পিএইচডি করার যোগ্যতা, বাংলাদেশে পিএইচডি করা যাবে যেখান থেকে

ডক্টর অফ ফিলোসফি বা পিএইচডি হলো একাডেমিক শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রি। যা কোনো বিষয়ে গভীর গবেষণার মাধ্যমে অর্জন করা হয়। যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনি গবেষণা করতে চান, তবে আপনাকে পিএইচডি করতে হবে।

পিএইচডি করার জন্য সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগে। তবে এটি নির্ভর করে আপনার গবেষণার বিষয় এবং কাজের গতির ওপর।

পিএইচডি করার যোগ্যতা

পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য আপনাকে অবশ্যই স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি এবং এক বছর মেয়াদি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করতে হবে।

একাডেমিক যোগ্যতা:

খরচের বিবরণ

বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে খরচ ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে তবে বিশ্ববিদ্যালয় অনুযায়ী খরচ কম বেশি হতে পারে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ তুলনামূলকভাবে অনেকটা বেশি।

বিদেশে পিএইচডি করার খরচ দেশের ওপর নির্ভর করে। অনেক ক্ষেত্রে স্কলারশিপ পাওয়া যায়, যা খরচ অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।

বাংলাদেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির সুযোগ

বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি এবং এমফিল করার জন্য রয়েছে বিস্তৃত সুযোগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ এবং ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীরা পিএইচডি ও এমফিল প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারেন।

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে এবং সারা বছরই বিভিন্ন সময় ভর্তির আবেদন গ্রহণ করা হয়। এসব প্রোগ্রামে তুলনামূলক স্বল্প খরচে অধ্যয়ন সম্ভব, যা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য সুবিধাজনক। ভর্তি প্রক্রিয়ায় সাধারণত আবেদন ফরম এবং ভর্তির ফি প্রদান করতে হয়।

এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মাসিক বৃত্তি প্রদান করে। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি উৎস থেকে অনুদান ও বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের গবেষণামূলক কার্যক্রমে উৎসাহিত করতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এমফিল ফেলোশিপ এবং পিএইচডি ফেলোশিপের আওতায় আর্থিক সহায়তা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে থাকে।

পিএইচডি করার আগে যে তথ্যগুলো জানা জরুরি

ডক্টর অফ ফিলোসফি বা পিএইচডি, একাডেমিক জগতে সর্বোচ্চ ডিগ্রি হিসেবে পরিচিত। এটি মনস্তত্ত্ব, গণিত থেকে শুরু করে সাহিত্য পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্জন করা যায়। পিএইচডি প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য হলো গবেষণা।

সাধারণত একটি পিএইচডি ডিগ্রির জন্য ৫৪ ক্রেডিটের প্রয়োজন হয়, যার মধ্যে ৩৬ ক্রেডিট বা তার বেশি গবেষণা নির্ভর। গবেষণার শেষ পর্যায়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হয়, যা “পিএইচডি থিসিস” নামে পরিচিত।

উনিশ এবং বিশ শতকে ইউরোপে পিএইচডি ডিগ্রির বিকাশ হয়। Keith Allan Noble-এর গবেষণা মতে, ১১৫০ সালে মধ্য প্যারিসে প্রথম ডক্টরাল ডিগ্রি দেয়া হয়। তবে সেসময় এই ডিগ্রি ছিল অধ্যাপনার অনুমতির জন্য। ১৬৫২ সালে Erhard Weigel প্রথম জার্মান হিসেবে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৮৬১ সালে আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো তিনজনকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে। এর আগে আমেরিকানরা ইউরোপে পিএইচডি করতে যেতেন। ১৯১৭ সালে যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশে গবেষণার ভিত্তিতে পিএইচডি ডিগ্রি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের ‘ন্যাশনাল রিপোর্ট’ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে পিএইচডিধারীর সংখ্যা ৫১,৭০৪। এর মধ্যে ৩৭,৫১৭ জন পুরুষ এবং ১৪,১৮৭ জন নারী।

বিভাগ অনুযারী পিএইচডিধারীর সংখ্যা

একটি পিএইচডি ডিগ্রি শুধুমাত্র একাডেমিক বা গবেষণা ক্ষেত্রে নয়, বরং সমগ্র মানবজীবনের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি এবং জটিল সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব।

তাই, যারা পিএইচডি করার পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য এটি শুধু শিক্ষাগত নয়, বরং ব্যক্তি এবং সমাজের উন্নয়নের দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিদেশে পিএইচডি

পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করতে সাধারণত ৫ থেকে ৭ বছর সময় লেগে থাকে। তবে এটি নির্ভর করে গবেষণার বিষয়, সেশনজট এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের ওপর। গবেষণার গভীরতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিষয়াবলী সময়ের তারতম্য ঘটায়।

পিএইচডি ডিগ্রির খরচ মূলত নির্ভর করে আপনি কোন দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছেন। পিএইচডি করতে বার্ষিক গড় খরচ প্রায় ৪০,৯০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকদের জন্য টিচিং/রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ, ফেলোশিপ এবং স্কলারশিপের মাধ্যমে ফান্ড সরবরাহ করা হয়। এর ফলে টিউশন ফি সম্পূর্ণ মওকুফ বা আংশিক কমানো হয়। এমনকি, অনেক সময় স্কলারশিপের মাধ্যমে বিনামূল্যে পিএইচডি করার সুযোগও পাওয়া যায়।

চাকরির সুযোগ

পিএইচডি শেষ করার পর দেশে বা বিদেশে বিভিন্ন সেক্টরে চাকরির সুযোগ মেলে। চাকরির ক্ষেত্র মূলত নির্ভর করে পিএইচডির গবেষণার বিষয়, পূর্ববর্তী শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং গবেষণার ফলাফলের ওপর।

ভবিষ্যতে একজন প্রফেশনাল গবেষক, বায়োকেমিস্ট বা বায়োমেডিকেল বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া বিজ্ঞান, গণিত এবং ভৌত বিজ্ঞান সেক্টরে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার সুযোগও রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অধিকাংশ পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা বিজ্ঞান, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

পিএইচডি করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র জমা দিতে হয়। সাধারণত, পছন্দের প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা উল্লেখ থাকে। আবেদনকারীরা সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।

পিএইচডি এর জন্য বিশ্বের সেরা ১৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা

পিএইচডির জন্য আন্তর্জাতিক সেরা কয়েকটি স্কলারশিপ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *