজকের বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
আধুনিক প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তার দূর্গ রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস
রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার শান্তিপূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস দেশের সামরিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ, কৌশলগত পরিচালনা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই সেনানিবাস।
আধুনিক প্রশিক্ষণের কেন্দ্রবিন্দু রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস
রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে অবস্থিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ স্কুল ও রেজিমেন্টে সেনা সদস্যদেরকে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। বিশেষ করে, Infantry, Signals এবং Artillery ইউনিটগুলোর সমন্বয়ে গঠিত কার্যক্রম দেশীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও সুসংহত করেছে।
জাতীয় নিরাপত্তায় কৌশলগত গুরুত্ব
রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস রাজধানীর নিকটবর্তী হওয়ায় কৌশলগত দিক থেকে এর গুরুত্ব অপরিসীম। যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর সক্ষমতা থাকায় এটি জাতীয় নিরাপত্তার একটি প্রধান ভরকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও এই সেনানিবাসের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
সাম্প্রতিক সময়ে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসের সেনা সদস্যরা দ্রুত ত্রাণ সহায়তা নিয়ে দুর্গত এলাকায় পৌঁছান। করোনাভাইরাস মহামারির সময় খাদ্য বিতরণ, মেডিকেল সাপোর্ট এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রমে রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসের সদস্যরা কার্যকর ভূমিকা পালন করেন।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা
সেনানিবাস এলাকায় গড়ে উঠেছে আধুনিক ভবন, প্রশিক্ষণ মাঠ, ব্যারাক, অফিস এবং সেনা পরিবারের জন্য আবাসন ব্যবস্থা। পরিবেশ সংরক্ষণ ও গ্রীন জোন রক্ষায় সেনাবাহিনী এখানে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃক্ষরোপণ ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
সামাজিক ও শিক্ষা কার্যক্রম
রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে স্থাপিত আর্মি স্কুল, কলেজ এবং মেডিকেল সেন্টার স্থানীয় জনগণকেও সুফল দিচ্ছে। সেনা সদস্যদের পরিবার ও বেসামরিক নাগরিকদের জন্য গঠিত এসব প্রতিষ্ঠান গাজীপুর অঞ্চলে মানসম্মত শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস আজ কেবল একটি সামরিক ঘাঁটি নয়; এটি একটি সুসংগঠিত, প্রশিক্ষিত ও মানবিক বাহিনীর প্রতীক। আধুনিক বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির দৃষ্টান্ত হিসেবে রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস তার স্থান দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।